পিরিয়ড - Wohad Mahmud (পর্ব ৫ শেষ পর্ব)


পিরিয়ড #পর্ব-৫ (শেষ পর্ব)


আমি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম। পরে দেখি আমি হাসপাতালে।

জ্ঞান ফিরে আমি তোমাদের কাছে ফোন না দিয়ে একজন নার্সের ফোন নিয়ে গফুরকে( চাচাতো ভাই) ফোন দিয়ে তোমাদের আসতে বলি।

আকাশের কথা শেষ হতে না হতেই রুমের মধ্যে প্রবেশ করে আকাশের বাবা। বাবাকে দেখে আকাশ কিছুটা চমকে যায় আর ভয় পায়।


সানজিদা মনে মনে ভাবে তাহলে কি বাবা সব জেনে গিয়েছে। মনে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সব শুনেছে আমাদের কথা। সানজিদা বলল বাবা তুমি এখানে। তোমার তো বাইরে যাওয়ার কথা।

সানজিদার বাবা বলল, বাইরে গেলে তো আর সত্যি কথাটা জানতে পারতাম না।

সানজিদা যেটার ভয় করছিল ঠিক সেটাই হয়েছে। সব সত্যি কথা জেনে গিয়েছে সানজিদার বাবা।

সানজিদার বাবা বলল, আমি প্রথমেই বুঝেছিলাম আকাশ আমার সাথে মিথ্যা কথা বলছে। ও যখন আমাকে বলেছিল তখন ওর চোখের দিকে তাকিয়েই বোঝা যাচ্ছিল আকাশের চোখে এক কথা মুখে অন্যকথা।

সানজিদার বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, তোরা যে কী বলা কওয়া করছিলি। আকাশ তোর সাথে রাস্তার মধ্যে কী করেছিল?

সানজিদা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, না বাবা কিছু হয়নি। এমনিতেই বলছিলাম।


সানজিদার বাবা তখন বলল, সত্যি কথা সব সময় উত্তম হয়। মিথ্যা দিয়ে সত্যি কথা ঢাকা যায় না। মিথ্যার স্থায়ীত্ব কাল বেশি বড় হয় না। সত্যি একদিন না একদিন সবার সামনে বেরিয়ে আসে। আর যখন সত্যি কথাটা সবার সামনে চলে আসে তখন মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকে না। অন্যভাবে সত্যি বেরিয়ে আসার থেকে নিজে মুখে স্বীকার করে নিলেন নিজের সম্মান কিছুটা রক্ষা পায়।

আকাশ তখন কিছুটা স্বস্তি পায়। নিজের মধ্যে ভয়টা অনেক কেটে যায়। তারপর নিজের বোনকে বোরখা পরিধান অবস্থায় চিনতে না পারাই কয়েকটা বখাটে ছেলেদের সাথে মিশে যা যা করেছিল সব বলে দেয় বাবাকে। পরে জানতে পেরে সানজিদার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিল।


আকাশের বাবা চুপ করে আছে।

এমন চুপ করে থাকা দেখে আকাশ আর সানজিদা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।

তারপর আকাশের বাবা আকাশকে বলে। তুমি যা করেছ তা মুখে প্রকাশ করার মতো না, কতটা অন্যায় করেছ। আর সবথেকে বড় কথা হলো তুমি তোমার অপরাধ বুঝতে পেরেছ। ভুল বুঝতে পেরে প্রতিবাদ করেছ আর প্রতিবাদ করার কারণে তোমার এই অবস্থা। আর এটাই তোমার শাস্তি। আর শাস্তির প্রয়োজন দরকার নেই। অপরাধ দেখলে এভাবেই প্রতিবাদ করবে।

তার পর আকাশের বাবা ওখানে থাকে চলে যায়। আকাশের চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি পড়ল।

সাত দিন পরে,,,


আকাশ অনেকটা সুস্থ হয়েছে। আকাশ প্রতিদিন সানজিদাকে তার টিউশনিতে আর কলেজ দিয়ে আসে। আর একসাথে দুজন বাসায় আসে। রাস্তায় চলার সময় সানজিদার আর সমস্যা হয় না। সানজিদা পড়ে মহিলা কলেজ আর আকাশ পড়ে সরকারি কলেজে। সানজিদা আর আকাশের বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না মাত্র এক বছর।

আকাশের ভাই খোঁজ খবর নিয়ে কিছুদিন পরে জানতে পারে থানায় যে লাশটি ছিল সেটা কিশোর গ্যাং এর একজন সদস্য। এদের কাজ হলো চাঁদাবাজি করা, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা। আরো বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকা।

খাবার টেবিলে এটা নিয়ে আলোচনা করছিল আকাশের ভাই সবার সাথে।


আকাশ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে বড় হয়ে ভালো একজন পুলিশ হবে আর এসবের নির্মূল করবে।

সানজিদার বাবা সানজিদাকে বলে, রাস্তায় একটু দেখেশুনে চলবি মা। চারদিকে পরিস্থিতি ভালো না। খুন ধর্ষণের পরিমাণ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

সানজিদা বলে, তুমি একদম চিন্তা করো না বাবা। আকাশ আছে তো আমি কোথাও গেলে দুজন একসাথে যাই। সমস্যা হবে না।

আজকে সানজিদার তার বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার কথা। আকাশ ও যেত কিন্তু আকাশের শরীর ভালো ছিল না। জ্বর আসছে তাই সানজিদা একাই যায়।

বাসা থেকে মানা করেছিল যাওয়ার জন্য কিন্তু সানজিদা একাই চলে যায়। বলে কিছু হবে না সন্ধ্যার আগে বাসায় চলে আসব। জরুরী যেতে হবে।


সানজিদা সেই দুপুরে বাহির হয়েছে সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বাসায় ফিরছে না।

সানজিদার ফোনে কল যাচ্ছে না। বন্ধ দেখাচ্ছে। সানজিদার বান্ধবীর ফোনে দিয়ে জানতে পারে মাত্র বাহির হয়েছে চলে যাবে। আমি থাকতে বলেছিলাম কিন্তু থাকলো না চলে গেল একটু আগে।

সানজিদার মা বলল ওর ফোনে কল যাচ্ছে না কেন তাহলে?

চিন্তা করবেন না আন্টি সানজিদার ফোনে চার্জ শেষ।

সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নয়টা বেজে যাচ্ছে কিন্তু তাও সানজিদার খোঁজ নেই। বাসায় সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছে। এতোক্ষণ তো চলে আসার কথা সানজিদার।

সানজিদা কখনও এমন করে না। এর আগেও কয়েকবার বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিল কিন্তু সময় মতো চলে আসে। কখনও এতো দেরি করে না।


রাত পার হয়ে ভোর রাত হয়ে গিয়েছে তাও খোঁজ নেই। সানজিদার বাবা পুলিশ রিপোর্ট করিয়ে আসে সানজিদার নিখোঁজ এর।###

দুইদিন পরে সানজিদার লাশ পাওয়া যায়। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আসে খুন করার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে তারপর শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে।

এই ঘটনার পরে সানজিদার মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।

বোনের জন্য আকাশের মধ্যে বুকফাটা কষ্ট থাকলেও কখনও ভেঙে পড়ে নাই।

সাত বছর পর আকাশ আজ আন্ডারকাভার পুলিশ অফিসার। নিজের বোনকে বাঁচাতে না পারলেও শত শত বোনের জীবনের দায়িত্ব আজ তার উপর এবং সঠিক ভাবে তার দায়িত্ব পালন করছে আকাশ।



সমাপ্ত


Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (সকল পর্ব ১-২৬)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)