ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (পর্ব ৪)


আলিনা ভুবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিয়ন্তা।
চোখ বুলিয়ে দেখছে সে পুরো বাড়িটি।
তাদের বাড়ির চেয়েও এই বাড়িটা বেশ বড়সড় দুতলা একটা বাড়ি।
বাড়ির চারপাশটা গাছ-গাছালিতে ভর্তি।
কিছুক্ষণ চারদিক পর্যবেক্ষণ করে সে দরজায় কড়া নাড়লো।
.
একটা ১৩/১৫ বছরের ছেলে দরজা খুলে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে বললো-
কাকে চায়?
-প্রিয়া আপু আছে বাসায়?
-জ্বী।
-উনাকে বলো নিয়ন্তা এসেছে।
-ওহ, আপনি নিয়ন্তা!
.

ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়ন্তা প্রশ্ন করলো-
তুমি আমাকে কিভাবে চেনো?
.
এক গাল হাসি নিয়ে সে জবাব দিলো-
আপার কাছে শুনছিলাম আপনার কথা। আমি রকি। আপার বাসায় থাকি, আপার ছোট ভাইয়ের মতো আমি।
-ওহ। তা তোমার আপা আমার ব্যাপারে কি বলেছে?
-বলছে আপনি ইরফান ভাইয়ের বউ।
-হুম।
-ভেতরে এসে বসেন। আমি আপাকে জানাই আপনি আসছেন।
.
.
রকির কথামতো নিয়ন্তা ড্রয়িংরুমে আসলো।
দেওয়ালের দিকে চোখ দিতেই দেখতে পেলো নানারকমের পেইন্টিং টাঙানো। এসব পেইন্টিং একেবারে মন ছুয়ে যাওয়ার মতোই।
নিয়ন্তা হেটে হেটে দেখতে থাকলো পেইন্টিং গুলো।
.
কিছুক্ষণ পর রকি এসে বললো-
ওসব দেখেই পেট ভরে যায় সবার। নাস্তা করতে দিতে হয়না আর।
.
রকির কথা শুনে দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে নিয়ন্তা বললো-
আমাকে দিতে হবে। নাস্তা খরচ বাঁচাবো না তোমাদের।
.
হালকা হেসে রকি বললো-
উপরের পড়ার ঘরে আপা আছে।
-তোমার আপা এখনো পড়েন?
-পড়েন মানে! ২৪ঘণ্টার মাঝে তারে ২০ঘণ্টায় ওখানে থাকেন তিনি।
-কি বলো!
-হুম। চলেন আমার সাথে।
.
রকির কথামতো তার পিছুপিছু এগুতে থাকলো নিয়ন্তা।
.
.
.
-আপা?
-হুম রকি, ভেতরে আসতে বল নিয়ন্তা কে। তুই আমাদের জন্য চা বানিয়ে রাখ।
-আচ্ছা।
.
নিয়ন্তা ভেতরে প্রবেশ করে বললো-
কেমন আছেন?
-ভালোই। এসোনা? ভেতরে এসে বসো।
.
প্রিয়ার সামনের চেয়ারে এসে বসলো নিয়ন্তা।
.
চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলো সে।
পুরো ঘরটাতেই বই এ ভর্তি।
এক বিন্দু পরিমাণ জায়গা খালি নেই।
এতো কিসের বই এখানে নিয়ন্তার মাথায় আসছেনা।
.
-কি হলো নিয়ন্তা?
-দেখছিলাম।
-কি?
-এতো গুলো বই কেনো?
-পড়ি।
-শখ?
-বলতে পারো এক প্রকার।
-তা তুমি এতো সকালে এখানে?
-কেনো? আসতে পারিনা বুঝি?
-আসার জন্যই ঠিকানা বলেছিলাম। তবে এতো তাড়াতাড়ি সাত সকালে আসবে ভাবিনি।
-তোমার সাথে পরিচিত হতে পারিনি। তাই আজ এলাম।
.
মৃদু হেসে প্রিয়া জিজ্ঞাসা করলো-
ইরফান বলেনি কিছু আমার ব্যাপারে?
.
শান্ত গলায় নিয়ন্তা বললো-
তোমার কাছ থেকেই জানবো বলে এলাম। ওর সাথে সারাদিন অন্য বিষয়ে কথা বলতে বলতেই সময়টা কেটে যায়।
-ওহ। কি জানতে চাও বলো?
-তুমি একা থাকো? মানে রকি ছাড়া কেউ নেই?
-নিচে নিশ্চয় অনেক পেইন্টিং দেখেছো?
-হুম।
-কেমন লেগেছে?
-অনেক ভালো।
-আমার স্বামীর করা এসব।
.
অবাক চোখে তাকিয়ে নিয়ন্তা জিজ্ঞাসা করলো-
তুমি বিবাহিতা?
-পাঁচ বছরের একটা মেয়েও আছে আমার।
-যদিও শাড়ি পরো তবুও দেখলে মনেই হয়না তুমি বিবাহিতা।
.
মুচকি হেসে প্রিয়া বললো-
তাই নাকি!
-হুম।
.
-আম্মু? আসবো?
.
আলিনার গলার আওয়াজ শুনে প্রিয়া বললো-
আসো।
.
আলিনা ভেতরে প্রবেশ করে তার মায়ের কাছে এসে বললো-
আমি তোমার কোলে বসতে পারি?
-হুম বসো।
.
নিয়ন্তার দিকে তাকিয়ে প্রিয়া বললো-
এটা আমার মেয়ে আলিনা। কাল রকি ফোনে জানিয়েছিলো আলিনা হঠাৎ আমায় দেখতে না পেয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। আর তাই ওভাবে তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে হয়েছিলো আমায়। আসলে বলে যাইনিতো আলিনাকে।
-ওহ। আলিনাতো ভারী মিষ্টি মেয়ে। তোমায় খুব মানে বলতে হবে।
-হুম।
-এবার বুঝলাম তোমার বাড়ির নাম আলিনা ভুবন কেনো।
-হুম।
.
.
.
প্রিয়ার কাছে যায়নিতো নিয়ন্তা?
হতেও পারে। কিন্তু কিসের দরকার ছিলো তার!
আর যদি না গিয়ে থাকে এই অচেনা গ্রামের মাঝে কোথায় যেতে পারে সে?
নাহ আর ভাবতে পারছেনা ইরফান। ফোন হাতে নিয়ে ডায়েল করে প্রিয়ার ফোন নাম্বারে।
.
.
.
-আলিনাকে নিয়ে আমার বাসায় কিন্তু একদিন যেতে হবে।
-নিশ্চয় যাবো। পাশেই যেহেতু আছো, আসা যাওয়া লেগে থাকবে।
-কিন্তু তোমার হাসবেন্ড এর সাথে দেখা হলোনা।
.
মুখটা মলিন করে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়া বললো-
সে বাসায় নেই এখন।
-এতো সকালে কোথায় গিয়েছে?
-কাজে।
-ওহ। তোমার হাসবেন্ড আমাকে একটা পেইন্টিং বানিয়ে দেবে?
-কিসের?
-দেখা হলে তাকেই বলবো না হয়?
-তোমার খুশি।
-আজ আসি।
.
.
বেরিয়ে আসার সময় আলিনাকে জড়িয়ে ধরে মুখে একটা চুমু খেলো নিয়ন্তা।
আলিনার চেহারার সাথে ইরার চেহারার অনেকটায় মিল খুঁজে পাচ্ছে নিয়ন্তা।
আসলেই মিল রয়েছে?
নাকি মায়ের মন বলে সব বাচ্চার মাঝেই নিজের ইরাকে দেখতে পাচ্ছে সে? হবে হয়তো।
.
.
.
নিয়ন্তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা প্রায় ১ঘণ্টা হলো।
এদিকে প্রিয়াও ফোন রিসিভ করেনি।
এমন আগে কখনো হয়নি,
ইরফান ফোন করেছে আর প্রিয়া ফোন রিসিভ করেনি। তবে আজ কেনো সে ফোন রিসিভ করলোনা!
ভাবতে ভাবতেই বেজে উঠলো ইরফানের ফোন।
হাতে নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ার ফোন।
সাথে সাথেই রিসিভ করে বললো-
ফোন কেনো রিসিভ করছিলে না?
-আমি যখন নিয়ন্তা কে নিয়ে নিচে নেমেছিলাম তুমি তখনি ফোন দিয়েছিলে। ফোনটা উপরে ছিলো তাই শুনতে পাইনি।
-নিয়ন্তা তোমার ওখানে গিয়েছিলো?
-হুম।
-এখন কোথায়?
-বেরিয়েছে।
.
আম্মু আমিও বাবাই এর সাথে কথা বলবো।
.
আলিনার কথা শুনে প্রিয়া বললো-
পরে বলো আম্মু। আমি কথা বলছি এখন।
.
-আহ প্রিয়া! দাও আলিনাকে ফোনটা।
.
ইরফানের কথায় আলিনার হাতে ফোন দিতেই মুখে হাসি ফুটিয়ে আলিনা বললো-
বাবাই তুমি পঁচা।
-কেনো মা? মায়ের সাথে দেখা করিনা তাই রাগ হয়েছে বুঝি?
-হ্যাঁ।
-আমি আসবো খুব তাড়াতাড়ি।
.
-ইরফান!
.
নিয়ন্তার গলার আওয়াজ শুনে পেছনে ফিরে চমকে যায় ইরফান।
আরো চমকে যায় নিয়ন্তাকে রাগে ফু্ঁসতে দেখে।
এভাবে ফুঁসছে কেনো সে!
.
ইরফান ফোনের লাইনটা কেটে দিয়ে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে বললো-
কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
.
রাগান্বিত কণ্ঠে নিয়ন্তা বললো-
যেখানে গিয়েছিলাম ওখানে না গেলে এতো কিছুতো জানতেই পারতাম না আমি!
.
অবাক চোখে তাকিয়ে ইরফান প্রশ্ন করলো-
কি জেনেছো তুমি?
-কি জেনেছি?
-হুম। কি?
.
প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিয়ন্তা ধীর পায়ে এগিয়ে যেতে থাকলো ইরফানের দিকে।
.
.
.
-বাবাই কথা বলছেনা আম্মু।
.
আলিনার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে প্রিয়া দেখলো লাইন কাটা ফোনের।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে প্রিয়া বললো-
তোমার বাবাই এর ফোনে চার্জ নেই হয়তো। আবার করবে তোমায়।
-ঠিক আছে।
.
ছলছল করছে প্রিয়ার চোখ। কিন্তু আলিনার সামনে শক্ত থাকতে হবে তাকে। খুব শক্ত থাকতে হবে। কিছুতেই দূর্বলতা প্রকাশ করা যাবেনা।
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)

রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (সকল পর্ব ১-২৬)