পিরিয়ড - Wohad Mahmud (পর্ব ২)



পিরিয়ড #পর্ব-২

কালকের মতো আজকেও টিউশনি শেষ করে বাসায় যাচ্ছিল সানজিদা। দূর থেকে দেখছে সানজিদার ছোট ভাই আর কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সানজিদা কে দেখে শিস বাজাচ্ছে বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করছে। সানজিদার ছোটভাই ও এমন করছে।

আস্তে আস্তে সানজিদা ওর ছোট ভাইয়ের কাছে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে ভাইয়ের সামনে দাড়াই।

সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই কিছু ছেলে বলে তোর কপাল অনেক ভালো। মনে হয় পছন্দ হয়েছে তোকে। আর তোকে প্রপোজ করার জন্য আসছে।


সানজিদার ভাই মিট মিট করে হাসছে।

তখন সানজিদা ওর মুখ থেকে হিজাব টা খুলে ফেলে আর ভাইয়ের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে চাচ্ছে পায়ের স্যান্ডেল খুলে মুখে কয়েকটা মারতে।

পাশের ছেলে গুলো তখন বলে এখন হিজাব খুলেছে পরবর্তীতে আরো অনেক কিছু খুলবে। আমাদের একটু ভাগ দিস।

সানজিদার ভাই সানজিদাকে দেখে নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে যেন, কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মাটির দিকে লজ্জা মুখ নিয়ে তাকিয়ে আছে। কথা বলার মতো মুখ নেই।

সানজিদা তখন বলে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না তুই এমনটা করতে পারিস। কালকেও তুই এমন করেছিস আজকেও এমন করছিস। তাও আবার নিজের বোনের সাথে। না জানি বাকি মেয়েদের সাথে কী করিস।


সানজিদার ভাই বলে আমি কোনোদিন এমন করি নাই‌ এই প্রথম।

আমি তোর কথা কীভাবে বিশ্বাস করব? পাশের ছেলে গুলো এতো আজেবাজে কথা বলছে শুনতে কী খুব বেশী ভালো লাগছে।

কালকে তো খুব বললি, সব ছেলেরা ধর্ষক না। কিছু কিছু ছেলে মেয়েদের সম্মান করতে জানে। এই তোর সম্মান তাহলে?

সানজিদার ভাই সবার সামনে সাজিদার পা ধরে বলে প্লিজ আমাকে মাফ করে দে আপু। আর কোনো এমন হবে। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।

এসব দেখে পাশের ছেলেগুলো তো একদম অবাক। এমন কেন করছে?

সানজিদা আর কিছু না বলে ভাইয়ের হাত থেকে পা ছুঁড়িয়ে নিয়ে বাসায় দিকে রওনা হয়।

একটু পরে ছেলেগুলো সানজিদার ভাইয়ের দিকে এগিয়ে আসে। আর একটা ছেলে হাসতে হাসতে বলল, তোর তো মরে যাওয়া উচিত কাপুরুষ। ছেলে হয়ে একটা মেয়ের পায়ে পড়িস।

সানজিদার ভাই তখন ছেলেটার জামার কলার চেপে ধরে বলল ওটা আমার বোন হয়। মুখ সামলিয়ে কথা বলবি। আর যদি আমার বোনকে ডিস্টার্ব করিস তাহলে, আমি তোকে মেরে ফেলব।

ছেলেটা তখন সনজিদার ভাইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল, তোর তো আগে মরে যাওয়া উচিত। নিজের বোনকে উত্যক্ত করিস। নিজের বোনের সাথে যদি এমন করিস তাহলে আমরা তো করবোই।

তারপর ওখানে থেকে সবাই চলে যায় আর সানজিদার ভাই নিরবে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকে।


সানজিদা প্রতিদিনের মতো আজকেও স্বাভাবিক ভাবে বাসায় চলাচল করছে। কাউকে কিছু বুঝতে দিচ্ছে না। ভাইয়ের এসব কৃতকর্মের কথা বসায় জানলে সবাই অনেক কষ্ট পাবে। আর সানজিদার বাবা অনেক রাগি মানুষ। এসব কথা জানাতে পারলে সানজিদার ভাইকে একদম মেরেই ফেলবে।

সানজিদার ভাই সেই দুপুরে বাসা থেকে বাহির হয়েছে। বিকাল হয়ে যাচ্ছে কোনো খোঁজ নেই। মাঝে মাঝে এমন দেরি করে বাসায় আসে তাই সবাই সেভাবে কানে মাথায় নিচ্ছে না। ভাবছে চলে আসবে অন্যদিনের মতো।

সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হতে চললো। তাও কোনো খোঁজ নেই সানজিদার ভাইয়ের। সবাই চিন্তায় পড়ে গেল কোথায় যেতে পারে।

সানজিদা আজ সারাদিন প্রায় রুমের মধ্যে ছিল। দুপুরের পর থেকে বাইরে বাহির হয়নি। কারণ সানজিদা চায় না তার ভাইয়ের সামনে যেতে। এটা একটা লজ্জার বিষয় সানজিদার জন্য তার অমানুষ ভাইয়ের সামনে যাওয়া। সে জন্যই রুম থেকে বাহির হয়নি।

রাতে সানজিদার মা সানজিদার রুমে এসে বলে, তোমার ছোট ভাইকে দেখছিস সানজিদা?

কেন মা কী হয়েছে?

সানজিদার মা ধমকের সুরে বলে, তুই আর জানবি কেমন করে কী হয়েছে। সারাদিন তো ঘরের মধ্যে বসে থাকিস। তোর ছোট ভাই সেই দুপুরে বাসা থেকে গিয়েছে। রাত হতে আসলো এখন খোঁজ নেই তারা।


তোকে বলেছে কি কোথায় গিয়েছে?

না আমাকে কিছু বলে নাই।

সানজিদার মনের মধ্যে একটা বড় ধাক্কা লাগল। এতোক্ষণ তো চলে আসার কথা কিন্তু আজ এখনো আসে নাই। নিশ্চয়ই আজকের ঘটনার জন্য ভয়তে আসে নাই বাড়িতে।

সে হয়তো ভাবছে সানজিদা বাবাকে সব বলে দিয়েছে। আর সে বাবাকে ভালো মতোই চিনে। এমনিতেই বাবা রাগি মানুষ। আর এই ঘটনার কথা জানলে সে কী করবে তা নিজেও জানে না।

কিন্তু ভয়তে সানজিদা তার বাবাকে কিছু বলে নাই। সানজিদা চায় না এই ঘটনার জন্য তার ভাইয়ের কিছু হোক। আর সানজিদার ভাই উল্টা বুঝে সেই দুপুর থেকে এখনো বাসায় আসে নাই।

এই ঘটনার জন্য সানজিদা নিজেকে দোষারোপ করে। তখন সানজিদার ভাই সানজিদার কাছে মাফ চেয়েছিল কিন্তু সানজিদা মাফ করে নাই। যদি মাফ করে দিত তাহলে তার ভাই আজ ঘরে থাকত।

সানজিদা ফোন নিয়ে ভাইয়ের ফোনে অনেকবার ফোন দিয়ে ট্রাই করছে কিন্তু ফোন যাচ্ছে না।


আর কোনো উপায় না পেয়ে সানজিদার ভাইয়ের বান্ধবীর ফোনে কল দিল। দুই তিন বার মতো ফোন দেওয়ার পরে ফোন রিসিভ করলো।

হ্যালো তানিয়া?

হ্যাঁ আপনি কে বলছেন?

আমি আকাশের বড় বোন সানজিদা বলছি।

হ্যাঁ আপু বলো কী হয়েছে?

তুমি কী আকাশ কে দেখছো। সেই দুপুরে বাসা থেকে বাহির হয়েছে কিন্তু এখনো বাসায় ফেরেনি। ওর ফোন ও বন্ধ আছে। কল যাচ্ছে না।

না আপু আমার সাথে ওর সারাদিন কথা হয়নি।

আচ্ছা ঠিক আছে, ধন্যবাদ। যদি আকাশের সাথে যোগাযোগ হয় তাহলে এই নাম্বারে ফোন দিয়ে বলবে আমাকে জানাবে আকাশ কোথায় আছে।

আচ্ছা ঠিক আছে আপু‌। আমি জানবো তোমায়। চিন্তা করো না। হয়তো কোনো বন্ধুর বাসায় আছে। রাতের মধ্যে বাসায় চলে আসবে।

ইনশাআল্লাহ তাই যেন হয়।

প্রতিদিন যায় হোক না কেন, সানজিদার বাবার সংবাদ দেখা মিস হবে না। রাতে সংবাদ দেখার সণয়, সংবাদে বলে আজ সন্ধ্যার সময় চুয়াডাঙ্গা সদরে ব্রিজের পাশে একটা গলা কাটা লাশ পাওয়া গেছে। বয়স আনুমানিক ১৭ বছরের কাছাকাছি হবে।

সানজিদার বাবার মনে ভয় জেগে যায়। আকাশের বয়স প্রায় ১৮ বছর। এটা কী তাহলে আকাশ,,,,,,,


চলবে,,,,,

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (সকল পর্ব ১-২৬)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)