কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ১৬)

love story,cute love story,love,crush love story,korean love story,heart touching love story,sad love story,love story song,school love story,chinese love story,romantic love story,crush love story 2018,chinese mix cute love story,short love story,love story movie,story,our love story,best love story,true love story,love story 2019,love song,first love story full movie,funny love story

মেহেরীকার পায়ের পাশে পড়ে থাকা চাদরটা নিয়ে তার শরীর ঢেকে দিয়ে বারান্দার দিকে চলে যায় আদি।
নিজের উপর রাগ হচ্ছে তার। মেহেরীকা কে নিয়ে এসব ভাবা তার উচিত হয়নি, একদমই হয়নি। কিন্তু তার ভাবনায় শুধু মেহেরীকা চলে আসছে। এটা কি হচ্ছে তার সাথে! কেনো হচ্ছে? সে কি মেহেরীকা কে ভালোবেসে ফেলেছে?
আজ রাত জেগে এর উত্তর বের করতেই হবে। আপনমনে কথাগুলি বলে বারান্দায় পায়চারি করতে থাকে আদি।
.

.
সকাল ৮টা.....
.
আদি অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুনোর সময় সালেহা চৌধুরী বলেন-
এই যে আজ অফিসে যাওয়া লাগবেনা।
.
অবাক চোখে তাকিয়ে আদি প্রশ্ন করে-
কেনো?
-আজ বউ মা কে নিয়ে বেড়াতে যাবি।
-মানে?
-মানে তোর বউ কে নিয়ে ঘুরতে যাবি।
.
আদির সাথে বাইরে বেরুনোর কোনো ইচ্ছে মেহেরীকার নেই।
তাই মৃদু হেসে সে বললো-
থাক না মা। ও সবে মাত্র অফিসের কাজে হাত লাগালো। আরেকদিন না হয় যাওয়া যাবে।
.
মেহেরীকার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে সালেহা চৌধুরী ছেলের উদ্দেশ্যে বললেন-
নিবিনা?
.
এই সুযোগ কি হাত ছাড়া করা যায়! অবশ্যই না।
মুচকি হাসি দিয়ে আদি বললো-
নিবো।
-আরিফ আসলে জানিয়ে দিস তুই অফিস যাবিনা, আমি রুমে গেলাম এখন।
-আচ্ছা।
.
.
.
ফোন বেজে চলেছে দিবার...
ইচ্ছে না থাকা স্বত্ত্বেও রিসিভ করে বলে-
হ্যালো?
-কেমন আছো দিবা?
-ভালো।
-রেগে আছো তোমার পিকুর উপর?
-নাহ।
-জানি জানি, রেগে আছো। তবে এখন সব রাগ চলে যাবে তোমার।
-হুম।
-আমি বাসায় তোমার কথা বলেছি।
-কি!
-আরে আমার বাসায় তোমার কথা বলেছি। আম্মারা বলেছেন, তোমাদের বাসায় যাবেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।
-কি বলছো তুমি! সত্যি?
-হুম হুম সত্যি।
.
.
ফোন রেখে দিবা ছুটে যায় মেহেরীকার কাছে। সোজা তার রুমে ঢুকেই দেখতে পায় মেহেরীকা সোফার উপর বসে বই পড়ছে। দিবা দ্রুতবেগে তার পাশে গিয়ে বসতে বসতে বলে-
ভাবী?
.
বই পড়ায় মগ্ন ছিলো বলে সে একেবারেই দিবার উপস্থিতি টের পায়নি। দিবার ডাকে হাত থেকে বইটা তার পাশে রেখে বললো-
বাহ! আজ দিবা মনিকে এতো খুশি খুশি লাগছে। ব্যাপারটা কি?
-আমার বফ কি বলেছে জানো ভাবী?
-কি বলেছে?
-ও পরিবার নিয়ে আমার বাসায় প্রস্তাব নিয়ে আসবে।
-কি বলো!
-হুম ভাবী, হুম।
-এটাতো খুব ভালো কথা!
-কিন্তু....
-কি?
-আমার বাসার জন্য ভয় করছে।
-যোগ্য হলে ভয় এর কি আছে! ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
-তুমি আমার পাশে থাকবেতো ভাবী?
-হুম থাকবো।
-তা তোমার বফ এর নাম কি?
-ওর নাম.....
.
ননদ ভাবী মিলে কিসের কথা হচ্ছে?
.
সালেহা চৌধুরী কে রুমের ভেতর আসতে দেখে দিবা চুপ হয়ে যায়। মেহেরীকা দাঁড়িয়ে সালেহা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে-
মা আসুন।
.
তিনি এগিয়ে এসে বিছানার উপর বসতে বসতে বলেন-
বসো, তুমি বসো। বসে বলো কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো তোমাদের।
.
দিবা দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
ইশ! তোমাকে বলা যাবেনা। এসব আমাদের কথা।
-আচ্ছা তাই!
-হুম তাই।
-তাহলে এখন রুম থেকে যা।
-কেনো?
-এখন আমার কথা আছে মেহেরীকার সাথে।
-আমি থাকলে কি অসুবিধা?
-অনেক বেশি অসুবিধা, যাতো এখন।
.
আর কথা না বাড়িয়ে দিবা হেসে চলে যায়।
.
মেহেরীকা মৃদু হেসে বললো-
কি বলবেন মা?
-তোমার বাড়ি ঈদগাহ এর কোন জায়গায়?
.
প্রশ্নটি শুনে মেহেরীকার বুকটা ধুকধুক করে উঠলেও সঠিক জবাব দিয়ে বলে সে-
মেহেরঘোনা।
-বাড়ির নাম?
-জসিম আহম্মেদ এর বাড়ি।
-কার নাম এটা?
-জ্বী আমার বড় আব্বুর। মানে দাদার বাবার।
-ওহ আচ্ছা।
.
কিছুক্ষণ নীরব থেকে ছলছল দৃষ্টিতে সালেহা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা বললো-
আমার বাসায় জানাবেন না প্লিজ আমি এখানে আছি। আমি তাদের কারো সাথে যোগাযোগ করতে চাইনা।
.
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সালেহা চৌধুরী প্রশ্ন করেন-
কিন্তু কেনো?
-সে অনেক কাহিনী। আপনাদের বাসার কোণায় আমাকে একটু জায়গা দিন মা। আমি ওখানে ফিরে যেতে চাইনা। ওরা আমায় খুঁজে পাক এটাও আমি চাইনা।
.
মেহেরীকার অশ্রুসিক্ত নয়নের দিকে তাকিয়ে বুকটা ধুক করে উঠে সালেহা চৌধুরীর।
মেহেরীকার পাশে গিয়ে বসে তিনি বললেন-
তুমি যা বলো তাই হবে। বিনিময়ে একটা কথা রাখতে হবে।
-কি?
-আমার ছেলেটাকে অনেক সুখে রাখতে হবে তোমায়।
.
সালেহা চৌধুরীর কথা শুনে তাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরে মেহেরীকা।
.
এদিকে তাদের কথোপকথন দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে শুনে নেয় সানিয়া।
এতোদিন পর সে একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছে। মেহেরীকা তার বাসায় যোগাযোগ করতে চাইছেনা মানে নিশ্চয় বড় ধরনের ঘাবলা রয়েছে। তার বাসায় সবটা জানিয়ে দিতে হবে মেহেরীকার সম্পর্কে। তারা জানার পর হয়তো মেহেরীকা কে এখান থেকে নিয়ে যাবে। আর একবার মেহেরীকা বিদায় হলেই সানিয়া হবে আদির।
নিজের মনে কথাগুলো ভেবে দুষ্টু একটা হাসি দেয় সানিয়া।
.
.
.
সাদা রঙের একটা কামিজের সাথে লাল উড়না আর প্লাজো পরে তৈরি হয়েছে মেহেরীকা।
ড্রয়িংরুমে এগিয়ে যেতেই উপস্থিত সকলে তাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়।
.
মিলি দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
বাহ মেহেরীকা! তোমাকে আরো কয়েকবার বিয়ে দেওয়া যাবে।
.
মিলির কথায় মেহেরীকা হাসলেও সালেহা চৌধুরী বললেন-
কি আজব কথাবার্তা! আমার ছেলের বউ কে কেনো আবার বিয়ে দিতে হবে!
-না মানে....
-চুপই থাকো তুমি।
সালেহা চৌধুরী, আদির দিকে তাকিয়ে বললেন-
দেখিস! ওকে একদম বিরক্ত করবিনা। হাত ধরে রাখবি সবসময়।
.
বাধ্য ছেলের মতো আদি জবাব দেয়-
আচ্ছা।
-ড্রাইভার গাড়ি চালাবে। তুই ওকে নিয়ে পেছনের সিট এই বসবি।
.
এপর্যায়ে আবার মুখ খুলে মিলি। হাসতে হাসতেই বলে সে-
কি যে বলেন না মা! প্রেম করে বিয়ে করেছে ওরা। আপনি না বললেও মেহেরীকার সঙ্গ ছাড়বেনা আদি। সেতো এমনিতেই বউ পাগলা।
.
মুচকি হেসে সালেহা চৌধুরী বলেন-
এটা অবশ্য ঠিক। তা আদি তোরা কোথায় যাবি ঠিক করেছিস?
-হিমছড়ি।
.
-হিমছড়ি! আমার অনেক বেশি ভালো লাগে। আমায় নিবে তোমাদের সাথে?
.
হঠাৎ ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে সানিয়া এমন একটা বেহায়ার মতো আবদার করে বসায় সালেহা চৌধুরীর মেজাজ উঠে যায় সপ্তমে।
গম্ভীর গলায় তিনি বললেন-
না তোকে নিবেনা। ওরা স্বামী স্ত্রী যাচ্ছে, তুi কি করবি?
-আমি নাহয় দিবাকেও ডাকি? দিবার সাথে থাকবো আমি?
-তুই দিবাকে নিয়ে আর কোথাও যেতে পারিস। কিন্তু হিমছড়ি যাওয়ার কথা আজ ভুলে যা।
.
সালেহা চৌধুরী, আদির উদ্দেশ্যে বললেন-
তোরা আয় বাবা এখন।
.
.
.
-যাবেনা তুমি?
.
বারান্দায় বসে মেহেরীকার ভাবনায় মগ্ন ছিলো রাজীবের মন। মেয়েটা কোথায় আছে, কি করছে ভেবে ভেবে চিন্তায় মাথাটা ব্যথা শুরু করেছে তার।
সুপ্তির করা প্রশ্নে তার চিন্তায় ছেদ পড়লো। ইজি চেয়ারের উপর খানিকটা নড়ে চড়ে বসে সে বললো-
কোথায় যাবো?
-চট্রগ্রাম।
-কেনো?
-তোমার চাকরী......
-করবোনা।
-এতো ভালো চাকরী সহজে আর পাবেনা তুমি।
-আহ সুপ্তি! যাতো এখান থেকে। যখন তখন এসে প্যানপ্যানানি শুরু করিস। ভালো লাগেনা।
-কি ভালো লাগে?
-তুই জানিস আমার কি ভালো লাগে।
-দুনিয়াতে মেয়ের অভাব পড়েছে? ওই মেহেরীকার জন্য নিজের ক্ষতি করতে বসেছো তুমি!
.
সুপ্তির দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় রাজীব বললো-
দুনিয়াতে ছেলের অভাব পড়েছে? তুই কেনো আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছিস?
.
রাজীবের মুখে এমন কথা শুনে থমকে যায় সুপ্তি। এর জবাব তার জানা নেই। তাই আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে সে রাজীবের রুম থেকে।
.
.
.
হিমছড়ি পর্যটক কেন্দ্রে
টিকেট কেটে ভেতরে প্রবেশ করে আদি ও মেহেরীকা।
মেহেরীকাকে চারপাশে চোখ বুলাতে দেখে আদি বলে উঠলো-
আগে কখনো আসোনি এখানে?
-নাহ।
-কি বলো!
-হুম।
-ইনানীতে গিয়েছো?
-নাহ।
-আজ নিয়ে যাবো তোমায়। বেশি না, এখান থেকে ৫কিলোমিটার দূরে।
-হুম।
.
আদির সাথে মেহেরীকা সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায় উপরে উঠার জন্য অনেকগুলা সিড়ি রয়েছে। মনে মনে মেহেরীকা সেগুলো গুনতে শুরু করে।
-কি হলো? চলো?
-এতোগুলা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার কি দরকার!
-আরে উপরে না গেলে বাকি সব কিভাবে দেখবা তুমি?
-কিন্তু.....
-আসো কোলে তুলে নেয় তোমায়।
-নাহ দরকার নেই। আমি পারবো।
.
আদির সাথে উপরে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে মেহেরীকা। কিন্তু কিছুদুর উঠেই হাপিয়ে পড়ে সে।
-কষ্ট হচ্ছে মেহের তোমার?
-হু। কতোটা সিড়ি এখানে?
-প্রায় দুই শতাধিক।
-কি!
-হু। কোলে নেয় তোমায়?
-আমি কি বাচ্চা!
-তুমিতো বুড়িও না। নিতেই পারি।
-আসছে মহাবীর! কোলে নিবে আমাকে.....
-তোমার কি মনেহয় আমি পারবোনা?
-হুম তাই মনেহয়। নিজেতো পড়বা, আমাকেও ফেলবা।
.
কথাটি বলে মেহেরীকা সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
এদিকে পেছন থেকে আদিয়াত বলে উঠে-
একবার কোলে নিয়ে প্রমাণ করতেই দাওনা আমি পারি।
.
.
.
-তোমার ছেলের অফিস একদিনেই শেষ?
.
আমজাদ চৌধুরীর প্রশ্নে মুচকি হেসে সালেহা চৌধুরী বলেন-
যাওয়া যখন শুরু করেছে নিয়মিত যাবে সে। তবে যার জন্য তার এতো উন্নতি তাকে উপহার দেওয়ার প্রয়োজন নয় কি? তাছাড়া সামান্য ঘুরতে পাঠিয়েছি। আমার ওদের হানিমুনে পাঠানো উচিত ছিলো।
.
স্ত্রীর কথা শুনে বিরক্ত মুখে আমজাদ চৌধুরী বলেন-
যেভাবে কথা বলছো যেনো সব স্বাভাবিক ভাবেই হচ্ছে।
-অস্বাভাবিক এর কিছু নেইতো।
-আচ্ছা তাই! তা ওই মেয়ের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করেছো?
-হুম করেছি। কিন্তু তোমায় বলবো না।
-কেনো!
-সে চায়না এখন তার বাসায় কেউ কিছু জানুক।
-সালেহা! মেয়েটা ছেলেমানুষি করছে। তার সাথে তুমিও যোগ দিওনা।
-ওত কিছু আমি জানিনা। যেদিন মেহেরীকা আমায় বলতে বলবে, সেদিনই বলবো আমি।
.
.
.
দুপুরের খাবার শেষে ইনানী সমুদ্র সৈকতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে আদি আর মেহেরীকা।
.
গাড়িতে বসে আছে তারা। কিন্তু দুজনেই নিশ্চুপ। নীরবতা ভেঙ্গে আদি বলে উঠে-
ভালো লেগেছে তোমার?
-হুম অনেক।
-কি বেশি ভালো লেগেছে?
-পাহাড়, ঝর্ণা, জলপ্রপাত সবই ভালো লেগেছে।
-এখানের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কোনটি জানো?
-নাহ।
-জলপ্রপাত। যদিও বর্ষার সময় ছাড়া অন্যান্য আরো সময়ে ঝর্ণার পানি থাকেনা বা শুষ্ক থাকে। তবুও প্রাকৃতিক পরিবেশ হিসেবে হিমছড়ি, পর্যটকদের অনন্য এক আকর্ষণ।
-হুম।
-সিড়ি বেয়ে উঠতে নামতে কষ্ট হয়েছে তাইনা তোমার?
-হয়েছিলো। তবে উঠার পর পাহাড়ের চূড়া থেকে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্র সৈকতটা দেখে নিমিষেই সব ক্লান্তি, কষ্ট চলে গিয়েছিলো। দুর্লভ সে দৃশ্য।
.
আদি মনে মনে বলতে থাকে আসলেই দুর্লভ। মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। তুমি পরিবেশ উপভোগ করছিলে আর আমি তোমার খুশি। সিড়ি বেয়ে উঠে ক্লান্তি ভারাক্রান্ত মুখ নিয়ে চারপাশটা দেখে যখন তোমার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গিয়েছিলো তখন তোমায় প্রকৃতির রানিরর মতোই লেগেছিলো। মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম তোমার দিকে। কিন্তু তুমি তা খেয়ালই করোনি। প্রকৃতির প্রেমে পড়তে ব্যস্ত ছিলে তুমি। আর আমি ব্যস্ত ছিলাম তোমার প্রেমে পড়তে। হুম পড়েছি আমি, প্রেমে পড়েছি। তোমার প্রেমে পড়েছি মেহের। ভালোবেসে আগলে রাখবো তোমায়, যেতে দিবোনা কোথাও।
.
.
.
দিবার রুমে প্রবেশ করে সানিয়া দেখতে পায় সে কানে হেড ফোন গুজে গান শুনছে বিছানার উপরে শুয়ে।
.
সানিয়া তার দিকে এগিয়ে গিয়ে কান থেকে হেড ফোন সরিয়ে বললো-
ওই দিবা?
.
সানিয়ার এমন কাণ্ডে চমকে যায় দিবা। শোয়া থেকে বসতে বসতে বললো-
কি হয়েছে আপু?
-চলনা আমরাও যাই হিমছড়ি।
-এই সময়ে!
-হু। আমার না অনেক ভালো লাগে হিমছড়ি।
-ছোট ভাইয়ারা এখনো হিমছড়ি আছে বলে তোমার মনে হয়? হয়তো আর কোথাও গিয়েছে ওখান থেকে।
-একটা ফোন করে দেখ কোথায় গিয়েছে। আমরা গিয়ে ওদের সারপ্রাইজ দেয়।
-কিন্তু তুমিতো হিমছড়ি যেতে চাইছো।
.
নিজের কথায় নিজেই আটকে যায় সানিয়া। আমতাআমতা করে বলে-
না মানে, আসলে....
-থাক আপি। আমি বুঝতে পেরেছি কেনো যেতে চাইছো তুমি। কিন্তু আমি যাবোনা। স্বামী স্ত্রী ওরা, কি দরকার ওদের বিরক্ত করে! আরেকদিন না হয় সবাই মিলে যাওয়া যাবে কোথাও। ঠিক আছে?
-হুম।
.
.
.
সমুদ্রের কাছাকাছি গিয়ে পা জোড়া ভিজিয়ে চলেছে মেহেরীকা।
তার পাশে গিয়ে আদি বলে উঠে-
ভালো লাগছে?
-হু লাগছে। এখানে দেখছি প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি।
-হুম। অনেকটা সেন্টমার্টিনের মতই। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মত এখানে বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ে না সৈকতের বেলাভূমিতে। অনেকটাই শান্ত প্রকৃতির সৈকত এই ইনানী। জোয়ারের সময় এলে প্রবাল পাথরের দেখা পাওয়া যেতোনা। ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে এই পাথর।
.
আদির কথার পিঠে কোনো কথা না বলে মেহেরীকা আচমকা দৌড়াতে শুরু করে।
আদিও তার পিছে ছুটতে ছুটতে বলে-
এই মেহের? ছুটছো কেনো?
-আমার কি যে ভালো লাগছে আমি বলে বুঝাতে পারবোনা।
.
আদি দ্রুত বেগে মেহেরীকার পাশে গিয়ে তার হাত চেপে নিজের কাছে টেনে এনে তার কোমর চেপে বলে-
এইরকম তিড়িংবিড়িং করছো কেনো? এমনিতে হাটো, লাফালাফি না।
-কেনো?
-ভাটার সময়েই কেবল মাত্র বিশাল এলাকা জুড়ে ভেসে উঠে প্রবাল পাথর। প্রবাল পাথরে লেগে থাকে ধারালো শামুক ঝিনুক। তাই এখানে বেশী লাফালাফি করা বিপদজনক। সেইজন্য লাফালাফি নয়। বুঝেছো?
.
আদির কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মেহেরীকা বললো-
বুঝেছি।
.
মেহেরীকা সামনের দিকে এক পা বাড়াতেই আদি তার হাত ধরে বললো-
মা কিন্তু বলেছেন সবসময় তোমার হাত ধরে রাখতে। এতোক্ষণ মনে ছিলোনা তাই ছাড় পেয়েছো। এখন আর ছাড়ছিনা।
.
কেনো যেনো মেহেরীকা নিজের হাত আদির কাছ থেকে সরাতে চেষ্টা করলো না। আদির হাত ধরেই তার উপভোগ করতে ইচ্ছে করছে প্রকৃতির এই অপরুপ দৃশ্য।
.
মেহেরীকা কে চুপ থাকতে দেখে আদি বলে-
আজ আমার সাথে সূর্যাস্তটাও উপভোগ করবে?
পড়ন্ত বিকেলের শান্ত সাগর তোমার সামনে তুলে ধরবে তার বিশালতা।
.
মেহেরীকা কিছু বলার আগেই পাশ থেকে শুনতে পায় চেঁচামেচির শব্দ। দুজনে দুজনের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায়। কি হয়েছে তা দেখার জন্য পা বাড়ায় ভিড়ের দিকে।
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)