কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ৭)

valobashar golpo,bangla valobashar golpo,valobasar golpo,valobashar golpo bangla,bangla sad valobashar golpo,valobashar kobita valobashar golpo,valobashar kotha,valobashar golpo audio,valobashar golpo voice,valobashar golpo natok,bhalobashar golpo,koster golpo,udash valobasha,sad valobashar golpo,valobashar golpo song,valobashar golpo 2018,valobashar golpo kotha,abegi valobashar golpo,valobashar golpo video

নিজের রুমের মাঝে পায়চারি করছেন আমজাদ
চৌধুরী।
ভেবেছিলেন তার বন্ধু এরশাদের একমাত্র মেয়ে
সানিয়ার সাথে আদির বিয়ে দিয়ে তার একটা গতি
করবেন। কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো! এখন
এরশাদ কে কি জবাব দিবেন তিনি?
আর সানিয়া..... সে এখন এসে দেখলে কি করবে?
বিগড়ে যাবে মেয়েটা। যতটুকু সানিয়াকে চিনেন তিনি
এই অপমান সহ্য করতে পারবেনা সে।

-এতো কি ভাবছো?
.
স্ত্রীর কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বের হন আমজাদ
চৌধুরী।
তার দিকে না তাকিয়ে জবাব দেন-
সেটা জেনে তোমার কি দরকার?
.
সালেহা চৌধুরী তার সামনে গিয়ে হাতদুটো ধরে
বলেন-
এই বুড়ো বয়সে এসে তোমার রাগ ভাঙ্গাতে
হবে আমায়?
.
এই কথাটি শুনে না হেসে পারেননি আমজাদ চৌধুরী।
হাসি থামিয়ে অভিমানী সুরে বলেন-
তুমিতো এই বুড়োকে একা রেখে চলে
যেতে চেয়েছিলে।
-সেটাতো ভয় দেখিয়েছিলাম, আমি জানতাম তুমি
আমায় যেতে দিবেনা।
-কাজটা ভালো করোনি তুমি সালেহা। আদির শাস্তি পাওয়া
উচিত ছিলো। এভাবে বিয়ে করে বউ নিয়ে আসা ওর
উচিত হয়নি। আমাদের সমাজে একটা দাম আছে। মানুষ
শুনলে কি বলবে! আর এরশাদকে কি জবাব দিবো
আমি! ওকে বের করে দেওয়াই উচিত ছিলো।
.
আমজাদ চৌধুরীর হাত ধরে সালেহা চৌধুরী তাকে
নিয়ে বিছানার উপর এসে বসেন।
মৃদু হেসে বলেন-
যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। ওদের বের করে
দিলে কোথায় যাবে বলো?
-কেনো ঘর জামাই হয়ে থাকবে।
-কি করে থাকবে? মেহেরীকা বিয়ের আসর
থেকে পালিয়েছে তোমার ছেলের জন্য।
-মানে!
-মানে মেয়েটা তোমার ছেলের ভরসায় বাড়ি
ছেড়ে পালিয়েছে।
-বাসা কোথায় তার?
-ঈদগাহ।
-বাবা কি করে?
-এতোকিছু জিজ্ঞাসা করিনি।
-কোন ফকিরের মেয়ে নিয়ে এসেছে
দেখো।
-আহ! যে ঘরের হবে হোক এখন সে এই বাড়ির
বউ।
-তোমার বড় ছেলেও নিজের পছন্দে বোকা
একটা মেয়ে বিয়ে করেছে, আর ছোটটা
কোথাকার মেয়ে একটা বিয়ে করে একেবারে
ঘরে নিয়ে উঠেছে। আর কতো কি দেখবো
আল্লাহ্ জানেন।
-বোকা হলেও আমাদের মিলি অনেক ভালো, আর
তুমি দেখিও মেহেরীকাও এই বাড়ির যোগ্য বউ
যেটা সে তোমাকে প্রমাণ দিবে।
-আমি এসব ভাবছিনা। আমি ভাবছি সানিয়ার কথা।
-এতো ভাবার কি আছে? সে কি বাচ্চা?
-ওর স্বভাব তোমার অজানা নয়, বড্ড জেদী
মেয়েটা।
-সত্যি বলতে ওকে আমার ছেলের বউ হিসেবে
পছন্দ ছিলোনা। মেহেরীকা ঠিক আছে।
-এক ঘন্টায় কিভাবে বুঝলে ঠিক আছে?
-তোমাকে বোঝাতে পারবোনা। তুমি এক কাজ
করো, এতো কিছু না ভেবে এরশাদ ভাইকে
ফোন দাও একটা। বুঝিয়ে বলো তাকে। নিশ্চয়
বুঝবেন তিনি।
-হুম তাই করতে হবে।
.
.
.
-শোবে একটু?
.
আদির কথায় মাথা নেড়ে জবাব দেয় মেহেরীকা-
নাহ। সোফায় ঠিক আছি আমি।
-আমার রুমে কিন্তু বড় একটা বারান্দাও আছে। ওই যে
বাথরুমের পাশে।
-ও আচ্ছা।
-মুড অফ?
-এতো বেশি কথা বলেন কেনো আপনি?
ঘুমান না চুপচাপ।
.
মেহেরীকার হঠাৎ এমন ব্যবহারে চমকে যায় আদি।
তার ঘরে এসে তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলছে এই
মেয়ে! সাহস আছে বলতে হবে মেয়ের।
এতো রাতে বাসা থেকে পালানো, অপরিচিত একটা
ছেলের সাথে তার বাসায় যাওয়া, আবার সেই
ছেলের নকল বউ সেজে তার বাসায় আসা যেই
সেই কথা না। প্রচুর সাহস দরকার এতে।
.
ফোনের রিং বেজে উঠে আদির।
হাতে নিয়ে দেখে সিরাজের কল।
-হ্যালো সিরাজ?
-শালা কিছু জানালি না কেনো?
-এখুনি তোর কথা মনে করে ফোন হাতে নিয়েছি।
-চাঁপা মারিসনা আমার সাথে। তোকে আমি হাড়ে হাড়ে
চিনি।
-হুম, তুই না চিনে কে চিনবে?
-পাম্পও মারিস না। ওদিকের কি অবস্থা বল?
-মায়ের জন্য বেঁচে গিয়েছি, বাবা বের হয়ে
যেতে বলেছিলেন। বের করে দিলেতো
তোর ঘাড়ে চাপতাম আবার।
-আল্লাহ্ বাঁচিয়েছে।
-হারামি। বৃষ্টি ভাবী ভালো আছে?
-হুম। সেতো মেহেরীকার সাথে কথা বলার জন্য
ব্যাকুল হয়ে আছে। কই মেহেরীকা?
.
মেহেরীকার দিকে তাকাতেই দেখে সে
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
এতো তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমোতে পারে আদির জানা
ছিলোনা।
এই ঘুমন্ত মায়াবী চেহারাতেই আদি তাকে প্রথম
দেখেছিলো।
মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় এতো সুন্দর লাগে!
.
-কি হলো?
-মেহেরীকা ঘুমিয়ে পড়েছে। উঠলে আমি কল
দিতে বলবো ভাবীকে।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
.
ফোন রেখে আদি মেহেরীকার পাশে যায়।
সোফায় বসে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে
মেহেরীকা।
আদি কি তাকে সেদিনের মতো কোলে নিবে?
বিছানায় শুইয়ে দিবে কি? ঘুম ভাঙলে সে কি মাইন্ড
করবে? হয়তো করবে। কারণ এখুনি সে আদির
সাথে উচ্চ শব্দে কথা বলেছে। কিছু না করাটা
ভালো হবে।
.
.
.
চুলোয় রান্না বসিয়েছে মিলি।
কাটাকুটির কাজ শেষ, রান্নাটা সেরে ফেললেই হয়
এখন।
কাজের মহিলা থাকলেও প্রতিদিনের রান্না মিলি করে।
রান্না করতে বেশ ভালো লাগে তার। আলাদা একটা
ভালো লাগা কাজ করে।
এই রান্না খাইয়ে শ্বশুড়ের মন অনেকটা জয়
করেছিলো মিলি। নাহলে আমজাদ চৌধুরী ছিলেন
একেবারেই প্রেমের বিয়ে বিরোধী।
কম ঝামেলা পহাতে হয়নি আরিফ আর মিলিকে।
২বছর আগে আরিফের সাথে ফেবুতে পরিচয় হয়
মিলির। আস্তে আস্তে কথা বলা, ভালো লাগা, বন্ধু
হওয়া তারপর একসময় দেখা করা।
সেই প্রথম দেখার কথা ভাবলে এখনো বুকটা ধুকধুক
করে উঠে।
মিলি নীল গাউন আর আরিফ নীল শার্ট পরে দেখা
করেছিলো। মিলি তখন ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্রী।
আর আরিফ নতুন নতুন বাবার ব্যবসায় হাত লাগিয়েছিলো।
দেখা হওয়ার পর ফেবু থেকে মোবাইলে অডিও
কলেই বেশি কথা হতো তাদের। দিন যত বাড়ে
আরো আপন হয় তারা। আস্তে আস্তে কথা অডিও
কল থেকে ভিড়িও কলেই বেশি হতো।
মিলি উপলব্ধি করতে পেরেছিলো সে আরিফকে
ভালোবাসে। কিন্তু আরিফ মুখ ফেটে কিছুই
বলতোনা। এতোদিন অপেক্ষা করার কি কোনো
মানে হয়! সাত-পাঁচ না ভেবে মিলি প্রপোজ করে
বসে আরিফকে।
সেইদিন মিলির প্রপোজ পেয়ে আরিফ মেয়ের
মতো বলেছিলো তার ভাবার জন্য কিছুদিন সময়
দরকার।
৪দিন ভেবে আরিফ মিলির প্রস্তাবে রাজি হয়।
.
কলিং বেল এর শব্দ হতেই ভাবনার জগৎ থেকে
বের হয় মিলি।
চুলোর আচ কমিয়ে দিয়ে হন্তদন্ত করে এগিয়ে
যায় সদর দরজার দিকে।
.
.
-সানিয়া, দিবা চলে এসেছো তোমরা?
.
কথার জবাব না দিয়ে সানিয়া বলে-
মিলি ভাবী, আদি এসেছে?
-হুম এসেছে।
-কি! তোমরা কেউ ফোন কেনো দাওনি আমায়?
.
আর ১সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে সানিয়া এগুতে থাকে
আদির রুমের দিকে।
.
সানিয়াকে ওভাবে যেতে দেখে দিবা হেসে মিলির
উদ্দেশ্যে বলে-
দেখেছো ভাবী সানিয়া আপি কেমন আমার ভাইয়া
পাগল!
-পাগল হয়ে লাভ নেই আর।
-মানে?
-তোমার ভাইতো একা আসেনি।
-বুঝলাম না কিছু।
-তোমার ভাই বউ নিয়ে এসেছে।
-কি!
-জ্বী। রুমে আছে এখন। সানিয়া দেখে কি ধামাকা
করে দেখো।
-কি বলছো ভাবী আমার মাথায় কিছু ঢুকছেনা।
-আমি বুয়াকে রান্নাটা দেখতে বলে আসি। তামাশা মিস
করা যাবেনা।
.
.
.
সানিয়া প্রায় ছুটেই এগিয়ে যায় আদির রুমের দিকে।
দরজার পাশে এসে রুমের ভেতর ঢুকে হাঁপাতে
হাঁপাতে বলে -
আদি?
.
আদি রুমের মাঝে পায়চারি করছিলো।
হঠাৎ সানিয়াকে দেখে থমকে যায় সে।
এই সেই সানিয়া.... যার হাত থেকে বাঁচার জন্য তাকে
প্রথমে পালাতে হয়েছে, বাড়ি ছাড়া হতে
হয়েছে। আর এখন সবাইকে মিথ্যে বলে নকল
বউ ঘরে তুলতে হয়েছে।
.
আর কোনো কথা না বলে সানিয়া ছুটে এসে
আকষ্মিকভাবে জড়িয়ে ধরে আদিকে।
সানিয়ার এমন কাণ্ডে আদি কি করবে ভেবে
পাচ্ছেনা।
সানিয়া আরো শক্ত করে আদিকে জড়িয়ে ধরে
বলে-
আদি আদি আদি....
কই ছিলা তুমি? কতোগুলা কথা বলার আছে তোমার
সাথে। এভাবে হবু বউ রেখে কেউ বাইরে বাইরে
টো টো করে?
.
সানিয়ার কথাগুলো শুনে আদি ভয়ে জমে যায়।
আপাতত সানিয়াকে তার ভুত ছাড়া কিছু মনে হচ্ছেনা।
আদিকে চুপ থাকতে দেখে তার কাছ থেকে
নিজেকে সরিয়ে নিয়ে সানিয়া বলে-
সরি, আমার আসলে তোমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরা
ঠিক হয়নি।
-হুম।
-আদি তুমি....
.
সানিয়া কথা বাড়ানোর আগেই চোখ যায় তার সোফায়
ঘুমন্ত অবস্থায় মেহেরীকার দিকে।
এতো সুন্দরী একটা মেয়ে এখানে কি করছে
ভেবে মনে কু ডেকে উঠে সানিয়ার।
আদির দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা
করে-
কে এটা আদি?
.
এতক্ষণে দিবাকে নিয়ে মিলি আদির দরজার পাশে উঁকি
দিতে চলে আসে। পুরো বিষয়টা দিবার মাথার উপর
দিয়ে দিলেও মিলি মজা নিতে প্রস্তুত আছে।
.
-কি হলো আদি? কে এই মেয়েটা?
.
আমতাআমতা করে আদি জবাব দেয়-
ও মেহের।
-নাম জানতে চাইনি আমি আদি। কি সম্পর্ক তোমার
সাথে? এখানে কি করছে?
-ও আমার স্ত্রী।
.
স্ত্রী.....
কথাটি হজম হচ্ছেনা সানিয়ার। আদির স্ত্রী এই মেয়ে
কি করে হবে! যেখানে ওর সাথেই আদির বিয়ে
ঠিক হয়েছে।
ছলছল চোখে আদির দিকে তাকিয়ে সানিয়া বলে-
তোমার কোনো বান্ধবী তাইনা?
মজা নিচ্ছো তুমি আমার সাথে? হুম মজা নিচ্ছো।
.
সানিয়ার অবস্থা দেখে শান্ত গলায় আদি বলে-
দেখো সানিয়া ওর সাথে আমার আগে থেকে
সম্পর্ক ছিলো। তোমার সাথে বিয়েতে আমি মত
দিইনি। কিন্তু বাবা আমাকে জোর করে যার কারণে
মেহের কে বিয়ে করে আমার ঘরে উঠাতে হয়।
.
আদির মুখে এসব কথা শুনে নিজের রাগ সংযত করতে
না পেরে সানিয়া উচ্চ শব্দে বলে উঠে-
তামাশা করো তোমরা আমার সাথে তামাশা!
-আহ সানিয়া! আস্তে কথা বলো। মেহের
ঘুমোচ্ছে।
-আমার কষ্টে বুক ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছে তোমার
সেই খেয়াল নেই ওই মেয়ের ঘুম নষ্ট হবে
সেই খেয়াল তোমার?
.
লম্বা একটা দম ফেলে সানিয়ার হাত ধরে আদি তাকে
টানতে টানতে বলে-
চলো বাইরে চলো। বাইরে কথা হবে।
.
সানিয়া নিজের হাত আদির কাছ থেকে ছাড়িয়ে
মেহেরীকার পাশে গিয়ে বলে-
এই মেয়ে উঠ, কথা আছে তোর সাথে উঠ বলছি।
.
সানিয়ার কাণ্ড দেখে আদির রাগ বাড়তে থাকে।
সে সানিয়ার পাশে এসে বলে-
মেহেরের শরীর ভালোনা সানিয়া। পরে
ডেকো ওকে।
আদিকে একটা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে সানিয়া এক
প্রকার চেঁচিয়ে বলে-
এই মেয়ে তোকে উঠতে বলছি আমি।
.
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলো মেহেরীকা।
এতোক্ষণ কানের পাশে এতো কথা তার ঘুম
ভাঙ্গাতে পারেনি। কিন্তু সানিয়ার শেষের কথাটি এতটাই
তীব্র হয়েছে যে ঘুম না ভেঙ্গে উপায় নেই।
ধীরে ধীরে চোখ খুলে সে দেখতে পায়
একটি মেয়ে তার পাশে রাগী চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে
রয়েছে।
মেহেরীকা চোখ জোড়া কচলাতে কচলাতে
বলে-
কে আপনি?
.
মেহেরীকার কথা শুনে সানিয়ার রাগ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
আচমকা মেহেরীকার হাত ধরে টেনে তাকে
সোফা থেকে তুলে নিজের পাশে দাঁড় করায়।
এদিকে আদি এগিয়ে এসে তাদের পাশে বলে-
সানিয়া ওর হাত ছাড়ো, যা বলার আমায় বলো।
.
আদির কথার জবাব না দিয়ে মেহেরীকার দিকে
রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিতে সানিয়া বলে-
আমি কে? আমার সংসার, আমার আদির রুমে এসে
আমাকে বলছিস আমি কে? তুই কে সেটা বল?
.
পেছন থেকে সালেহা চৌধুরী, দিবা আর মিলির সাথে
রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলেন-
ও হলো এই বাড়ির ছোট বউ।
.
সালেহা চৌধুরীর পাশে গিয়ে সানিয়া বলে-
আন্টি কি বলছেন আপনি? আদির বউ আমার হওয়ার কথা
ছিলো তাইনা?
ওই মেয়ে কিভাবে হবে বলুন?
-তোমার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো। হয়নিতো।
মেহেরীকার সাথেই ওর বিয়ে হয়েছে। আর এই
সত্যিটা তোমায় মানতে হবে।
.
সালেহা চৌধুরীও তার বিপক্ষে! কিচ্ছু কি আর হাতে
নেই তার? যে আদির জন্য নিজেকে পরিবর্তন
করেছে, সেই আদি নাকি অন্য কারো!
তাই যদি হয় তাহলে তাকে ঠকালো হলো
কেনো?
দাঁতে দাঁত চেপে সালেহা চৌধুরীর উদ্দেশ্যে
সানিয়া বলে-
আমাকে ঠকিয়ে এতো সহজে ছাড় পাবেন
ভেবেছেন আপনারা?
.
সবাইকে চুপ দেখে সানিয়ার রাগ আরো বেড়ে
যায়। চেঁচিয়ে বলে উঠে-
মানিনা আমি, এই বিয়ে আমি মানিনা।
.
সালেহা চৌধুরী ধমকের সুরে বলেন-
আস্তে কথা বলো। তোমার চিৎকার, চেঁচামেচি
আমাদের রুম পর্যন্ত যাচ্ছে। শুনেই আমি এসেছি।
বাসায় মুরুব্বি আছে সেই খেয়াল নেই তোমার?
চুপচাপ থাকো, তোমার বাবা আসলে কথা হবে।
এসো এখন।
-আমি আদির রুম ছেড়ে কোথাও যাবোনা।
.
কথাটি শুনে মিলি বলে উঠে-
এই যে সানিয়া বেহায়াপনা করবেনা একদম। আদির রুমে
থাকার অধিকার একমাত্র ওর বউ এর। চলো তুমি।
.
দাঁত-মুখ খেঁচে সানিয়া বলে-
বললামতো আমি যাবোনা। এখানেই থাকবো।
.
সালেহা চৌধুরী শান্ত গলায় বলেন-
দেখো মা জেদ করেনা, আসো। দিবার রুমে
চলো। আমি তোমাকে.....
.
সালেহা চৌধুরীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে
সানিয়া। তিনি কিছু বলছেন বুঝতে পারলেও শুনছেনা
সে কিছুই। সবকিছু ঝাপসা লাগছে তার।
হঠাৎ-ই সানিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সকলের সামনে।
ঘটনার আকষ্মিকতায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।
.
কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে দাঁড়িয়ে থেকে সালেহা চৌধুরী
আদির উদ্দেশ্যে বলেন-
ওকে কোলে নে আদি।
-মানে?
-দেখছিসতো মেয়েটা অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে।
যতই গলাবাজি করি ওর এই অবস্থার জন্য আমরা দায়ী।
-হুম।
-কোলে তুলে দিবার রুমে নিয়ে চল।
পাশেইতো....
-যাচ্ছি।
.
আদি কোলে তুলে সানিয়াকে নিয়ে এগিয়ে যায়
দিবার রুমের দিকে। আদির পিছুপিছু সালেহা চৌধুরী আর
মিলি গেলেও দিবা থেকে যায় আদির রুমে।
মেহেরীকার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার
পাশে এসে বলে-
আমার ভাইয়ার পছন্দ এতো ভালো!
.
দিবার কথায় মৃদু হেসে মেহেরীকা বলে-
কেমন আছো?
-আছি ভালো। ভাবী তুমি কিছু মনে করোনা। সানিয়া
আপি আদি ভাইয়াকে ভালোবাসে তাই একটু পাগলামি
করছে।
-আরে না, ঠিক আছে।
-আচ্ছা তুমি আরাম করো। আমি সানিয়া আপির কাছে যাই।
-হুম।
.
.
.
একটা চায়ের দোকানে বসে আছেন কাসেম
আহম্মেদ। বাসায় বসে বউ এর প্যানপ্যানানি শোনার
চেয়ে এখানে বসে থাকাটায় শ্রেয়।
চায়ের দোকানে কাসেম আহম্মেদ কে বসে
থাকতে দেখে কয়েকজন লোক এসে ভীড়
করে।
একজন তার দিকে তাকিয়ে বলে-
বাসায় বুঝি বউ শান্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা?
.
হঠাৎ এমন প্রশ্নে চমকে যায় কাসেম আহম্মেদ।
শান্ত গলায় বলেন-
চা খেতে এসেছি।
-মেহেরীকা পালায়ছে বলে ঘরের চা খাওয়া বন্ধ
হয়ে গেছে নাকি?
.
কথাটি বলেই হো হো শব্দে হেসে উঠে
সকলে।
হাসি থামিয়ে আবারো কাসেম আহম্মেদ এর
উদ্দেশ্যে বলে-
তোমার মেয়ে কোথায়? বিয়ের আসর ছেড়ে
পালায় কোন ব্যাটার কাছে গেছে?
.
এপর্যায়ে ফুঁসে উঠেন কাসেম আহম্মেদ। অগ্নি
দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন-
আমার মেয়েকে নিয়ে আজেবাজে কথা বলবেনা
কেউ। কারো বিপদে এভাবে হাসি তামাশা করা উচিত না।
তোমাদের ঘরেও মেয়ে আছে। কখন কি হয়ে
যায় কে বলতে পারে!
.
.
.
দরজাটা টেনে দিয়ে বিছানায় এসে বসে
মেহেরীকা। সানিয়া মেয়েটা বোধহয় অনেক
কষ্ট পেয়েছে। পাবেইতো.... তার ভালোবাসার
মানুষ অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে
এসেছে। ভালোবাসা হারানোর কষ্ট আদি না
বুঝলেও সে বুঝে ভালো করে।
রাজীব....
হুম রাজীবকে হারিয়েছে সে। অনেক বেশি
ভালোবাসতো বলে রাজীবের এমন আচরণের
পরেও সে রাজীবকে ভুলতে পারছেনা।
.
মেহেরীকা বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দেয়।
চোখ জোড়া বন্ধ করে আবারো ঘুমানোর
চেষ্টা করে। কিন্তু সানিয়ার এমন ব্যবহার তার মনকে
অস্থির করে তুলেছে। মেয়েটা তার মতো কষ্ট
পাচ্ছে কি? রাজীব যখন তাকে বলেছিলো সে
তাকে নয় অন্য একটা মেয়েকে খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে
করবে তারও অনেক কষ্ট হয়েছিলো।
এতোকিছুর পরেও রাজীবের সাথে কাটানো সময়
এর কথা মনে পড়লে সব রাগ পানি হয়ে যায়, ছুটে
যেতে ইচ্ছে হয় রাজীবের কাছে।
সেইদিনগুলি যদি আবার ফিরে পাওয়া যেতো....!
রাজীবের কথা ভাবতে ভাবতে মেহেরীকা
উল্টাতে থাকে স্মৃতির পাতা।
রাজীবের সাথে যখন তার প্রথম দেখা হয় সেদিন
ছিলো পহেলা বৈশাখ।
.
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)