পিরিয়ড - Wohad Mahmud (পর্ব ৩)

 

পিরিয়ড #পর্ব-৩


প্রতিদিন যায় হোক না কেন, সানজিদার বাবার সংবাদ দেখা মিস হবে না। সারাদিন ছেলে নিখোঁজ কিন্তু খবর তার দেখতেই হবে, ছেলে খোঁজ বাদ দিয়ে সংবাদ।

সানজিদার মা এসে বলে আপনার কী আক্কেল জ্ঞান বলতে কিছু আছে?

কেন আমি আবার কী করলাম?

আপনার ছেলে সারাদিন নিখোঁজ আপনি তাকে না খুঁজে এখন সংবাদ দেখছেন। আত্মীয় স্বজনের বাসায় একটু ফোন দিয়ে দেখতেও তো পারেন।


তোমার ছেলের সেদিনের কথা কী ভুলে গেলে? নানির বাসায় গিয়ে বসে ছিল আমাদের কিছু না বলে।

আমি ওর নানির বাসায় ও ফোন দিছি সেখানেই নেই ।

হঠাৎ সংবাদ দেখার সময়, সংবাদে বলে আজ সন্ধ্যার সময় চুয়াডাঙ্গা সদরে ব্রিজের পাশে একটা গলা কাটা লাশ পাওয়া গেছে। বয়স আনুমানিক ১৭ বছরের কাছাকাছি হবে।

সানজিদার বাবার মনে ভয় জেগে যায়। আকাশের বয়স প্রায় ১৮ বছর। এটা কী তাহলে আকাশের লাশ।

তওবা তওবা এমন হতে পারে না। আকাশের সাথে কার কী শত্রুতা যে, এমন হবে।


সানজিদার মা কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।

সানজিদার বড় ভাই বলল, মা থামো তো। এমন করছো মনে হচ্ছে ওটা সত্যি সত্যি আকাশের লাশ। অন্যকারো হতে পারে। নিজেকে দূর্বল না করে শক্ত করো। আমাদের থানায় গিয়ে দেখে আসা উচিত।

সানজিদা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। কী করবে বা কী বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। যদি ওটা সত্যি সত্যি আকাশের লাশ হয় তাহলে নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারবে না।

সানজিদার বাবা বলল আমার ফ্রেন্ড ওই থানার "এস আই" আমি ফোন দিয়ে জেনে নিচ্ছে। আকাশকে আমার ফ্রেন্ড চিনে।

হ্যালো সাইফুল

হ্যাঁ আমজাদ বল( সানজিদার বাবা)

বন্ধু আমার ছেলে সেই দুপুরে বাসা থেকে বাহির হয়েছে। এখন পর্যন্ত বাসায় আসেনি।

থানায় রিপোর্ট করিয়েছিস?


না এখনও করি নাই। ভাবছিলাম সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করব তারপর যদি না আসে তাহলে থানায় রিপোর্ট করব। মাঝে মাঝে দেরি করে আসে কিন্তু আজ বেশী দেরি করছে। এখনো আসে নাই।

চিন্তা করিস না তুই। সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর চলে আসবে। হয়তো কোনো বন্ধুর বাসায় আছে। ফোনে চার্জ শেষ ফোন করেও জানাতে পারছে না।

তাই যেন হয়। কিন্তু তোকে ফোন দেওয়ার একটা বিশেষ কারণ হলো। সংবাদে জানতে পারলাম, তোর ওই থানায় একটা লাশ আছে গলা কাটা। বয়স প্রায় ১৭ বছর হবে। বাসায় সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। আকাশের বয়স প্রায় ১৮ বছর মতো হবে। তুই একটু ভালো করে দেখ তো ওটা আকাশ না-কি অন্যকেউ।

আমি তো আজ ছুটিতে আছি আমজাদ। আর বাড়িতেও নেই। থাকলে গিয়ে দেখে আসতাম। তুই একটু কষ্ট করে থানায় গিয়ে দেখে আই। দোয়া করি যেন, আকাশ না হয়।

সানজিদার বড় ভাই আর বাবা দুজন রাতে বাইক নিয়ে থানায় যায়। থানায় লাশের সামনে গিয়ে মুখ থেকে কাপড় সরানোর সাহস পায় না। মনের মধ্যে একটা ভয় কাজ করছে যদি, আকাশ হয় এটা।

কাপড় সরানোর জন্য হাতি বাড়িয়ে দিয়েও হাত সরিয়ে নেই আমজাদ সাহেব।


সানজিদার বড় ভাই বলে থাক বাবা তোমাকে দেখতে হবে না আমি দেখছি।

সানজিদার বড় ভাই আস্তে আস্তে কাপড় টা সরিয়ে দেখে এটা আকাশ না অন্য কিছু।

সানজিদার বাবাও দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় এটা আকাশ না অন্য কেউ।

কিন্তু সানজিদার ভাইয়ের মনে সন্দেহ জাগে এটা কে হতে পারে যদি আকাশ না হয়? এটাও তো কারো না কারোর ভাই কারোর সন্তান। আমরা না হয় স্বস্তি নিয়ে বাসায় চলে যাব কিন্তু যাদের সন্তান যাদের ভাই তাদের মনের অবস্থা আমাদের মতো হবে যেমন হয়েছিল কিছুক্ষণ আগে আমাদের। চিন্তার সাগরে ডুব দিতে দিতে সাজিদার বাবা আর ভাই দুজনে বাসায় চলে আসে।

বাসায় আসতেই সানজিদার বাবা আর মা জিজ্ঞেসা করে থানায় গিয়ে কী জানতে পারলে। লাশটা কার? আমাদের আকাশের না-কি অন্য কারোর?


আমজাদ সাহেব মুখে কিছুটা হাসি নিয়ে বলে, চিন্তা করার দরকার নেই। লাশটা আকাশে না। অন্য কারোর লাশ ছিল ওটা।

কিন্তু এখনো টেনশন যায়নি। আকাশ এখনও বাসায় আসেনি। না জানি কী অবস্থায় আছে কোথায় আছে।‌ রাত যত গভীর হচ্ছে। টেনশন তত গভীর হচ্ছে।

এভাবে রাত গড়িয়ে সকালে হয়ে গেল। তবুও আকাশের খোঁজ নেই। সারারাত ঘুমাতে পারেনি সানজিদা। সব সময় নিজেকে দোষারোপ করে গিয়েছে। সানজিদা ভাবে আজ আমার ভাইয়ের পরিস্থিতির জন্য সম্পূর্ণ আমি দায়ী।


আজ সানজিদার পিরিয়ডের ডেট। একজন নারী জানে পিরিয়ডের যন্ত্রণা কতটুকু। একদিকে পিরিয়ডের যন্ত্রণা অন্য দিকে নিজের ভাইয়ের জন্য শোক। সবদিক থেকে মহা বিপদে আছে সানজিদা। পিরিয়ডের যন্ত্রণার জন্য টিউশনি বা কলেজ কোথাও যেতে পারে নাই।

এতোক্ষণ পরে সানজিদার একটা কথা মনে পড়ে। কালকে যখন ওর ভাই ডিস্টার্ব করে তখন সেখানে কিছু ছেলে ছিল আকাশের সাথে।

তারা তো জেনে গেছে আকাশ আমার ভাই। আর আকাশ তখন জেনে গেছে আমি ওর বোন ছিলাম। আর ছেলেগুলো আমাকে উত্যক্ত করেছিল। তাহলে কি আকাশ তাদের সাথে কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করছে।

এমনটা হতেই পারে। আমি ওর বোন ছিলাম জানতে পেরে ওই ছেলেগুলোর সাথে ঝামেলা সৃষ্টি করে। আর সেখানে কোনো অঘটন সৃষ্টি করে‌। আকাশ একা ছিল আর আর ওই ছেলেগুলো অনেক ছিল।

আজ সারাদিন পার হয়ে রাত হয়ে গেল। রাত হয়ে গিয়েছে। সকলে খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়েছে।

রাত আনুমানিক দশটা বাজে। হঠাৎ করেই রাতে কলিং বেল বেজে ওঠে। সানজিদার মা তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলেই দেখে যে,


চলবে,,,,,


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (সকল পর্ব ১-২৬)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)