রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (পর্ব ১২)


হঠাৎ নিশুতির চিৎকারে প্রায়াণের মুগ্ধতার রেশ কাটে। প্রায়াণ দেখে নিশুতি পা চেঁপে মাটিতে বসে আছে। প্রায়াণের থেকে একটু দূরে সে। প্রায়াণ দৌড়ে সেখানে যায়।
---------কি হয়েছে?? ব্যথা পেয়েছো??
নিশুতি কাঁদোকাঁদো মুখ করে বলে,
--------হুম।
প্রায়াণ কটমট করে তাকায় নিশুতির দিকে। পায়ের গোড়ালি তে চামড়া হালকা উঠে গেছে। জ্বলছে খুব। প্রায়াণ রাগী গলায় বলে,
--------এত লাফালাফি করতে কে বলছিল তোমায়?? একটু দাঁড়ানো যায় না!! না খালি দৌড়াদৌড়ি!
নিশুতি নাকিসুরে বললো,
-------এভাবে বকছেন কেন? আমি তো বুঝিনি যে পড়ে যাবো! পাথর গুলো যে এত পিচ্ছিল! বুঝতে পারিনি।
-------তা বুঝবা কেনো? ফিটার খাও তো তুমি। একদম বাচ্ছা!! কিচ্ছু বুঝো না। খালি ফালাফালি টা বুঝো!
প্রায়াণের কঠিন গলা।
নিশুতির মন ভারী হয় খুব। সে আর একটা কথাও বলে না। চুপ করে উঠে গিয়ে একটা বড় পাথরের উপর বসে। প্রায়াণ পাথরের গায়ে লাথি মেরে বলে,
--------একে তো নিজেই দোষ করবে আবার নিজেই রাগ দেখাবে। যত্তসব!!
কথাটা নিশুতি শুনলেও কিছু বলে না। চুপ করেই বসে থাকে সে। দৃষ্টি অন্যদিকে। মন খারাপ লাগছে খুব। সে তো সচরাচর ঘুরতে যায়না কোথাও! এই প্রথম এসেছে। আর এসে না হয় খুশিতে একটু লাফালাফি করেছে। তাতে কি এমন হয়েছে যে এত কড়া গলায় বকতে হবে!! নিশুতি মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়,সে এই পঁচা ছেলেটার সাথে আর একদম কথা বলবে না। একদম না।
কিছুক্ষণ কেটে যায়। প্রায়াণ নিজের ভুল টা বুঝতে পারে। আঁড়চোখে তাকায় নিশুতির দিকে। নিশুতির গাল ফোলা,চোখ লাল। নাক দিয়ে ফোসফোস করে নিশ্বাস পড়ছে। নিশুতি যে ভারী রেগে আছে তা বুঝে ফেলে প্রায়াণ। ধীর পায়ে নিশুতির পাশ ঘেঁষে এসে দাড়ায়। নিচু গলায় বলে,
-------সরি।
নিশুতি মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। মনে মনে জঘন্য জঘন্য গালি দেয় প্রায়াণ কে। এতক্ষণ বকে এখন এসেছে আহ্লাদ করতে!! হুহ ঢং!!
প্রায়াণ নিশুতির সামনে এসে দাড়ায়। কানে হাত রেখে বলে,
------এই যে কান ধরছি। সরিইইইইই।
নিশুতি একবার তাকায় প্রায়াণের দিকে। তাকিয়ে আবার অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এবার প্রায়াণ ও কাঁদোকাঁদো হয়ে যায়। বলে,
----------মাফ করবা না??
নিশুতি নিশ্চুপ। উত্তর দেয়না। প্রায়াণ দু হাতে কান চেঁপে ধরে উঠ বস শুরু করে।
নিশুতি তার দিকে তাকাতেই বলে,
-------এই দেখো কান ধরে উঠ বস করছি তাও পাবলিক জায়গায়!! এবার তো মাফ করো। সরি তো....
নিশুতি ফিক করে হেসে ফেলে। রাগ ঝেড়ে ফেলে তার। প্রায়াণ কে থামতে বলে তার পাশে এসে বসতে বলে। প্রায়াণও মুচকি হেসে নিশুতির পাশে বসে। প্রায়াণের চোখে চোখ রেখে নিশুতি বলে,
-------আমি এর আগে কখনো বড় কোথাও ঘুরতে যায়নি। এই প্রথম এরকম একটা জায়গায় আসা। তাই নিজেকে সামলাতে পারিনি আর।
প্রায়াণ মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
-------আমাকে আর বুঝাতে হবে না। আমি বুঝেছি তাই তো নিজ থেকে সরি বলছি। আর কখনো এভাবে বকবো না। প্রমিস....
নিশুতি উত্তরের জবাবে প্রায়াণের দিকে একটা মিষ্টি হাসি ছুড়ে দেয়। তারপর চারপাশ টায় চোখ বুলিয়ে দেখতে থাকে।
.
.
.
--------নতুন বিবাহিত জীবন??
কারো ভাঙা ভাঙা গলার কথা শুনে প্রায়াণ নিশুতি দুজনেই সামনের দিকে তাকায়। একজন বৃদ্ধ তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। নিশুতি প্রায়াণ উঠে দাঁড়ায়।
বৃদ্ধ কাছে এসে কোমড়ে হাত রেখে হাপাতে থাকে। এটুকুন হাটতেই বেশ হাপিয়ে গেছে উনি। জোরে জোরে নিশ্বাস উঠা নামা করছে। প্রায়াণ এগিয়ে এসে বৃদ্ধের হাত ধরে তাকে একটা পাথরের উপর বসায়। পাশের দুটো পাথরে প্রায়াণ নিশুতিও বসে। নিশুতি সাইড ব্যাগ থেকে পানির বোতল করে এগিয়ে দেয় বৃদ্ধের দিকে। তিনি স্বাভাবিক ভাবেই পানি নেন এবং বেশ কিছু পানি পান করে একটু সুস্থ বোধ করেন।
শ্বাস কমে আসলে তিনি ওদের উদ্দেশ্যে বলে,
-------ধন্যবাদ। বুড়ো হয়ে গেছি তো! তাই একটু তেই রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে শরীরে।
প্রায়ান বলে উঠে,
--------কি যে বলেন না! দাদা। আপনি এখানে একা?
-------নাহ। আমার ছেলে, ছেলের বউ আর নাতির সাথে এসেছি। তারা কিছুটা দূরে গাড়ির কাছে আছে। আমি একা একান্তে হাটতে হাটতেই এদিকটায় আসলাম।
--------ওহ আচ্ছা।
প্রায়াণ নিশুতি দুজনেই চুপ। বৃদ্ধ ওদের কে উদ্দেশ্য করে বলে,
---------নিউলি ম্যারেড বুঝি তোমরা? হানিমুনে এসেছো?
নিশুতি লজ্জা পায়। লজ্জা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। প্রায়াণ আমতা আমতা করে। কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না সে। বৃদ্ধ লোকটি প্রায়াণের জবাবের আগেই বলে,
--------তোমাদের দাদীকে নিয়ে আমিও এখানে প্রায় আসতাম। হানিমুনে না, এমনিতেই ঘুরতে। আমাদের ছেলে মেয়ে হওয়ার পরেও কত এসেছি! হিসেব নেই। এই খোলা প্রান্তর,নীল আসমান,পিচ্ছিল পাথর,আর এই আসমানি পানি....তোমার দাদীর যে কী ভীষণ পছন্দ তা তোমাদের বলে বুঝাতে পারবো না। এখানে এলেই একদম বাচ্চা হয়ে যেতো জানো? একবার হলো কী,আমাদের বড় ছেলে হওয়ার ৮ বছর পরের কথা। ছেলে নিয়ে ঘুরতে এসেছি এখানে। সাথে তোমার দাদীও। যেই না বিছানাকান্দি এলাম! ওমা তার ভেতরে বোধহয় সদ্য যৌবনে পা রাখা কোনো মেয়ের আত্মা ঢুকলো। সে কি লাফালাফি,দাপাদাপি! আমি তাকে ধমকে থামালাম। এক বাচ্চার মা তুমি,এত দৌড়াদৌড়ি করলে হয়?? তাতে তার সে কি রাগ! কি গোঁ! আমার সাথে কথা বললো না টানা দুইদিন। পরে বহুত খড়কাটি পুড়িয়ে মাফ টাফ চেয়ে তবে যা কথা বলা শুরু করলো একটু!
বৃদ্ধ লোকটি এতটুকু বলে সাময়িক থামলো কিছুক্ষণ। তারপর নিশুতির দেওয়া পানির বোতল থেকে আবারো কিছুটা পানি খেলো। প্রায়াণ নিশুতি মুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছিলো।
একটু বিশ্রাম নিয়ে সে আবার বলা শুরু করলো,
--------এরপর থেকে ওকে নিয়ে যতবার এখানে এসেছি,কখনো আর থামাই নি। বরং যেটা ও করতে চেয়েছে সেটাতেই সায় দিয়েছি। নয়তো আমার সংসার কুরুক্ষেত্রের ময়দান বানিয়ে ছাড়তো বুঝলে??
বৃদ্ধ লোকটি মৃদু হাসলো। নিশুতি বললো,
----------তাকে এবার নিয়ে আসেন নি??
হঠাৎ বৃদ্ধ লোকটির চোখ চিকচিক করে উঠলো পানিতে। ব্যথাতুর কণ্ঠে বললো,
--------দুবছর হলো সে আমায় ফাকি দিয়ে ঐ নীল আকাশের সন্ধ্যাতারা হয়ে গিয়েছে। আমিও কদিন বাঁঁচবো ঠিক নেই তার। তাই শেষ বারের মতো এখানে আসলাম। আমার হাবিবার (উনার মৃত স্ত্রী) স্মৃতি আওড়াতে। এখানে আসলেই আমার মনে হয় আমার হাবিবা আছে। মনে হয় আশেপাশেই কোথাও আছে,বাচ্চাদের মতো লাফালাফি করে বেড়াচ্ছে। বা কোথাও মুখ ফুলিয়ে বসে আছে!
অশ্রুসিক্ত চোখেই বৃদ্ধ লোকটি হাসলো। সেই হাসিতে কি ছিল নিশুতি জানেনা। তবে তার বুক টা একটা বিকট কষ্টে নড়ে উঠলো। ঝমঝমিয়ে চোখ দিয়ে পানি নামলো স্রোতের মতো। নিশুতি আলগোছে সে পানি মুছে নিলো কারো চোখে পড়ার আগেই।
কেউ হাত নেড়ে ডাকতেই বৃদ্ধ লোকটি উঠে দাড়ালো। সাথে প্রায়ান,নিশুতিও। লোকটি বললো,
--------ওটা আমার ছেলে। ডাকছে। যাই তাহলে। দোয়া করি তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখের হোক। সকল আনন্দে ভরে উঠুক।
লোকটি চলে গেলো। প্রায়াণের ইচ্ছে করলো একবার তাকে বলুক যে তারা বিবাহিত না। আবার কি যেন মনে হতেই সে বলতে গিয়েও বললো না। শুধু বৃদ্ধ লোকটির যাওয়ার পানে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে রইলো।
.
.
গাড়ি করে ফেরার পথে প্রায়াণ একটার পর একটা কথা বলে গেলেও নিশুতি চুপ। একটু নড়ছেও না সে। প্রায়াণ ও চুপ হয়ে যায়। কিছু জিজ্ঞেস করতেও গিয়েও করে না।চুপচাপ গাড়ি ড্রাইভ করায় মনোনিবেশ করে।
কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই একটা চাপা কান্নার শব্দ আসে তার কানে। প্রায়াণ চমকে নিশুতির দিকে তাকায়। নিশুতি দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে। প্রায়াণ দ্রুত গাড়ি সাইড করে থামায়। নিশুতির মুখ থেকে হাত সরিয়ে ব্যস্ত গলায় বলে,
--------নিশু। কি হয়েছে নিশু?? কাঁদছো কেনো তুমি??
নিশুতি জবাব দেয় না। তার চাপা কান্না এবার বিলাপে পরিনত হয়। হাউমাউ করে কেঁদে ফেলে সে। প্রায়াণ কি করবে ভেবে পায়না। আস্তে করে নিশুতির মাথা টা নিজের বুকের মাঝে ঠেসে ধরে।
প্রায়াণের শার্ট খামচে ধরে নিশুতি। ধীরে ধীরে কান্না কমে আসে। এবার আস্তে আস্তে গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে শুধু। প্রায়াণ পরম আদরে নিশুতির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নরম গলায় বলে,
---------আমাকে বলবা না কি হয়েছে??
ফোপাঁতে ফোপাঁতে নিশুতি বলে,
--------দাদুর কথা গুলো ভেবে কান্না পাচ্ছে। সে দাদী কে ভীষণ ভালবাসে তাইনা? আর দাদী স্বার্থপর এর মতো দাদু কে একা রেখে আকাশের তারা হয়ে গেলো।
এরপর মুখ টা তুলে প্রায়াণের দিকে তাকিয়ে বলে,
--------আপনি কোনোদিন আমায় একা ফেলে আকাশের তারা হবেন না তো?
প্রায়াণ গলা শুকিয়ে আসে। কার মরন কখন হবে,সেতো একমাত্র বিধাতা ছাড়া কেউ জানেনা।
তবুও নিশুতির মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলে,
-------উপরওয়ালা না চাইলে কখনো হবো না।
নিশুতি আর কথা বলে না।প্রায়াণের বুকের স্পর্শে তার সব কষ্ট মুছে যায়। কান্না থেমে যায়। দুটো মানুষ, কেউ কাউকে "ভালোবাসি" বললো না ঠিক করে। অথচ দুজনের মাঝেই এক গভীর ভালোবাসা হয়ে গেলো! ভালোবাসা বুঝি এভাবে হুট করেই হয়!
"ভালোবাসা" শব্দটা খুব ছোট কিন্তু এর গভীরতা সীমাহীন। মাঝে মাঝে ভালোবাসা বোঝাতে "ভালোবাসি" বলতে হয়না। নিঃশব্দতা আর স্থির চোখের দৃষ্টিতে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। আর এধরনের ভালোবাসা হয় খাটি,সত্যিকারের এবং অগাধ...যেমনটা সদ্য হওয়া একজন মা ও তার নবজাতক শিশুর মধ্যে হুট করেই হয়ে যায়...
.
.
.
রিসোর্টে ফিরে নিশুতি ওয়াশরুমে যায়। আর প্রায়াণ বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। শরীরে ক্লান্তি থাকলেও মনে এক অদ্ভুত শান্তি....শুধু শান্তি না,এক আলাদা প্রশান্তি। যেন একজীবনে সব পাওয়া হয়ে গেছে তার। আর কিছুই নেই চাওয়া পাওয়ার যেন...
হঠাৎ প্রায়াণের ফোন বেজে উঠে। প্রায়াণ বিরক্তি নিয়ে উঠে বসে বিছানার উপর। পকেট থেকে ফোন বেরে করে দেখে মিনু শেখের ফোন।
--------হ্যাঁ আম্মু।
---------এই কোথায় তুই??
মিনু শেখ এর কণ্ঠে ঝাঝ।
প্রায়াণ ভয় পায়। তিনি কিছু জেনে যান নি তো!
---------কেন আম্মু? হঠাৎ একথা কেনো?
---------হুট করে কোন ট্রিপে গেলি! আবার ফোনে সেদিন স্পষ্ট কিছু বললিও না।আবার নিজ থেকে একটা ফোনও দিস না! কোথায় আছিস বল??
প্রায়াণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। যাক কিছুই জানতে পারেনি তাহলে।
--------বরিশাল আছি বললাম না। স্পোর্টস টিমের সাথে এসেছি। বড় একটা খেলা আছে এখানে। খেলা শেষে দুটো দিন ঘুরাঘুরি করে চলে আসবো। তুমি চিন্তা করছো কেনো?
----------পাগল ছেলে! কি বলিস না বলিস। আমি তোর মা আর আমি চিন্তা করবো না?? এটা কি করে হয়??
---------ওরে আমার আম্মু টারে! এরপর থেকে প্রতিদিন ফোন করবো প্রমিস। আসলে খেলা নিয়েই ব্যস্ত থাকি একটু। বুঝোই তো!
মিনু শেখ এর সাথে আরো কিছু টুকটাক কথা বলে ফোন রেখে দেয় প্রায়াণ। কিন্তু ফোন কাটার ঠিক আগ মুহুর্তেই নিশুতি বের হয় ওয়াশরুম থেকে। চওড়া গলায় বলে,
--------ওয়াশরুমে যাবেন না??
এতটুকু শুনে ফেলে মিনু শেখ তারপরই কল কাট!!
মিনু শেখ ফোন হাতে নিয়েই টেনশনে পরে যান। ওখানে মেয়ে আসলো কোত্থেকে!! প্রায়াণ কি তাকে মিথ্যে বলছে নাকি??
.
.
প্রায়াণ ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নিশুতি লাঞ্চ সাজাচ্ছে। পিঠময় তার খোলা ভেজা চুল। টুপটুপ করে পানি পড়ছে তা থেকে। প্রায়াণের এক মুহুর্ত মনে হয় নিশুতি তার সত্যিকারের বিয়ে করা বউ...!
প্রায়াণ কে ওয়াশরুমের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিশুতি ভ্রু কুঁচকায়।
--------কি ব্যাপার? খাবেন না?? তিনটা বাজে কিন্তু!!
প্রায়াণ থতমত খায়। বারান্দায় তোয়ালে মেলে দিয়ে নিশুতির পাশে এসে বসে।
--------কে দিয়ে গেলো খাবার?
প্রায়াণের প্রশ্ন।
--------রিসোর্ট বয়। আপনি গোসল করছিলেন তখন।
প্রায়াণ আর কথা বাড়ায় না। চুপচাপ খেয়ে নেয়। সাথে নিশুতিও। খাওয়ার সময় প্রায়াণের খাওয়ার পাতে এটা ওটা তুলে দিচ্ছিলো নিশুতি। প্রায়ান তখন তব্ধা মেরে বসেছিল। কেন জানি আজ ভীষণ করে বউ বউ লাগছে নিশুতিকে।
খাওয়া শেষে রিসেপশানে কল করতেই রিসোর্ট বয় আসে। সব প্লেট বাটি গ্লাস নিয়ে যায়। দরজা আটকে প্রায়াণ সোফার উপর শোয়। প্রায়াণের হাইটের তুলনায় সোফা ছোট। কোনোমতে গুটিশুটি মেরে শুয়ে থাকে সে। নিশুতি খেয়াল করে ব্যাপারটা।
প্রায়াণ কে ডেকে বলে,
---------বিছানায় এসেই ঘুমান। আমার সমস্যা নেই। আর মাঝখানে কোলবালিশ আছে তো!
প্রায়াণ সাতপাঁচ ভেবে বিছানার এসে শোয়।
একই খাটের একপাশে প্রায়াণ আরেকপাশে নিশুতি। দুজনের মাঝে অর্ধেকহাত দূরত্ব। আর মাঝে রয়েছে কোলবালিশ। নিশুতি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে শুয়ে পড়া মাত্রই। শুধু ঘুম নেই প্রায়াণের চোখে। সে মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিশুতির দিকে তাকিয়ে আছে। বালিশের উপর ভেজা ভেজা ভাব এঁকে গেছে অনেকটা। সবটাই নিশুতির ভেজা চুলের কামাল। প্রায়াণ হুট করেই হিংসে হয়। ইশ! সে যদি ঐ বালিশটা হতে পারতো...!
চলবে....

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)