কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ১৫)

valobashar golpo,bangla valobashar golpo,valobasar golpo,valobashar golpo bangla,bangla sad valobashar golpo,valobashar kobita valobashar golpo,valobashar kotha,valobashar golpo audio,valobashar golpo voice,valobashar golpo natok,bhalobashar golpo,koster golpo,udash valobasha,sad valobashar golpo,valobashar golpo song,valobashar golpo 2018,valobashar golpo kotha,abegi valobashar golpo,valobashar golpo video

-তোমার কাছ থেকে এখন আমায় সভ্যতা শিখতে হবে?
-না জানলে শিখতে হবে।
.
মেহেরীকার পাশে বসে শান্ত গলায় সানিয়া প্রশ্ন করে-
তোমাকে আদি কোথায় কামড়িয়েছে?
.
সানিয়ার এমন প্রশ্নে অবাক চোখে মেহেরীকা উল্টো প্রশ্ন করে-
আদি কি কুকুর? আমাকে কামড়াবে কেনো?
-ওই যে...
-কি যে?
-লাভ বাইট।
.
এতক্ষণে মেহেরীকা বুঝতে পারে সানিয়ার কথার মানে। আদিয়াত নিশ্চয় বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলেছে এই সানিয়াকে। আর সানিয়া এসব সত্যি ভেবে তাকে জেরা করতে এসেছে।
.
লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে মেহেরীকা বললো-
এসব কি বলা যায় নাকি! স্বামী- স্ত্রীর ব্যাপার এসব।
-কিন্তু আমি শুনতে চাই।
-আমি বলতে চাইনা।
-কেনো?
-বলতে গেলে লজ্জায় মরেই যাবো বোধহয়।
-করার সময়তো মরোনি।
-সেটাতো আদিয়াত এর সাথে রোমান্স এর ঠ্যালায় করে ফেলেছি। এখন তোমাকে কিভাবে বর্ণনা করি বলো?
.
আর কোনো কথা না বলে সানিয়া হনহন করে মেহেরীকার রুম থেকে চলে যায়।
.
সানিয়ার অবস্থা দেখে মেহেরীকা আপনমনে হেসে চলেছে। কি যেনো বলে গেলো সানিয়া? লাভ বাইট? আদিয়াত তাকে এসব বলেছে? ভারী পাজি ছেলেতো আদিয়াত।
.
.
.
রাজীবের রুমে এসে চারদিকে চোখ বুলাতে লাগলো সুপ্তি।
কখনো কি ভেবেছে এই রুমটা তার হবে? হুম ভেবেছে। প্রেম যখন থেকে বুঝতে শিখেছে তখন থেকেই রাজীব কে পছন্দ করে সুপ্তি। পচন্দ করে বললে ভুল হবে, ভালোবাসে সে। তাই সে যখন এখানে বেড়াতে আসতো বা রাজীব যখন তাদের বাসায় বেড়াতে যেতো সবসময় ঘুরঘুর করতো সে রাজীবের পেছনে। কিন্তু রাজীব তাকে ভালোই বাসেনি। আর সেও বলতে পারেনি তার মনের কথা। মনের কথা মনেই থেকে যায়। পরবর্তীতে রাজীবের কাছে জানতে পারে মেহেরীকার কথা। রাজীব আর কাউকে ভালোবাসে শুনে মনে জ্বালা করলেও সে খুশি থাকবে ভেবে সুপ্তি সেদিনও চুপ ছিলো। তবে প্রায় দেড় মাস আগে যখন রাজীব আর মেহেরীকার সম্পর্কের ফাটল ধরে তখন সে সুযোগটি কাজে লাগায়। রাজীবকে নিয়ে যায় নিজের বাড়িতে। এই দেড় মাসে সে রাজীবের খুব কাছে আসতে চেয়েছে। কিন্তু তার মনে শুধু মেহেরীকার বসবাস। যেখানে ওই মেয়েকে তার ঘৃণা করার কথা সেখানে সারাক্ষণ রাজীব তার নাম জপতে থাকে। কিন্তু সুপ্তি, রাজীবের জীবনে ওই মেয়েকে আর প্রবেশ করতে দিবেনা।
আপনমনে কথাগুলো বলে সুপ্তি এগিয়ে যায় বিছানার দিকে। বিছানার উপর বসে সে রাজীবের ভাবনায় তলিয়ে যায়।
.
.
.
-হ্যালো পিকু?
-বেবি বলো।
-তুমি সত্যি ভালোবাসো আমায়?
-সন্দেহ আছে?
-আছে।
-মানে!
-মানে যদি সত্যি ভালোবাসো বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসো, বিয়ের পর করবা যা খুশি।
-এতো তাড়া কিসের! আগে প্রেম করে...
-আমার তাড়া! তাড়াতো তোমার হয়েছে পিকু। যাক গে। এটাই আমার শেষ কথা। বিয়ে ছাড়া রুম ডেট আমি
করবোনা, কিছুতেই না।
তাতে যদি তোমার সমস্যা হয়, তুমি ব্রেকাপ করতে পারো।
-দিবা!
.
আর কোনো কথা না শুনে ফোনের লাইন কেটে দেয় দিবা।
চোখ বন্ধ করে লম্বা একটা দম ফেলে সে। পিকু কি করবে এখন? দিবার প্রস্তাবে রাজি হবে নাকি ব্রেকাপ করবে?
.
.
.
আদির বলা কথাগুলো মনে মনে আওড়াতে থাকে সানিয়া।
ভালোবাসা, আদর, কামড়,, উফ্ফ অসহ্য।
যেসব তার হওয়ার কথা ছিলো সেসব আজ অন্য মেয়ের হচ্ছে। সব কিছুর মূলে রয়েছে ওই মেহেরীকা। যাকে বলে পথের কাটা। আর এই কাটা উপড়ে দিলেই আদি তার হয়ে যাবে। হুম একান্তই তার হয়ে যাবে।
.
.
.
-তুই এখানে?
.
রাজীবের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো সুপ্তি। রাজীব কে দেখেই খুশিতে মনে দোলা দিয়ে উঠে তার।
মুখে হাসি এনে সুপ্তি বললো-
আমার হবু বর এর রুমে কি আমি থাকতে পারিনা?
.
সুপ্তি এখানে এসেছে তাতে রাজীবের কিছু আসে যায়না কিন্তু এই কথাটি শুনে তার মাথাটাই বিগড়ে যায়।
গম্ভীর গলায় বলে সে-
হবু বর। বর হয়নি এখনো। তাছাড়া হবোও না।
.
রাজীবের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে সুপ্তি। ছলছল চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে-
কি বলছো তুমি! কেনো বলছো?
.
সুপ্তির পাশে এসে শান্ত গলায় রাজীব বললো-
তুইতো জানিস আমি মেহের কে ভালোবাসি।
-কিন্তু শেষ দেড় মাসে তুমি বলেছো, তুমি তাকে ঘৃণা করো।
-এটাও বলেছি নতুন করে আর কাউকে নিয়ে ভাবা আমার পক্ষে সম্ভব না। বলিনি??
-হু।
-তাছাড়া ঘৃণা করি এসব আমার মুখের কথা ছিলো। করতে চেয়েছি, কিন্তু আমি পারিনি। তুই সেটা জানিস ভালো করে।
-হুম।
-তুই আর কাউকে বিয়ে করে নে।
-তোমার বিয়ের পরে করবো।
-পাগলামি করিস না সুপ্তি। তোর ছোট বোনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তুই করিস নি। অথচ আমার প্রায় সমবয়সী তুই। তোকে নিয়ে মামা মামীরা কতো চিন্তায় আছে বলতে পারিস?
-শেষ দেড় মাস চিন্তায় ছিলোনা। এখন করবে আবার। কিন্তু বেশিদিন করতে হবে বলে মনে হয়না। তোমার আর মেহেরীকার বিয়েটা হয়ে গেলেই আমিও করে নিবো কাউকে।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে রাজীব বললো-
কিন্তু তাকে খুঁজে পাচ্ছিনা।
-খুঁজে পাচ্ছিনা মানে?
-কোথায় চলে গিয়েছে মেয়েটা অভিমান করে কেউ জানেনা। কিন্তু আমি হাল ছাড়বোনা। রাজীবের কাছে তার মেহের ফিরে আসবেই, আমার বিশ্বাস মেহের আসবে।
.
.
.
নিজের রুমে পায়চারী করছেন কুনসুম হক।
ছেলের চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে তার মন। ভেবেছিলেন কিছুদিন সুপ্তির সাথে থাকলে তার মন থেকে মেহের নামক শব্দটি গুছে যাবে। কিন্তু কিছুই হলোনা। আবারো সে সব ফেলে ওই
মেহেরের পেছনে পড়ে রয়েছে।
.
-ফুফু?
.
সুপ্তির ডাকে পেছনে ফিরে কুনসুম হক বলেন-
আয় মা, ভেতরে আয়।
.
ধীর পায়ে কুনসুম হকের দিকে এগিয়ে গিয়ে সুপ্তি বললো-
আমি চলে যাবো ফুফু।
.
অবাক চোখে তাকিয়ে কুনসুম হক প্রশ্ন করেন-
কেনো?
-তোমার ছেলে মেহেরীকা কে বিয়ে করবে, আমাকে জানিয়ে দিয়েছে।
-আর তুই এটা শুনে ভেঙ্গে পড়েছিস?
-কি করবো বলো?
-দেখ সুপ্তি, মেহেরীকা কে নিয়ে আমার কোনো আপত্তি ছিলোনা। কিন্তু যা ঘটেছে এর পরেও আমি ওই মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারিনা। প্রতারক মেয়ে সে। কিন্তু আমার ছেলেকে দেখ, এখনো তাকে ভালোবাসে। রাজীবের মন বড় বলে সহজে ওই মেয়েকে ভুলতে পারছেনা সে। সে মনে যদি তোর জায়গা হয়, তোকে কোথাও যেতে দিবেনা।
-কিন্তু কিভাবে কি সম্ভব! দুইটা ভালোবাসার মানুষকে আমি আলাদা করতে পারিনা।
-মেহেরীকা কি ভালোবাসে আমার ছেলেকে! বাসেনা। বাসলে সে কখনো ওভাবে ঠকাতে পারতোনা আমার রাজীব কে।
-হুম।
-তুই একমাত্র ওকে ভালো রাখতে পারবি। তাই আমি বলছি তুই যাবিনা কোথাও।
-হুম ফুফু।
-যা মা, আরাম কর তুই এখন। অনেক দূর থেকে এসেছিস।
ঠিক আছে।
.
সুপ্তিকে বোঝালেও নিজের মন কে বুঝাতে পারছেন না কুনসুম হক।
সুপ্তি মেয়েটার জন্য বড্ড খারাপ লাগছে তার।
যেদিন সুপ্তি জেনেছিলো রাজীব ভালোবাসে মেহেরীকা কে সেদিন কাঁদো কাঁদো অবস্থায় জানিয়েছিলো কুনসুম হক কে, সে ভালোবাসে রাজীব কে। কিন্তু প্রকাশ করতে খুব বেশি দেরী হয়ে গিয়েছে।
কুনসুম হক রাজীব কে সবটা জানাতে চাইলেও সুপ্তির জন্য পারেননি। সুপ্তি তাকে অনুরোধ করেছিলো, এসব যেনো রাজীব জানতে না পারে।
সেদিন কিছু করার না থাকলেও আজ অনেক কিছুই করার আছে। রাজীবের জন্য সুপ্তির চেয়ে ভালো কেউ হতেই পারেনা। তাই কুনসুম হক এবার তার ছেলেকে ভুল পথে পা বাড়াতে দিতে পারেন না, কিছুতেই না।
আপমমনে কথাগুলি বলে কুনসুম হক বসে পড়েন বিছানার উপরে।
.
.
.
রাত ৮টা....
রান্নাঘরে পা দিতেই মেহেরীকা দেখতে পায় মিলিকে।
-ভাবী?
-হুম মেহেরীকা? আসো।
-একটা কথা বলি?
-বলো?
-ইয়ে মানে....
-সংকোচ করছো কেনো?
বলোনা।
-আজকের রান্নাটা আমি করি?
.
মেহেরীকার মুখের দিকে তাকিয়ে উচ্চশব্দে হেসে উঠে মিলি।
.
-হাসছো কেনো ভাবী?
-এটা বলতে এতো সংকোচ করতে হয়?
-শুনেছি তুমি কাউকে রাঁধতে দাওনা?
-কিন্তু তুমি রাঁধতেই পারো। এই বাড়ির বউ তুমি। যখন খুশি রাঁধবে।
-ধন্যবাদ ভাবী।
-আসো তোমাকে দেখিয়ে দেয়, কোথায় কি আছে।
-হুম।
.
.
রাত ৯.৩০...
কলিং বেল এর শব্দ হতেই মেহেরীকা এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
-এসেছেন আপনারা?
.
মৃদু হেসে আরিফ বলে-
হুম। ভালো আছো?
-জ্বী আছি।
-আচ্ছা, আমি ভেতরে যাই।
.
আরিফ চলে গেলেও আদি দাঁড়িয়ে থাকে নিজের জায়গায়।
-কি ব্যাপার! তুমি কেনো দাঁড়িয়ে আছো?
-অনেকক্ষণ পর দেখছিতো তোমায়।
-তো?
.
মেহেরীকার থেকে চোখ সরিয়ে আদি ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো-
তো কিছুনা। ভাবীকে বলো ভাত রেডি করতে। ক্ষুধা পেয়েছে অনেক। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
.
মেহেরীকা খেয়াল করে আদির হাতে অনেকগুলো শপিং ব্যাগ।
দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে সে-
কাজে গিয়েছো নাকি শপিং করতে?
-দুটোই করেছি। কোনো সমস্যা?
-নাহ, আমার কি সমস্যা হবে! ফ্রেশ হয়ে আসো।
.
.
.
ডাইনিং টেবিলে বসে রাতের খাবার খাচ্ছে সকলে। আজ দিবাও খেতে এসেছে। মেহেরীকা খেয়াল করে তাকে দেখতে অনেকটা স্বাভাবিক লাগছে।
.
-বউমা আজ সরষে ইলিশ টা এতো মজা হয়েছে কি বলবো! দেখি আমাকে আরেক টুকরো দাও।
.
মিলির দিকে তাকিয়ে কথাটি বললেন আমজাদ চৌধুরী।
.
মৃদু হেসে মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে মিলি বললো-
যাও, বাবাকে আরেক টুকরো মাছ দাও। তুমিইতো রেঁধেছো।
.
কথাটি শুনে উপস্থিত সকলে অবাক হয়ে যায়। মেহেরীকা এতো ভালো রাঁধতে পারে জানা ছিলোনা কারো।
.
মেহেরীকা মাছের বাটি হাতে নিয়ে এগিয়ে যায় আমজাদ চৌধুরীর পাশে।
তাকে দেখে আমজাদ চৌধুরী বলেন-
মাছ, মাংস মানেই মজা। এসব আবার মজা হয়না নাকি! বাটিটা রেখে যাও। আমি নিবো।
-জ্বী বাবা
.
সালেহা চৌধুরী হেসে আদির উদ্দেশ্যে বলেন-
আমার এই ছেলের ভাগ্যে কি করে এমন মেয়ে জুটলো!
.
কথাটি শুনে সকলে হেসে উঠলেও আদি ভ্রু কুচকে বলে-
আমার কি কম গুণ আছে নাকি! স্মার্ট, সুন্দর, এখন কাজও করছি।
-হুম ল্যাপটপ, মোবাইল সারাক্ষণ টিপার ক্ষমতা রাখিস।
হ্যাঁ রে আরিফ? তোর ভাই অফিসে কাজ করেছেতো? নাকি ল্যাপটপ, মোবাইল টিপাটিপাতে ব্যস্ত ছিলো?
.
সালেহা চৌধুরীর কথায় হো হো করে হেসে উঠে সকলে।
.
.
.
মেহেরীকার ভাবনায় অস্থির হয়ে আছে রাজীবের মন।
রাতের খাবারও খায়নি সে। তবে কতোটা সিগারেট শেষ করেছে তার নিজেরি অজানা।
.
-শুধু সিগারেট টানলেই হবে?
পেটে আর কিছু পড়তে হবেনা?
.
সুপ্তির কথায় সিগারেট অ্যাসট্রেতে ফেলে রাজীব বললো-
যখন তখন আমার রুমে এভাবে আসবিনা।
-এটা আমারো রুম হবে।
.
ভ্রু জোড়া কুচকে রাজীব বললো-
এটা মেহেরের রুম হবে। এখানে যা কিছু আছে সব
তার। ওই যে বিছানা দেখছিস? ওটাও মেহেরের। আরে পুরো আমিটাই মেহেরের। আর আমার সব কিছুই তার।
.
সুপ্তি জানে কথা বাড়িয়ে লাভ নেই আর।
শান্ত গলায় সে বললো-
রাতের খাবার খেয়ে নিও। শরীর খারাপ করবে।
.
.
.
আদিখ্যেতা....
মেহেরীকাকে নিয়ে এই বাড়ির মানুষের আদিখ্যেতা সানিয়ার একেবারেই সহ্য হচ্ছেনা। আজ খাবার টেবিলেও তাকে নিয়ে সবার আদিখ্যেতা দেখে সানিয়ার শরীরে জ্বালা দিয়ে উঠেছিলো। মনে প্রাণে ভালোবেসেছিলো সে আদিকে। ফলস্বরুপ কি পেয়েছে যে? ধোঁকা। তাহলে কি লাভ হলো নিজেকে পরিবর্তন করে? কোনো লাভ হয়নি। সে যেমন ছিলো তাতেই ভালো ছিলো। হুম আবারো সে সেই পথেই পা বাড়াবে। তবে এদেরও ছাড়বেনা। এতো সহজে সানিয়া এদের শান্তিতে থাকতে দিতে পারেনা। খুব তাড়াতাড়ি কিছু করতে হবে।
নিজের মনে কথাগুলি বলে পায়চারি করতে থাকে সানিয়া।
.
.
.
নিজের রুমে গিয়ে আদি দেখতে পায় মেহেরীকা বিছানা ঠিক করছে।
দরজা বন্ধ করে আদি এগিয়ে যায় তার পাশে।
-মেহের?
.
আদির ডাকে পেছনে ফিরে মেহেরীকা বললো-
হু?
-সোফার উপরে যে শপিং ব্যাগ গুলো দেখছো, সব তোমার।
-আমার মানে?
-তোমার জন্য কামিজ এনেছি কয়েকটা। সাথে উড়না আর কি যেনো বলে?
ওই যে ঢোলা ঢোলা প্যান্ট, লুঙ্গির মতো...
-প্লাজো?
-হুম হুম।
-তুমি কেনো এসব আনতে গেলে আদিয়াত?
-তোমার শাড়ি পরতে কষ্ট হয় তাই।
.
আর কোনো কথা না বলে মেহেরীকা সোফার পাশে গিয়ে খুলে খুলে দেখতে থাকে প্যাকেট গুলো। এক সেট কাপড় নিয়ে সে চলে যায় ওয়াশরুমের দিকে।
.
আদি সোফার উপরে থাকা কাপড়গুলো গুছিয়ে মেহেরীকার জন্য যে ড্রয়ারটি দিয়েছিলো তাতে রেখে দেয়।
.
-এই যে?
.
পেছনে ফিরেই কামিজ পরিহিত মেহেরীকাকে দেখে চমকে যায় আদি। এই মেয়েটা এমন কেনো? যা পরে তাতেই মানাই তাতে।
-কি হলো? কেমন লাগছে আমাকে?
-খুব ভালো।
-তোমাকে এতোগুলি ধন্যবাদ। আমার আসলেই দরকার ছিলো এসবের। বিশেষ করে প্লা...
মানে এই ঢোলা প্যান্ট এর।
.
মেহেরীকার কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে উঠে আদি।
তার সাথে হেসে উঠে মেহেরীকাও।
.
ঘড়িতে সময় রাত ২টা...
আদির চোখে ঘুম নেই। আজ সারাদিন মেহেরীকার কথা তার অনেক বেশি মনে পড়ছিলো। কিন্তু কেনো? কয়েক দিনের পরিচিত মেয়েটির জন্য কেনো তার মন এতো অস্থির হয়ে যায়? তার পাশে সারাক্ষণ কেনো থাকতে ইচ্ছে হয়? কেনো তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে? এসব প্রশ্নের উত্তর কোথায় পাবে সে?
নানানরকম ভাবনায় অস্থির হয়ে আছে আদির মন। আজ রাতে আর ঘুম হবেনা তার। তবে হ্যাঁ, প্রশ্ন গুলোর উত্তর রাত জেগে খুঁজে বের করা যেতেই পারে।
.
আপনমনে কথাগুলো বলে সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়ে আদি।
চোখ মেহেরীকার দিকে যেতেই চমকে যায় সে। একেবারে গুটিসুটি হয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে মেহেরীকা।
ড্রিমলাইটের আলোয় তাকে পরীর চেয়ে কম সুন্দর লাগছেনা। কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো আদি। পরণের জামা কাপড় একটিও ঠিকঠাক নেই মেহেরীকার।
কিন্তু আদির চোখ যেখানে গিয়ে আটকে গিয়েছিলো তা হলো মেহেরীকার পা। প্লাজোটা হাঁটুর উপরে উঠে যাওয়াই মেহেরীকার ধবধবে সাদা পা আদির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো।
নজর সরিয়ে ফেললেও একটা ঘোর কাজ করছে আদির মাঝে। খুব করে ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে মেহেরীকা কে। যেটা একেবারে অসম্ভবও নয়।
লম্বা একটা দম ফেলে মেহেরীকার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে যায় আদি।
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)