রঙ চা - মাহফুজা মনিরা (পর্ব ৫)


ভোর সকাল। ফজরের আজান পড়বে আর কিছুক্ষণের ভেতরেই। প্রায়াণ ধিমি পায়ে মিনু শেখের রুমে ঢোকে। জালাল শেখ আর মিনু শেখ দুজনেই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। প্রায়াণ এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কেউ তাকে দেখছে কিনা কোথা থেকে। নাহ কেউ নেই,আর থাকবেও না। এত সকালে কেইবা উঠবে তার বাড়ির!
প্রায়াণ সময় নষ্ট করে না। দ্রুত দ্রুত কাজ সাড়ে। প্রথমে বিছানার পাশের ছোট টেবিলের উপর রাখা জগ থেকে সমস্ত পানি নিচে ঢেলে জগ উল্টো করে রাখে। মিনু শেখের বাসায় হাটার জুতা জোড়ার একটা মিনু শেখের সিথানের কাছে রাখে প্রায়াণ। বইয়ের তাক থেকে এক এক করে সব বই নিচে এলোমেলো করে রাখে তবে নিঃশব্দে। জানালার পর্দার বাম পাশ টা ব্লেড দিয়ে একটুখানি কেটে টান মারতেই ফরফর করে ছিড়ে যায়। প্রায়াণ আৎকে উঠে তার বাবা মায়ের দিকে তাকায়। না,তারা এখনো ঘুম। উঠে নি শব্দে। প্রায়াণ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। তারপর চুপ করে বেরিয়ে পড়ে রুম থেকে। আর খানিকবাদেই আজান পড়বে তখন তার মা ও বাবা দুজনেই নামাজের জন্য উঠবে। প্রায়াণ সেই মুহুর্তের অপেক্ষায় থাকে।
.
নিজের রুমে গিয়ে কান খাড়া করে বসে থাকে প্রায়াণ। আজান হয়। ৫ মিনিট কেটে যায়। হঠাৎ ভেসে আসে প্রায়াণের মায়ের চিৎকার। প্রায়াণের মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠে।
.
.
---------প্রত্যুষের বাপ, উঠো না। দেখো কি কান্ড ঘটে গেছে।
জালাল শেখ বউয়ের চেঁচামেচিতে ধড়মড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে।
-------কি হইছে মিনু? সাত সকালে চেঁচাও ক্যান?
মিনু শেখ কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,
--------সামনে তাকাও। রুমের অবস্থা দেখো।
জালাল শেখ আশেপাশে চোখ ঘুরাতেই আৎকে উঠে। রুমের এই যা তা অবস্থা হলো কিভাবে!
মিনু শেখ সিথানের কাছ থেকে জুতা টা নিয়ে বলে,
--------এই দেখো সে এসেছিল আর জুতা টা আমার মাথার কাছে রেখে গেছে।
জালাল শেখ ভ্রু কুঁচকে বলে,
--------কে এসেছিল?
ততক্ষণে প্রত্যুষ, প্রায়াণ, প্রেমা তিনজনেই চলে এসেছে। পিউ উঠেনি। সে ঘুমে কাতর।
প্রেমা এসে চিন্তিত গলায় বলে,
--------কি হইছে আম্মু? চিল্লাইলা ক্যান?
প্রত্যুষ ও উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকে। আর প্রায়াণ এর ভাব খানা এমন যে চেঁচামেচি তে সদ্য ঘুম থেকে উঠায় সে খুব বিরক্ত।
মিনু শেখ সকলকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
-------দেখিস না আমার রুমের অবস্থা!! জ্বীন এসেছিল। জ্বীন। সেই এসব করে গেছে।
প্রেমা ভয়ে আৎকে উঠে। প্রত্যুষ বিরক্ত হয়। এই যুগে এসেও মায়ের এসব অন্ধবিশ্বাস প্রত্যুষের একদম ভালো লাগে না। কিন্তু প্রায়াণ..
সে জ্বীন নাম শুনতেই লাফ দিয়ে খাটের উপর উঠে মিনু শেখ কে জড়িয়ে ধরে।
-------আম্মু তার মানে আমি কোনো মিথ্যা স্বপ্ন দেখি নাই। সে আমার স্বপ্নেও এসেছিল আম্মু।
মিনু শেখ শুকনো ঢোক গিলে। বলে,
-------কে এসেছিল?
-------জানিনা। তবে সে অনেক লম্বা,তার গায়ে কেমন কাপড় জড়ানো। এসে বলছিল তোর ভাইয়ের বিয়ে নিশুতির সাথে দিস না। যদি দিস,তবে অনর্থ হয়ে যাবে। তোদের ঘর,সংসার সব পুড়ে ছারখার করে দিবো আমি।
মিনু শেখ হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন। জালাল শেখ এর গায়ের উপর ঢলে পড়ে বলে,
--------ওগো। এই বিয়ে ক্যান্সেল। অন্য মেয়ে দেখো। নিশুতির সাথে আমার প্রত্যুষের বিয়ে হচ্ছে না।
প্রত্যুষ নিশুতির সাথে তাকে বিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে কিছুই জানতো না। এখন জানতে পেরে বলে,
-------মা,তুমি নিশুতির সাথে আমার বিয়ে ঠিক করছিলা? নিশুতি ঐ ইফতির বোন না? মা আর ইউ ম্যাড?? ওর বয়স কই আর আমার বয়স কই!! ও আমার প্রেমার বয়সী বলতে গেলে। আমি ওকে বোনের চোখে দেখি আর তুমি কীনা!! তোমার জ্বীন কি বলছে কি বলে নাই আই ডোন্ট কেয়ার। বাট এই বিয়ে এমনিতেও হবে না। আমি জীবনেও ওকে বিয়ে করবো না। আন্ডারস্ট্যান্ড??
প্রত্যুষ দরজায় দুটো ঘুষি দিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ভেতরে ভেতরে আক্রোশে ফেটে পড়ছে ও। কেন সবাই ওর বিয়ের পেছনে এত উঠে পড়ে লেগেছে কে জানে!!
.
.
জালাল শেখ চেঁচিয়ে উঠেন।
-------এই দেখলা মিনু,তোমার ছেলে আমাদের উদ্দেশ্য করে কেমনে কথা বইলা গেলো!! এই জন্যেই তোমার এই ছেলেরে আমার ভাল লাগে না। যত বড় হইতেছে দিন দিন,ওত বেয়াদব হচ্ছে।
মিনু শেখ ও কাঁদা থামিয়ে গর্জে উঠেন।
-------ঐ ছেলে ভালা কাম করলে তোমার পোলা,আর খারাপ কাম করলে আমার পোলা?? চুপ একদম চুপ। এমনিতেও বিয়ে টা আর হচ্ছে না।
তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বলে,
--------আপনি যদি আশেপাশে থেকে থাকেন তবে শুনোন,এই বিয়ে হচ্ছে না। আপনার কথাই রইবে।
প্রায়াণ মৃদু হাসে মায়ের পাগলামি দেখে। সে ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছে যে তার মা এসব জ্বীন পরীতে কি পরিমাণ বিশ্বাসী এবং এদের কে কত টা মান্য করে। কেননা তার ভাষ্যমতে জ্বীনের কথা না মানলে তারা বংশ নির বংশ করে দেয়। একবার তো মিনু শেখই সাধ করে ইউরোপ ট্রিপ রেখেছিল পুরো ফ্যামিলি কে নিয়ে ঘুরতে যাবে বলে। কিন্তু প্রায়াণ যেতে চায়নি। তার বন্ধুদের সাথে ট্রিপ ছিল বলে। সেবারও প্রায়াণ এভাবেই জ্বীনের নাটক করে ইউরোপ ট্রিপ ক্যান্সেল করেছিল। এবারও নিশুতিকে তার ভাবী হওয়া থেকে বাঁচালো।
প্রায়াণ মনে মনে নিজেকে বাহবা দেয় তার এসব বুদ্ধির জন্য।
.
.
প্রেমা আর প্রায়াণ একসাথে রুম থেকে বের হয়। প্রেমা বুঝে গেছে এসব কোনো জ্বীন পরীর কারসাজি না। এসব তার গুণধর ভাই প্রায়াণের কাজ। আর কেন করেছে সেটাও সে জানে।
প্রেমা সন্দেহের সুরে বলে,
-------ভাইয়া জ্বীন আংকেল টা তোর স্বপ্নেই এলো ক্যান? আমাদের স্বপ্নে কেন এলো না?
প্রায়াণ থতমত খায়। প্রেমা কিছু বুঝে গেলো না তো!
মুখে প্রসন্ন হাসি হেসে বলে,
---------তোরা তো ছোট,তোদের স্বপ্নে এলে তোরা বেশি ভয় পেতি। তাই আসেনি।
প্রেমা যেন কথাটা বুঝতে পারে ঠিক সেভাবেই মাথা টা নাড়ায়। তারপর বলে,
--------তাহলে প্রত্যুষ ভাইয়ের স্বপ্নে এলো না কেন? সে তো তোমার থেকেও বড়!!
প্রায়াণ এবার কি বলবে ভেবে পায় না। ঈষৎ রাগী গলায় বলে,
-------আমি কেমনে জানমু! সেটা জ্বীন আংকেলই জানে।
প্রেমা স্মিত হেসে বলে,
--------ভাইয়া এবার না হয় নিশুতির বিয়ের প্রস্তাব টা আমাদের বাড়ি থেকে যেতো বলে তুই আটকে দিলি। কিন্তু যখন বাহির থেকে প্রস্তাব আসবে তখন? তখন কি করে আটকাবি?
প্রায়াণ থমকে যায়। দাঁড়িয়ে পড়ে সে। আসলেই তো। এভাবে তো কখনো ভেবে দেখেনি সে।
প্রেমা আবার বলে,
-------আমি জানি তুমি নিশুতিকে পছন্দ করো। আই থিংক ভালোবাসো তুমি ওকে। তাই একটা কথা বলি? যদি সত্যিই ওকে চাও তবে নিজের করে নিও দ্রুত। নয়তো ওর যে মা....ওকে বিয়ে দিয়ে বাসা থেকে তাড়াতে বেশিক্ষণ লাগবে না তার।
প্রায়াণ চুপ করে শুনে প্রেমার কথা গুলো। প্রেমা প্রায়াণের কাধে হাত রেখে বলে,
--------তুমি কি ওকে বলেছো যে ইউ লাভ হার??
প্রায়াণ এদিক ওদিক মাথা দুলিয়ে বলে,
--------নাহ।
--------বলে দিও। নয়তো ও হয়তো জানবেও না কোনোদিন যে ওরই বাসার পাশের কেউ ওর জন্য ভেতরে ভেতরে ধুকে ধুকে মরতেছে।
প্রায়াণ মাথা নিচু করে থাকে।
প্রেমা মুখে দীর্ঘ হাসি টেনে বলে,
--------আমি জানি নিশুতি তোমার হবে ভাইয়া। যদি কোনো হেল্প দরকার হয় আমাকে বলিও। আমি তোমার হেল্প করবো পাক্কা।
প্রায়াণ প্রেমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। মেয়েটা কত বড় হয়ে গিয়েছে!
.
.
সকালের আলো ফুটতেই প্রায়াণ প্রেমা কে পাঠায় নিশুতিকে ডেকে ছাদে নিয়ে আসতে। সে চায়,এখুনি নিশুতিকে নিজের মনের কথা টা বলে দিক।
প্রেমা কে পাঠিয়ে প্রায়াণ ছাদে উঠে। ছাদে উঠতেই চমকে যায় সে। নিশুতি রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে!
প্রায়াণ নিশুতির কাছে যেতেই শোনে, নিশুতি কবিতা আবৃত্তি করছে।
.
আমাকে ভালোবাসতে হবে না
ভালোবাসি বলতে হবে না
মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে
আমার ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে দিতে হবে না
কিংবা আমার জন্য রাত জাগা পাখিও হতে হবে না
অন্য সবার মতো আমার সাথে
রুটিন মেনে দেখা করতে হবে না
কিংবা বিকেল বেলায় ফুচকাও খেতে হবে না
এত অসীম সংখ্যক "না" এর ভীড়ে
শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে
আমি যখন প্রতিদিন একবার "ভালোবাসি" বলবো
তুমি প্রতিবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
একটু খানি আদর মাখা গলায় বলবে "পাগলি"
নিশুতির কবিতা আবৃত্তি শেষ হতেই প্রায়াণ নিচু কণ্ঠে বলে,
---------পাগলি।
নিশুতি চমকে পেছন ঘুরে তাকায়।
হুট করে একফোঁটা শিশির উন্মুক্ত পায়ে লাগলে যেরকম শিরশিরানি অনুভব হয়,সকালের মিষ্টি একফালি রোদ চিড়ে নিশুতিকে পেছনে ফিরে তাকাতে দেখেও প্রায়াণের সেরকম একটা অনুভূতি হয়।
নিশুতি চমকে বলে,
-------ভাইয়া আপনি!!
"ভাইয়া" ডাক শুনে মুহুর্তেই প্রায়াণের সকল অনুভূতি ভেঙে খান খান হয়ে যায়। প্রায়াণ মনে মনে আক্রোশের সুরে বলে,
--------ভাইয়া? এই ডাক টাকে জবাই করা উচিত। খুন করা উচিত। ভাইয়া ডাকের জন্যেই হাজারো তরুণ আজ ভালোবাসাহীন!!
প্রায়াণকে নিচের দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে দেখে নিশুতি আবার বলে,
-------কি ব্যাপার?? কথা বলছেন না কেন?
প্রায়াণ মাথা তুলে তাকিয়ে বলে,
-------নাহ কিছুনা।
-------ওহ। আপনি এখানে?
--------হুম। শীতের সকালের মিষ্টি রোদ খেতে আসলাম। তুমি কেন এলে??
নিশুতি শুকনো মুখে আঙুলের ইশারায় দড়িতে শুকাতে দেওয়া কতগুলো কাপড় দেখায় প্রায়াণ কে।
প্রায়াণ বলে,
-------কাপড় ধুয়ে শুকাতে দিতে এসেছো?
-------জ্বি। ভাবলাম একটু দাড়াই। সারাদিন এমনিতেও বাসায় বসে ভালো লাগে না।
প্রায়াণ এগিয়ে গিয়ে নিশুতির পাশে রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ায়।
শান্ত গলায় বলে,
--------তুমি খুব ভালো কবিতা আবৃত্তি করতে পারো নিশুতি।
নিশুতি আকাশপানে মুখ করে বলে,
--------ধন্যবাদ ভাইয়া।
--------একটা প্রশ্ন করি?
--------জ্বি।
--------কোথাও ঘুরতে বের হয়না?
নিশুতি মুচকি হেসে বলে,
--------নিয়মিত স্কুল যাওয়ার সময় পেতাম না আবার ঘুরতে যাওয়া!! আর আমার এমন কেউ ছিলও না যে ঘুরতে যাবো।
প্রায়াণ অবাক হয়ে বলে,
---------ফ্রেন্ড?
---------তেমন ফ্রেন্ড নেই। সংসারের ঝামেলা পোহাতে পোহাতে ফ্রেন্ডশিপ করার সুযোগ হয়নি এত।
ইতস্তত করে প্রায়াণ বলে,
-------বয়ফ্রেন্ড??
এবার নিশুতি হোহো করে হেসে উঠে।
-------ভাইয়া আমি কাজের জন্য মাঝে মাঝে খাওয়া দাওয়া, গোসল করাও ভুলে যাই! আবার বয়ফ্রেন্ড!! বয়ফ্রেন্ড রাখা একটা প্যারা ভাইয়া। সময় দিতে হয়,তার ইচ্ছেমতোই সব করতে হয়,নিজের জন্য কিছু করা যাবে না! আবার সময় না দিলে কত সমস্যা...এই সেই। সো এসব বিষয়ে আমি ভাবিনি কোনোকিছু ভাইয়া।
প্রায়াণ স্মিত হাসে নিশুতির কথা শুনে।
-------আচ্ছা নিশুতি,একটা প্রশ্ন করি??
-------জ্বি করুন।
প্রায়াণ নিশুতির মুখের দিকা তাকিয়ে বলে,
--------ভালোবাসা সম্পর্কে কি আইডিয়া তোমার??
নিশুতি খানিকক্ষণ তব্ধা মেরে থাকে প্রশ্ন টা শুনে। প্রায়াণ ভাবে এধরণের প্রশ্ন করা ঠিক হয়নি তার। তাই সরি বলতে নেয়। কিন্তু বলার আগেই নিশুতি বলে,
--------ভালোবাসা! ভালোবাসা সম্পর্কে আমার কাছে কোনো আইডিয়া নেই। তবে একটা কথা কি জানেন? ভালোবাসা খুব পাপী একটা জিনিস। একবার যার ঘাড়ে এসে পড়ে,সে চাইতেও এই সম্পর্ক ঠুকড়াতে পারে না। এই যেমন দেখুন না,আমার বাবা মা আমার সাথে এত কিছু করে তবুও আমি তাদের ছেড়ে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবিনা। কারন ঐ যে আমি তাদের ভালোবাসি। আবার দেখুন না,ইফতি আমার সৎ ভাই হয়েও আমাকে কত আগলে রাখে। সাপোর্ট করে। ঐ যে ও আমাকে ভালোবাসে বলে। জানেন ভাইয়া,আজকালের এসব ভালোবাসা আমার কাছে আবেগ ছাড়া কিচ্ছু লাগে না। টাইম দিতে হবে,তাও আবার নিয়ম করে! না হলে রিলেশন ব্রেকাপ!! চৌদ্দ টা ডে পালন করতে হবে। সেই দিনগুলোয় আবার গিফট ও দিতে হবে। নয়তো এরকম বয়ফ্রেন্ড আমার দরকার নেই ভাব থাকে মেয়েদের মধ্যে! আর সবচেয়ে বেশি যেটা সেটা শো অফ! সবাইকে যেন দেখা পারলেই বাঁচে যে আমার উনি আমায় কত্ত ভালোবাসে অথচ ভেতরে ভেতরে কানাকড়িও ভালোবাসা নেই!
ভাইয়া আমার কাছে ভালোবাসা মানে সবার প্রথম একজন অপরজন কে বোঝা, একজন কাঁদলে অপরজনের সকল ব্যস্ততা থামিয়ে তাকে কাছে টেনে নেওয়া। আমার কাছে ভালোবাসা মানে একটা শক্ত কাধ। যার উপর আমার শরীরের সমস্ত ভার রেখে আমি আমার মনের গহীনে থাকা কষ্ট গুলো ব্যক্ত করতে পারবো। আমার কাছে ভালোবাসা মানে,নিয়ম মাফিক সময় দেওয়া না। আমার দুঃখ,সমস্যা সে বুঝবে আর তার টা বুঝবো আমি! আমার কাছে ভালোবাসা মানে কতগুলো দিন হলো রিলেশন এর সেটা না ভাবা,বরং আরো কতগুলো দিন একসাথে থাকা যায় সেটা নিয়ে ভাবা,স্ট্রাগল করা।
প্রায়াণ মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে নিশুতির দিকে। এতদিন নিশুতির নর্মালিটির উপর প্রায়াণ ক্রাশ খেয়েছিল,আর আজ এক নতুন নিশুতির উপর খেলো। কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানেই নিশুতি কত বড় হয়ে গিয়েছে! কত বড় বড় কথা কত অনায়াশে বলে ফেললো!
নিশুতি প্রায়াণের দিকে তাকিয়ে বলে,
-------আচ্ছা আসি ভাইয়া। দেড়ি হয়ে গেলো। বাসায় অনেক কাজ জমে আছে যে।
নিশুতি মিষ্টি হেসে চলে যায়। বিনিময়ে তার যাওয়ার দিকে প্রায়াণ ও মিষ্টি হাসি ছুড়ে দেয়।
.
.
বাসায় ঢুকতেই শারমিন হোসেন চিল্লাফাল্লা শুরু করেন।
-------এই জন্যেই তো বলি ছাদে গেলে আর আসার নাম থাকে না কেন। ঐ ঘরের ছেলের সাথে এত কিসের ভাব তোর হ??? আজ আসুক তোর বাপ। বারবার বলছি ঢেমড়ি মেয়ে,বিয়ে দিয়ে দাও। কিন্তু না,আমার কথা কে শুনে! আজকে আসুক সে।
নিশুতির অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে শারমিন হোসেন এর কথা শুনে।
ইফতিকে ডেকে নিজের রুমে নিয়ে আসে নিশুতি। আতংকিত গলায় বলে,
--------ভাই আম্মু এসব কি বলতেছে? আমি কোথায় কি করলাম.
ইফতি গম্ভীরমুখে বলে,
---------তুই ছাদে দাঁড়িয়ে প্রায়াণ ভাইয়ের সাথে কথা বলতেছিলি? তোর লেইট হচ্ছে দেখে আম্মু উপরে উঠছিল। তোকে আর প্রায়াণ ভাইয়াকে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখছে সে।
নিশুতি ধপ করে বিছানার উপর বসে পড়ে। দুর্বল গলায় বলে,
-------তার সাথে আমার কিছু নেই। আমি তাকে ডাকিও নি। সেই এসেছিল ছাদে হুট করে। আর আমরা জাস্ট এমনিই কথা বলছিলাম। স্পেশাল কিছু না ইফতি। বিশ্বাস কর।
ইফতি নিশুতির পাশে বসে বলে,
--------আমি জানি। আমি তোকে বিশ্বাস করি বোন। কিন্তু আম্মু তো করবে না। আব্বুও করবে না।
নিশুতি ইফতির হাত ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।
--------আমার খুব ভয় করছে ইফতি। আজকে আব্বু আসলে না জানি কি কি কথা রটাবে আমার নামে আম্মু!
চলবে.....

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)