পিরিয়ড - Wohad Mahmud (পর্ব ১)



পিরিয়ড #পর্ব ১

পিরিয়ডের সময় হচ্ছে সানজিদার। কালকে পিরিয়ডের ডেট। টিউশনি থেকে আসার সময় ফার্মেসি থেকে প্যাড কিনে বাসায় ফিরছিল। বাসায় যাওয়ার সময় কিছু বখাটে ছেলে সানজিদার পিছনে অশ্লীল ভঙ্গিতে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল। প্যাড টা একটা প্যাকেটের মধ্যে ছিল। বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল পেকেটের মধ্যে প্যাড আছে। ব্যাগের মধ্যে বই বেশি হওয়ায় প্যাড ব্যাগের মধ্যে নেয়নি। যদিও সেভাবে নিলে ব্যাগের মধ্যে জায়গা হয়ে যেত।


যতসব দোষ সানজিদার বান্ধবীর। সানজিদা বলেছিলাম ভালো করে ঢেকে নিই। বলা যাই না রাস্তার কেউ খারাপ দৃষ্টিতে থাকতে পারে।

কিন্তু সানজিদার বান্ধবী বলে এখন আর আগের মতো সময় নেই।এসব সমস্যা অনেক আগে হতো। এটা নিয়ে কেউ আর খারাপ কথা বলবে না। কিন্তু এখন বখাটে ছেলে গুলো সানজিদার পিছনে লেগেছে।

রাস্তা কিছু টা নির্জন মতো‌। বেশি মানুষ যাতায়াত করে না। আর সে জন্যই বখাটে ছেলেগুলো আর বেশি সুযোগ পেয়েছে। এখনো কিছু কিছু কুলাঙ্গার আছে যারা মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।

এমন পরিস্থিতিতে কিছুটা ভয় পেয়ে যায় সানজিদা। কী করবে বুঝতে পারছে না।


রাস্তায় কোনো মহিলা বা পুরুষ মানুষ নেই যে, তাদের কাছে থেকে সাহায্য নিবে। দুপুর সময়ে কেউ নেই। রাস্তায় সম্পূর্ণ একা হয়ে গিয়েছে সানজিদা।

অল্পকিছু পথ যাওয়ার পরে দেখে সানজিদার ছোট ভাই আসছে হাঁটতে হাঁটতে।


ভাইকে দেখে কিছুটা স্বস্তি পায় সানজিদা। কিন্তু এরপর যা হলো সেটা দেখার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না সানজিদা। অনেক অবাক হয়।

সানজিদা আশা করেছিল ছোট ভাই যখন আসছে তাহলে ভয়ের আর কিছু নেই। কিন্তু উল্টা বোনকে উত্যক্ত করছে ছোট ভাই।

সানজিদা প্যাডের প্যাকেট টা ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নেই‌। এই প্রথম প্যাড কিনে নিয়ে আসছে সানজিদা। প্রতিবার বাবাই কিনে নিয়ে এসে দেয়। কিন্তু এবার নিজেই কিনে নিয়ে আসতে গিয়ে বিপদে পড়েছে। সব থেকে বেশি সমস্যা হয়েছে সানজিদার বান্ধবীর জন্য।

প্যাডের প্যাকেট টা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে জোরে জোরে হাঁটতে থাকে সানজিদা। আর কোনো উপায় না পেয়ে সামনের একটা বাড়িতে ঢুকে যায় সানজিদা।


কিছুক্ষণ পর উঁকি মেরে দেখে আর কেউ নেই। ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে জোরে হেটে হেটে বাসায় আসে। শিত কালের মধ্যেও ঘেমে গিয়ে সানজিদা।

মেয়ের এমন অবস্থা দেখে সানজিদার মা বলে কী হয়েছে সানজিদা তোর। এতো ঘামছিস কেন? কোনো সমস্যা হয়েছে কি?

না মা কোনো সমস্যা হয়নি আমার। আমি ঠিক আছি। একটু জোরে হাঁটছি তো তাই ঘেমে গিয়েছি।


রুমে ঢুকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে সানজিদা। আর ভাবছে আমার ভাই আমার সাথে এমন জঘন্য কাজ করল কীভাবে। নিজেকে শান্তনা দিয়ে বলে বোরখা পরে মুখ ঢাকা ছিল তাই আমাকে চিনতে পারে নাই সে জন্যই এমন করেছে। আর বোরখা নতুন ছিল। আজই প্রথম পরেছে সে জন্য আরো বেশি চিনতে পারেনি।

কিন্তু আমি না হয়ে অন্য কোনো মেয়ে হলেও বা এমন জঘন্য কাজ কেন করবে। আমি সেখানে ছিলাম জানলে আমার সাথে এমন করতো না কিন্তু অন্য মেয়ে ভেবে করেছে। ওই বখাটে ছেলে আর আমার ভাইয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আব্বা যদি এটা জানতে পারে তাহলে আমার ভাইকে মেরে ফেলবে। বলা যাবে না আব্বাকে।

রাতে সবাই একসাথে খাওয়া দাওয়া করছি। আর টিভিতে সংবাদ চলছে। প্রতিদিন রাতে সংবাদ দেখে আর খাওয়ার দাওয়া করে বাবা।

সংবাদে বলছে বাসের মধ্যে একটা মেয়েকে একা পেয়ে বাস ড্রাইভার আর হেলপার মিলে আঠারো বছরের একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।

বাবা তখন বলল সমাজটা একদম নষ্ট হয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন চলছে।


সানজিদা তখন বলল, সব ছেলেরা এক বাবা। এরা কখনো ভালো হবে না। সুযোগ পেলে হাতছাড়া করে না। এদের থেকে বাঁচার কোনো উপায় নেই।

সানজিদার ছোট ভাই তখন বলে, সব ছেলেরা এক না‌। সব ছেলেরা ধর্ষক হয় না। অনেক ছেলে আছে তারা মেয়েদের সম্মান করতে জানে।


সানজিদা তখন মুচকি হেসে বলে, সব ছেলেরা ধর্ষক না তবে কিছু কিছু ছেলে রাস্তায় চলার পথে মেয়েদের পিছনে পিছনে গিয়ে একা পেয়ে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। এরাও ধর্ষকের থেকে কম না। সুযোগ পেলেও এরা ভয়ংকর ধর্ষক হয়ে উঠে সমাজের।

সানজিদার কথা শুনে কিছুটা নড়ে চড়ে বসে সানজিদার ছোট ভাই। আর আজ দুপুরের কথা ভাবতে থাকে। আজকেও একটা মেয়েকে একা পেয়ে উত্যক্ত করেছে। কিন্তু সেটা তার বোন ছিল এটা জানে না।

সানজিদার বাবা বলে তুই তো প্রতিদিন একা একা যাওয়া আসা করিস টিউশনি, কলেজে। তোকে কি কেউ ডিস্টার্ব করে রাস্তায়?

না বাবা আমাকে কেউ ডিস্টার্ব করে না। আমার এমন একটা ভাই থাকতে আমাকে ডিস্টার্ব করার সাহস কেউ পাবে না। তুমি চিন্তা করো না।


পরেরদিন সকালে আবার টিউশনিতে যায় সানজিদা। টিউশনিতে গিয়ে বান্ধবীকে বকাবকি শুরু করে দেয় সানজিদা। তোর জন্য আমাকে হয়রানি হতে হয়েছে অনেক। সব দোষ তোর।

সানজিদার বান্ধবী বলে, কী হয়েছে আগে সেটা তো বল আমাকে।

আমি তোকে বললাম প্যাডের প্যাকেট টা ব্যাগের মধ্যে নিই। কিন্তু তুই শুনলি না। বললি যে, সমাজ আর আগের মতো নেই। কিন্তু সমাজ আগের মতোই আছে। কাল রাস্তায় আমাকে কিছু বখাটে অনেক উত্যক্ত করেছে।


আর আমার ভাআআআই,,,

তোর ভাই কী?

না কিছু না।

আরে বলতো কী হয়েছে। তোর ভাই ও কি তোকে উত্যক্ত করেছে?

আরে না, কী সব আজেবাজে কথা বলিস। আমার ভাই এমন করবে কেন?

করতেও তো পারে। তুই বোরখা পরে ছিলি। তোকে চিনতে না পেরে বাজে মন্তব্য করেছে।

আরে এমন কিছু না। আমি বলতে চাইছিলাম আমার ভাই জানলে ওই ছেলেগুলোর সাথে ঝামেলা করবে। সে জন্যই বলি নাই। আর তুইও যেন বলবি না।

আচ্ছা ঠিক আছে বলব না।

কালকের মতো আজকেও বাসায় যাচ্ছে সানজিদা। দূর থেকে দেখছে সানজিদার ছোট ভাই আর কিছু ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। সানজিদা কে দেখে শিস বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত করছে। সানজিদার ছোটভাই ও এমন করছে।

আস্তে আস্তে সানজিদা ওর ছোট ভাইয়ের কাছে যাচ্ছে। কাছে গিয়ে,,,


চলবে,,,

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (সকল পর্ব ১-২৬)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)