ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (পর্ব ৭)
-নিয়ন্তা দরজা খুলো?
.
ইরফানের গলার শব্দ শুনে নিয়ন্তা দরজা খুলে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। কিন্তু ইরফান তাকে এক ঝাটকায় নিজের কাছ থেকে সরিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো-
এসব কি করেছো তুমি?
.
অবাক চোখে তাকিয়ে নিয়ন্তা প্রশ্ন করলো-
আমি কি করলাম?
.
-ভাই ইরফান? বাদ দে। আমরা আরেকদিন আসবো।
.
নিয়ন্তা ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো টেবিলের পাশেই ইরফানের কয়েকজন বন্ধু দাঁড়িয়ে রয়েছে।
.
তাদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে নিয়ন্তা জিজ্ঞাসা করলো-
তুমি উনাদের সামনে আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো ইরফান?
.
দাঁতে দাঁত চেপে ইরফান উল্টো প্রশ্ন করলো-
কেনো করছি বুঝছো না তুমি?
-নাহ!
.
ইরফানের গলার শব্দ শুনে নিয়ন্তা দরজা খুলে তার বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। কিন্তু ইরফান তাকে এক ঝাটকায় নিজের কাছ থেকে সরিয়ে রাগান্বিত কণ্ঠে বললো-
এসব কি করেছো তুমি?
.
অবাক চোখে তাকিয়ে নিয়ন্তা প্রশ্ন করলো-
আমি কি করলাম?
.
-ভাই ইরফান? বাদ দে। আমরা আরেকদিন আসবো।
.
নিয়ন্তা ডাইনিং টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো টেবিলের পাশেই ইরফানের কয়েকজন বন্ধু দাঁড়িয়ে রয়েছে।
.
তাদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ইরফানের দিকে তাকিয়ে নিয়ন্তা জিজ্ঞাসা করলো-
তুমি উনাদের সামনে আমার সাথে এমন ব্যবহার করছো কেনো ইরফান?
.
দাঁতে দাঁত চেপে ইরফান উল্টো প্রশ্ন করলো-
কেনো করছি বুঝছো না তুমি?
-নাহ!
.
নিয়ন্তার হাত ধরে টানতে টানতে ইরফান তাকে ডাইনিং টেবিলের পাশে নিয়ে গিয়ে বললো-
এসব কি বলো?
.
ডাইনিং টেবিলে সব খাবার ছড়ানো ছিটানো।
সব খাবারই এঁটো করা। অথচ নিয়ন্তা নিজের মতো করে সুন্দরভাবে সাজিয়েছিলো এসব।
কে করলো এসব? ইরা?
কিন্তু সবার সামনে এখন কিভাবে বলবে এসব সে!
.
-নিয়ন্তা?
.
ইরফানের ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো নিয়ন্তা।
শান্ত গলায় বললো সে-
আমি ভেতরে গিয়েছিলাম। হয়তো কোনো বিড়ালের কাজ এসব।
-বিড়াল এভাবে এঁটো করতে পারে?
-আমি কি জানি!
-তুমি জানোনা? তুমি জানোনা ওরা আসবে আজ? বলেছিলাম তোমায়?
-হুম।
-এতোটা কেয়ারলেস কিভাবে হতে পারলে তুমি! তুমি.....
.
নিয়ন্তাকে আর কিছু না বলে ইরফান তার বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বললো-
চল তোরা? বাইরে খাওয়াবো তোদের।
.
ইরফান তার বন্ধুদের নিয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে।
এদিকে নিয়ন্তা তার পথের দিকে তাকিয়ে কাঁদছে আর মনে মনে বলছে,
এমন ব্যবহার না করলেও পারতো তুমি ইরফান।
.
.
.
বিকাল ৫টা.....
ইরফান বাসায় ফিরেনি। নিয়ন্তার ফোনও রিসিভ করছেনা সে।
এতোটা রেগে গিয়েছে সে!
হয়তো বন্ধুদের কাছে ছোট হয়েছে বলে...
ইরফানের কথা ভাবতে ভাবতে নিয়ন্তার মোবাইলে রিং বেজে উঠলো।
হাতে নিয়ে স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো তার মায়ের ফোন।
আজ মায়ের সাথে স্বাভাবিকভাবেই কথা বলবে।
এমন একটা মানসিকতা নিয়ে সে ফোন রিসিভ করে বললো-
হ্যালো মা?
.
অপাশ থেকে পারভীন কবির গম্ভীর গলায় বললেন-
তোরা বাড়িতে নেই কেনো?
.
মায়ের মুখে এমন একটা কথা শুনে চমকে গেলো নিয়ন্তা।
আমতাআমতা করে উল্টো প্রশ্ন করলো-
তুমি কিভাবে জানো, মা?
-উল্টো প্রশ্ন না করে জবাব দে।
-জবাব দেওয়ার কি আছে! আমি তোমাদের জামাই এর সাথে যেতে পারিনা কোথাও?
বলো পারিনা?
-পারিস।
-তাহলে!
-জামাইকে ফোনটা দে।
-আমরা বিবাহিত। আমাদের জেরা করতে চাইছো তুমি?
-তা না। আমিতো...
-আমরা বেড়াতে এসেছি। ওই গ্রামে নেই এখন। আমরা চাইনা আমাদের কেউ বিরক্ত করুক। নিজেদের কিছুদিন আলাদাভাবে সময় দিতে চাই। বুঝেছো?
-হুম।
-রাখছি।
.
.
ফোন রাখার পরেই পারভীন কবীরের দিকে তাকিয়ে রিজাউল কবীর বললেন-
মুখটা এমন ফ্যাকাসে কেনো দেখাচ্ছে?
-আমার কেনো যেনো হটকা লাগছে।
-কি ব্যাপারে?
-জামাই কোথাও গেলে আমাদের বলে যেতো মানে ফোন দিতো। এমনিতেইও কিছুদিন পরপর খবর নিতো। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে তার কোনো খবরই নেই। ব্যাপারটা কেমন লাগছেনা?
-তুমি একটু বেশিই ভাবছো। মোটেও কেমন না। ইরাকে হারিয়েছে তারা। মন মেজাজ ঠিক করতে বাইরে কোথাও গিয়েছে এতে এতো ভাববার কি আছে! আর এখন জামাই এর মন ভালো নেই। তাই যোগাযোগ করার মন-মানসিকতা নেই হয়তো।
-হুম।
.
স্বামীর কথার সাথে তাল মেলালেও পারভীন কবীরের মন মানছেনা। তার মনে হচ্ছে, কোথাও একটা গণ্ডগোল নিশ্চয় আছে।
.
.
.
বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যে হয়ে গেলো কিন্তু ইরফানের বাসায় আসার নাম নেই।
ফোনটাও বন্ধ তার। হয়তো চার্জ শেষ।
নাকি নিয়ন্তার উপর বিরক্ত হয়ে সে ফোন বন্ধ রেখেছে!
ভাবতে ভাবতেই কলিং বেল এর শব্দ পেলো নিয়ন্তা।
দ্রুতবেগে সে দরজা খুলে দেখতে পেলো প্রিয়াকে।
মৃদু হেসে প্রিয়ার উদ্দেশ্যে বললো-
আপু আসেন।
.
নিয়ন্তার সাথে এগিয়ে ভেতরে এসে সোফায় বসলো প্রিয়া।
সামনে তাকিতে সে প্রশ্ন করলো-
এতো সুন্দর মিষ্টি মেয়েটা কে?
.
নিয়ন্তা সামনে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে প্রিয়ার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
কার কথা বলছো তুমি?
.
নিয়ন্তার কথা শুনে প্রিয়া নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
সামনে তাকিয়ে চোখের চশমাটা ঠিক করতে করতে বললো-
ওই যে দেয়ালে যার ছবি দেখছি। তার কথায় বলছি।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে নিয়ন্তা বললো-
আমার মেয়ে ইরা।
.
খানিকটা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রিয়া বললো-
তোমার মেয়ে! ইরফানতো বলেনি তোমার মেয়ে আছে।
-আছে না, ছিলো।
-হুম।
-একটা এক্সিডেন্ট এ ওর মৃত্যু হয়।
-ওহ! আমি জানতাম না। দুঃখিত।
-ঠিক আছে। আলিনা কোথায়? তাকেও নিয়ে আসতে?
-বলেছিলাম। তার আব্বুকে ছাড়া সে আসতে নারাজ।
-ওহ ভাইয়া আমার আর ইরার একটা ছবি এঁকে দিতে পারবেন?
-কেনো নয়!
-একদিন ভাইয়াকে নিয়ে এসো। আমি ইরার ছবি দেখাবো।
-ঠিক আছে। ইরফান কোথায়?
-বন্ধুদের সাথে বাইরে আছে সে।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ১০টা....
নিয়ন্তার উপরে আজ চরমভাবে মেজাজ খারাপ হয়েছে ইরফানের।
তাই রাতের খাবারও সে বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।
এদিকে যে নিয়ন্তা তার জন্য দুপুর থেকেই না খেয়ে রয়েছে জানা নেই তার।
.
.
বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে ইরফান।
আর কয়েক কদম সামনে এগুলেই তার বাড়ি।
আরেকটু সামনে এগিয়ে ইরফান দেখতে পেলো, একটা ছোট মেয়ে সাদা রঙের ফ্রক পরে তাদের বাড়ির উঠোনে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
ইরফান তার কাছে গিয়ে বললো-
এতো রাতে এখানে কি আম্মু?
তোমার বাসা কই?
.
পেছনে ফেরা ছিলো বলে ইরফান তার চেহারা দেখতে পায়নি। তাই সে বাচ্চাটির কাছে জবাব না পেয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করলো-
এখানে কি আম্মু?
.
ধীরে ধীরে ইরফানের দিকে ফিরতে লাগলো বাচ্চা মেয়েটি।
সে হেসে হেসেই বলতে লাগলো-
তোমার অপেক্ষা করছিলাম আব্বু।
.
ইরাকে দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে যায় ইরফান।
হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে তার। থরথর করে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে কাঁপছে সে।
এই মুহুর্তে কি করা উচিত তার কিছুই বুঝতে পারছেন।
ঠিক তখনি ইরা বলে উঠলো-
ছোট বলে এতো রাতে এখানে থাকতে পারবোনা? বড় হলে পারবোতো?
.
কথাটি বলেই ইরা ধীরেধীরে লম্বা আকারে ধারণ করতে লাগলো।
এমন একটা দৃশ্য দেখে আর স্থীরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলোনা ইরফান।
দৌড়ে বাসার সামনে গিয়ে জোরে জোরে চিৎকার করতে থাকলো সে-
নিয়ন্তা? দরজা খুলো। নিয়ন্তা?
.
নিয়ন্তা দরজা খুলে দিতেই ইরফান তাকে জড়িয়ে ধরে হাঁপাতে লাগলো।
.
আতঙ্কভরা কণ্ঠ নিয়ে ইরফান বললো-
ইরাকে দেখেছি আমি। ইরাকে!
.
ইরফানের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে নিয়ন্তা বললো-
সত্যি?
-হুম।
.
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে নিয়ন্তা বললো-
দেখেছো? ইরা তার বাবাকেও দেখা দিয়েছে।
-নিয়ন্তা তুমি খুশি হয়েছো?
-হ্যাঁ।
.
নিয়ন্তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে ইরফান বললো-
এসব কি স্বাভাবিক নিয়ন্তা?
-অস্বাভাবিক এর কি আছে ইরফান! আমাদের মেয়ে....
.
উচ্চশব্দে ইরফান বলে উঠলো-
চুপ করো। একদম চুপ করো। কোনো ভুত মেয়ে আমার চাইনা।
-ও আমাদের ইরা!
-একটা আত্না ছাড়া কিছুই না ও।
-আমাদের ভালোবাসে বলেই মৃত্যুর পরেও এসেছে।
-তুমি তাকে বলে দিও। আমার সামনে যেনো আর না আসে।
.
কথাটি বলেই ইরফান এগিয়ে গেলো নিজের রুমের দিকে।
.
নিয়ন্তা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো।
ঠিক তখনি শুনতে পেলো ইরার কান্নার শব্দ।
নিয়ন্তা শব্দ শুনে হেটে চলেছে। খুঁজে চলেছে তার মেয়েকে।
হঠাৎ সে বুঝতে পারলো শব্দটি বাড়ির ছাদের উপর থেকে ভেসে আসছে।
তাই নিয়ন্তা সিড়ি বেয়ে এগিয়ে যেতে থাকলো ছাদের দিকে।
.
.
.
নিয়ন্তার ব্যাপারে সবটা জানালেও বাচ্চার কথা কেনো বলেনি ইরফান?
আর নিয়ন্তাকে দেখে মনে হয়নি সে সত্যি কথা বলছে।
তবে কি কিছু লুকোচ্ছে সে?
কোনো রহস্য ঘিরে আছে তার জীবনে?
.
আপনমনে এসব ভেবে চলেছে প্রিয়া।
ঠিক তখনি আলিনা এসে বললো-
আমি একজন খেলার নতুন সাথী পেয়েছি আম্মু!
.
(চলবে)
Comments
Post a Comment