ভালবাসি ভালবাসি - আসাদুজ্জামান রাজ


ভালবাসি ভালবাসি
__"আসাদুজ্জামান রাজ"
.
আবির অফিস থেকে আসতেই
নেহা বিরক্তকর অভিযোগ বলতে শুরু করে দিয়েছে
.
কেন তুমি আমাকে বিয়ে করেছ.?(নেহা)
-এইটা আবার কেমন কথা? আর মানুষ বিয়ে কি জন্য
করে?(আবির)
-বাংলা কথা বুঝ না.
আমি যে তোমার স্ত্রী তার কোন
মূল্য আছে তোমার কাছে? আর আমার কি করতে ভাল
লাগে কোথায় যেতে ভাল
লাগে.? কি পরতে' কি খেতে ভাল লাগে
এসব তুমি
জান?
জানার চেষ্টা ও করেছ কখনো ?(নেহা অনেকটা রাগি
কন্ঠে বলল)
-দেখ নেহা আমি অনেক ক্লান্ত সারাদিন অফিস
করে এসে তোমার সাথে ঝগড়া করার মুড নেই ।
প্লিজ চুপ করে যাও(আবির)
-কেন চুপ করব ? আর তুমি এটাও মনে রেখো শুধু একসাথে
বাস করলে সংসার হয়
না।
আরো কিছু লাগে!
..
..
নেহা কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করল !
দেখ আবির অনেক হয়েছে
আমি আর এভাবে তোমার
সাথে থাকতে পারব না ।
আমি কালই মায়ের বাসায়
চলে যাব ।
.
এসব কথা আবির সয্য করতে না পেরে! আবির নিজেই
কিছু না বলেই রুম থেকে বের হয়ে গেল!
খাটের
কোনে বসে কাঁদছে নেহা।তাদের বিয়ে হয়েছে প্রায়
বছর খানেক আগে ,পারিবারিক ভাবেই।প্রথম
দিকে ভালই চলছিল তাদের সংসার ।আবির একটু
চাপা স্বভাবের।নিজের ভালবাসার
অনুভুতিগুলো ব্যক্ত করতে পারে না।এটাই তার
দূর্বলতা। কিন্তু আবির হয়ত এটা জানে না মেয়েরা
পছন্দের মানুষের কাছ
থেকে আশা করে ,সকাল
বেলা একটা গুডমনিং ,কিংবা আলতো করে
গালটা ধরে কপালে একটা চুমা কিংবা প্রতি
ঘন্টায়
ঘন্টায় ফোন করে খেয়ছ কিনা জানতে চাওয়া
রাতের
আকাশে কাধে হাত রেখে চাদের
দিকে তাকিয়ে ভালবাসি বলা কিংবা তার চোখের
দিকে তাকিয়ে বলা সারাজীবন পাশে থাকব
এসব
কিন্তু এসবের কিছুই আবিরের দ্বারা হয় না।
শুধু আবির পারে
নেহার কাপের অসমাপ্ত
চা লুকিয়ে খেতে ,শীতের
রাতে গুটিশুটি হয়ে ঘুমিয়ে পড়া নেহার গায়ে চাদর
দিয়ে ঢেকে দিতে ,ঘুমন্ত নেহার পাশে বসে মাথায়
হাত
বুলিয়ে দিতে!
নেহা অসুস্থ
হলে তাকে সেবা করতে করতে রাত শেষ করে দেও!
পাশে বসে থেকে নেহার কাজে সাহায্য করতে
কিন্তু
নেহা তো এগুলো দেখতে পায় না ।
.
কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা ভালবাসতে জানে
কিন্তু
প্রকাশ করতে জানে না ।
আবির ও তাদের একজন।আবার
কিছু কিছু মানুষ আছে যারা দুষ্ট
মিষ্টি ভালবাসা দিয়ে প্রিয়জনের মন
ভুলিয়ে রাখে কিন্তু ভিতরে ভালবাসার ছিটেফোটা

নেই ।
.
সকাল বেলা নেহা ব্যাগ গুছিয়ে মায়ের বাসায়
চলে গেল!
আবিরের বাধা তাকে আটকাতে পারল
না। আবির
অনেক বার ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন রিসিভ
করেনি নেহা ।
.
এভাবে কেটে গেল কয়েক দিন ,আবির
অফিসে যাওয়া বাদ
দিছে ,রান্না বান্না করে না! বাইরে খায় গোসল ও
ঠিক ভাবে করে না!
করতে ও ভুলে গেছে । কারন নেহা বিহীন শুন্য
বাড়িতে আবিরের মন বসে না! সারাদিন রাস্তায়
রাস্তায়
ঘুরে বেড়ায়।নেহাকে আনার চেষ্টা ও করেনি কারন
নেহা মানা করে দিয়েছে বলেছে কয়েক দিনের
মধ্যে ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবে ।
এদিক দিয়ে নেহা ও
অপেক্ষা করে থাকে কখন আবির আসবে বলবে চল
বাসায় যাই তুমি যা বলবে আমি সেভাবে চলব ।
কয়েকদিন পরে
নেহা ব্যাগ থেকে কাপড় গুলো বের
করতে গিয়ে দেখল কাপড়ের ভাজ
থেকে একটা ডাইরি বেরিয়ে পড়ল ।
.
05/03/14 ,আমার নেহার অনেক জ্বর।মাথায়
পানি দিয়েছি ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি এখন আমার
বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে আমার মহারানী ।
হে আল্লাহ তুমি আমার বউকে ভাল করে দাও ।
.
20/04/14 ,আজকে মহারানীর জন্য একটা ফুল
নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু
দিতে পারে নি সে ঘুমিয়ে পড়েছে তাই
ডাকেনি যদি কষ্ট পায় ?
.
12/05/14 ,আমার বউ টা এত সুন্দর কেন ?
ঘুমালে তাকে পরীর মত লাগে।হে আল্লাহ
আমার মত
কুৎসিত ছেলের গলায় তুমি মুক্তার মালা পরিয়েছ।
আলহামদুলিল্লাহ !!
.
25/06/14 ,আজকে মহারানীর পছন্দের
ফুসকা এনেছিলাম।আমার
সামনে বসে খেয়েছে আমাকে একটাও দেয় নাই।
খাওয়ার সময় তাকে পুরা বাচ্চাদের মত
লাগছিল ।
আমার খুব ভাল লেগেছে ।
.
30/06/14 ,নেহা আজকে আমার
সাথে ঝগড়া করেছে।
আমি নাকি তাকে ভালবাসি না ইদানিং প্রায়
এমন
করে ।
আমি তোমাকে বুঝাতে পারি না তোমাকে কতটা
ভালবাসি।
তুমি কখন
আমাকে ছেড়ে যেয়ো না ,তাহলে আমি মরে যাব ।
তুমি বুঝ না কেন অফিসের কাজের চাপ
থাকে ইচ্ছা থাকার সত্তে ও
তোমাকে নিয়ে বোরোতে পারি না।তুমি আমার
সাথে এমন কেন কর ।তোমাকে অনেক
ভালবাসি ,মহারানী ।
ডাইরির পাতা গুলো পড়তে পড়তে নেহার চোখের
জলে ভেসে যাচ্ছে দু চোয়াল।হঠাত্ ফোন
বেজে উঠল ,আবিরের ফোন।তাড়াতাড়ি চোখ
মুছে রিসিভ করল নেহা ।
হ্যালো ,ভাবি ভাইয়ের গায়ে খুব জ্বর বিছানায়
পড়ে আছে ।জ্বরের ঘোরে শুধু আপনার নাম বলছে।
আপনি একটু আসবেন।
.
কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে বের হয়ে গেল নেহা ।
গাড়িতে বসে ও কাঁদছে মেয়েটি।বাসায় পৌছে তার
কান্না আরো বেড়ে গেল।বিসানায় অচেতন
হয়ে পড়ে আছে আবির।ডাক্তার কে ফোন দিল নেহা।
কাজের ছেলের সাহায্যে আবির কে বিছানার
কানায়
শুয়ায়ে মাথায় পানি দিচ্ছে আর চোখ
দিয়ে অঝরে পানি পড়ছে ,নীজের উপর খুব রাগ
হচ্ছে নেহার এই পাগল টা ছেড়ে আমি কেন
গেলাম ?
যদি কিছু হয়ে যায় ।
ডাক্তার এসে ঔষধ দিল
একটা স্যালাইন দিল ।এবং বলল কান্নাকাটির
দরকার নেই সুস্থ হয়ে যাবে।
কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে
জ্বর কমে গেল আবিরের ।
নেহার উপর রাগ করে অন্য
দিকে মুখ করে শুয়ে আছে আবির ।
আর আবিরের চুলে হাত
বুলাচ্ছে নেহা ।
-তুমি এসেছ কেন?আমারে না ডিভোর্স দিবা?
(চোখের কোনায় পানি জমে আছে আবিরের নেহা এখন
কাঁদছে)
-কিসের ডিভোর্স?কোন ডিভোর্স
হবে না আমি চলে গেলে তোমার কি হবে শুনি ?
আমাকে ছেড়ে কোথাও জেতে পারবা না তুমি।
আমি কয়েক দিন নেই আর এরি
মধ্যে কি অবস্থা করেছে নিজের
মুখভর্তি অগোছালো দাঁড়ি মাথা ভর্তি চুল।আর বাসার
জিনিসগুলো সব এলোমেলো করে ফেলছ ।
-তাহলে চলে গেছিলা কেন আমাকে ছেড়ে?তুমি
জানতে না তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না ।
-আর যাব না কখন।
-আবিরের বুকে মাথা রেখে আবিরকে জড়িয়ে ধরল
নেহা।
আমাকে মাফ করে দাও! আর
তুমি এত ভাল ডাইরি
লেখ
জানাছিল না তো ?
মানে তুমি আমার ডাইরি দেখছ ?
হুম ,আমার বরটা আমাকে এত
ভালবাসে ডাইরি না পড়লে জানতাম না ।
মহারানী ,লুকিয়ে একজনের ড়াইরি পড়া ঠিক না

কিসের ঠিক না ,আমাকে নিয়ে লিখলে আমি দেখব।
মুচকি হাসির ইমু
এখন তোমার মুখে থেকে সেই অমৃত কথা শুনতে চাই..?
হুম
ভালবাসি.....!
ভালবাসি.....!
তোমার থেকে একটু বেশি ভালোবাসি ......!
অমৃত কথা তো শুনলে অমৃত সুধা নিবে না (বাকা চাঁদের
হাসি দিয়ে কথাটি বললো নেহা আর সাথে সাথে দুইটি
নিঃস্বাস এক হয়েগেল অতঃপর লেখক আর লিখতে
পারল না কারণ ভালো করে তো নিশ্বাসি নিতে
পারছে না লিখবে কি ভাবে.?
.
সমাপ্ত

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)