কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ৮)

valobashar golpo,bangla valobashar golpo,valobasar golpo,valobashar golpo bangla,bangla sad valobashar golpo,valobashar kobita valobashar golpo,valobashar kotha,valobashar golpo audio,valobashar golpo voice,valobashar golpo natok,bhalobashar golpo,koster golpo,udash valobasha,sad valobashar golpo,valobashar golpo song,valobashar golpo 2018,valobashar golpo kotha,abegi valobashar golpo,valobashar golpo video

লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পরে বান্ধবী আনিকার সাথে
ঈদগাহ বৈশাখী মেলায় এসেছিলো মেহেরীকা।
জমজমাট মেলা হয়েছিলো সেইবার।
আর ওখানেই প্রথম তার সাথে দেখা হয় রাজীবের।
খুব বেশি সময় আগের কথা নয় এসব। দুই বছর
আগের কথা।
সেই বৈশাখী মেলায় আনিকার বফ এসেছিলো।
আর তার সাথেই আসে রাজীব।
আনিকা তার বফ এর সাথে কিছু সময় একা কাটানোর জন্য
মেহেরীকা কে রাজীবের সাথে থাকতে
বলেছিলো।
আর তখন-ই রাজীব আর মেহেরীকার প্রথম কথা
হয়।

.
-আপনার নামটা জানতে পারি?
-জ্বী, মেহেরীকা।
-অনেক সুন্দর নাম।
-ধন্যবাদ।
-আমার নাম জিজ্ঞাসা করবেন না?
-হুম বলেন?
-রাজীব।
-ওহ।
-পড়াশোনা করেন?
-হুম। অনার্স ১ম বর্ষে।
-আমার ছোট অনেক। তুমি করেই বলি?
-আচ্ছা।
-তোমার বাসা ঈদগাহ তেই?
-হুম।
-আমারো।
-ওহ।
.
.
এভাবে আর কতক্ষণ প্রশ্ন করতে ভালো লাগে!
একটু মন খুলে কথা বললে কি হয়! মেয়েটা লজ্জা
পাচ্ছে নাকি রাজীবের সাথে কথা বলার ইচ্ছে নেই
তার? কিন্তু তারতো ইচ্ছে হচ্ছে মেহেরীকার
সাথে অনবরত কথা বলতে, তার কথা শুনতে। প্রথম
দেখাতেই অনেকখানি ভালো লাগা কাজ করছে
মেহেরীকার জন্য।
সে কি মেহেরীকাকে প্রথম দেখায়
ভালোবেসে ফেলেছে? হয়তো হ্যাঁ।
বাসতেই পারে, সমস্যা কি!
উহু না, সমস্যা আছে। শুধু সে ভালোবাসলে হবেনা,
মেহেরীকারও বাসতে হবে। নাহলে তাকে আপন
করে পাবে কি করে?
আপনমনে এসব ভেবে মেহেরীকার দিকে
তাকিয়ে রাজীব বলে-
তোমার কি আমার সাথে কথা বলতে ভালো
লাগছেনা?
.
হুম লাগছেনা। এভাবে শাড়ি পরে অপরিচিত একটা
ছেলের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলতে কি ভালো
লাগে! একদম না। উফ্ফ আনিকাটা তাকে কোন
ঝামেলায় ফেলে চলে গিয়েছে!
কথাগুলি রাজীবকে শোনানোর ইচ্ছে থাকলেও না
শুনিয়ে মুখে অনেক কষ্টে হাসি এনে
মেহেরীকা বলে-
নাহ তা না। আপনি বলুন না, আমি শুনছি।
.
.
মেহেরীকার হাসি দেখে রাজীব প্রায় মাতাল
হওয়ার অবস্থা। তার ইচ্ছে করছে এখুনি
মেহেরীকার সাথে হারিয়ে যেতে। এতো
সুন্দর মিষ্টি হাসি কোনো মেয়ের হতে পারে তার
জানা ছিলোনা। নাহ কিছুতেই এই মেয়েকে আর
কারো হতে দিতে পারেনা সে, নিজের করে
রেখে দিবে আজীবনের জন্য।
.
মৃদু হেসে রাজীব বলে-
চলো না? হাটি? একজায়গায় এভাবে দাঁড়াতে ভালো
লাগছেনা।
-কিন্তু আনিকা?
-ফোন আছেতো। কল দিবে।
-ঠিক আছে।
.
.
মেহেরীকার পাশে হেটে চলেছে রাজীব।
অনেক মানুষের ভীড় থাকায় মেহেরীকার খুব
পাশে হাঁটার সুযোগ পেয়েছে সে। মাঝে মাঝে
হাতের সাথে হাত লাগছে দুজনের। রাজীবের
ইচ্ছে হচ্ছে এভাবে নয়, মেহেরীকার একটা হাত
নিজের হাতের মাঝে নিয়ে অনেক দূরে হারিয়ে
যেতে।
.
কিছুদূর হেটে রাজীবের চোখ যায় তাজা
গোলাপের দিকে। একটা পিচ্চি ছেলে ফুলের
দোকানে বিক্রি করছে।
রাজীব হঠাৎ মেহেরীকার হাত ধরে তাকে টানতে
টানতে বলে-
তাড়াতাড়ি আসো আমার সাথে।
.
আচমকা রাজীবের এমন কান্ডে হতভম্ব হয়ে যায়
মেহেরীকা।
বিরক্তি নিয়ে তাকায় রাজীবের দিকে।
এতক্ষণ এক সাথে থাকলেও রাজীবের দিকে
তাকায়কি মেহেরীকা। কিন্তু এখন তার দিকে তাকিয়ে
মুখের ভাষা হারিয়ে যায় মেহেরীকার।
শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি,
চুলগুলো কোঁকড়ানো সবমিলিয়ে মায়াবী চেহারার
একটা ছেলে। অনেক ছেলেই সে
দেখেছে কিন্তু মায়াবী চেহারার ছেলে এই
প্রথম দেখছে সে। হাত ধরার জন্য কয়েকটা কথা
শোনানোর ইচ্ছে থাকলেও রাজীবের চেহারার
দিকে তাকিয়ে সেই ইচ্ছে মরে যায়
মেহেরীকার।
.
.
মেহেরীকার হাত ধরে তাকে নিয়ে ফুলের
দোকান টাই আসে রাজীব।
হাতে কয়েকটা গোলাপ ফুল নিয়ে মেহেরীকার
পেছনে গিয়ে তার খোঁপায় গুঁজে দিতে থাকে
সেগুলো।
তাড়াতাড়ি করে দোকানের দিকে আসায় হাঁপিয়ে
উঠে রাজীব। খোঁপায় ফুল গুজার সময় তার নিঃশ্বাস গুলি
মেহেরীকার ঘাড়ে এসে পড়ছিলো।
এক একটা নিঃশ্বাস মেহেরীকার ঘাড়ে পড়লেও তার
মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে, সারা শরীর শিহরিত হয়ে
যাচ্ছে। এ কেমন অদ্ভুদ অনুভূতি! এ কেমন ভালো
লাগা!
.
খোঁপায় ফুল গুঁজে মেহেরীকার সম্মুখে গিয়ে
রাজীব বলে-
এতো সুন্দর খোঁপায় ফুল না থাকলে কি হয়
মেহের?
.
মুচকি হেসে মেহেরীকা বলে-
মেহের?
.
একহাত দিয়ে নিজের মাথায় নিজে একটা বাড়ি দিয়ে
রাজীব বলে-
মেহেরীকা হবে মেহেরীকা।
-হু।
-কিন্তু আমি কি মেহের বলতে পারি?
-উম্ম.... মন্দ না, বলতে পারেন।
-ধন্যবাদ।
-ধন্যবাদ আপনাকে।
-কেনো?
-ফুল উপহার দেওয়ার জন্য।
-খুশি হয়েছো তুমি?
-হুম।
.
রাজীব পকেট থেকে ৫০০টাকার একটা নোট বের
করে দোকানে বসা পিচ্চিটার হাতে দিয়ে বলে-
এই পুচকে? এই টাকা থেকে ফুলের দাম বাদে যা
থাকে সব তোর। মেলা থেকে কিছু কিনিস।
-আইচ্ছা ভাইয়া। এক্কান কথা জিগায়?
-হুম বল।
-এই পরীর মতন আপা তোমার বউ?
.
ছোট ছেলেটার মুখে এমন কথা শুনে লজ্জায় মুখ
লাল হয়ে যায় মেহেরীকার।
মেহেরীকার মুখের দিকে তাকিয়ে রাজীব
পিচ্চিটার উদ্দেশ্যে বলে-
সেই সৌভাগ্য হয়নিরে। তবে হ্যাঁ দোয়া করিস এমন
পরীর মত একটা বউ যেনো পাই।
-আইচ্ছা।
.
.
দোকান থেকে কিছুদূর এগিয়ে যেতেই
মেহেরীকা বলে-
পিচ্চিকে এত টাকা দিয়েছেন কেনো?
-কারণ ও পুরো মেলার মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর
জিনিসটা বিক্রি করছে।
-আপনি খুব মজার মানুষ।
.
মেহেরীকার কথার জবাব না দিয়ে সামনে তাকিয়ে
রাজীব বলে-
নাগরদোলা চড়বা?
.
আতঙ্কিত মুখে তার দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা
বলে-
নাহ।
-কেনো?
-আমার ভয় করে।
.
মেহেরীকার মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে
হেসে দেয় রাজীব।
রাজীবকে হাসতে দেখে বলে সে-
হাসির কি আছে?
-তোমার চাঁদ মুখখানা নাগরদোলার কথার শুনে এমন
ফ্যাকাসে হয়ে যাবে আমার জানা ছিলোনা।
-আমার খুব ভয় লাগে।
-কেটে যাবে।
-কি?
-ভয় কেটে যাবে।
-মানে?
-আজ আমার সাথে চড়বা তুমি, একটুও ভয় করবেনা
তোমার।
-ইন্না। আমি চড়বোনা।
-প্লিজ মেহের?
.
মেহের....
রাজীব তাকে মেহের নামে ডাকলে এতো
কেনো ভালো লাগা কাজ করছে তার মাঝে?
মেহের ডেকে রাজীব তাকে এখন দূরে
কোথাও হারিয়ে যেতে বললেও সে কি রাজী
হয়ে যাবে? হয়তো হ্যাঁ। এসব ভেবে নিজের
মনে হেসে চলেছে মেহের।
.
-কি হলো চড়বা না?
-চড়বো।
.
.
নাগরদোলায় পাশাপাশি বসেছে মেহেরীকা আর
রাজীব।
মেহেরীকার ভয় লাগলেও মনের মাঝে ভালো
লাগাও কাজ করছে। প্রায় ৫বছর পরে সে আবার
নাগরদোলায় উঠেছে। ভয় লাগে তার, মাথা ঘুরানো
যার কারণে চড়া হয়না।
নাগরদোলা যখন ঘুরতে শুরু করে মেহেরীকা
রাজীবের শার্ট এর কোলার চেপে ধরে বলে-
প্লিজ প্লিজ প্লিজ থামাতে বলুন এটা, আমার খুব ভয়
করছে।
.
মেহেরীকাদের সামনে দুটো বাচ্চা মেয়ে
বসেছে।
তাদের দিকে তাকিয়ে হেসে রাজীব বলে-
কি ভীতু তুমি মেহের! এই দেখো এই পিচ্চি
মেয়ে দুটি কোনো ভয় পাচ্ছেনা।
-আমি এতো কিছু জানিনা, আমার খুব ভয় করছে।
.
রাজীব খেয়াল করে মেহেরীকা তার শরীরের
সাথে ঘেষে বসে প্রায় জড়িয়ে ধরে একহাত
দিয়ে তার কলার চেপে ধরেছে, মেহেরীকার
চোখ দুটো বন্ধ। ভয় ভয় চেহারাতে আরো
বেশি সুন্দর লাগছে মেহেরীকাকে।
রাজীব তার হাতের উপর হাত রেখে বলে-
এখন আর ভয় করবেনা মেহের।
.
আসলেই....
আসলেই মেহরীকার আর ভয় করছেনা। যার
কারণে এই প্রথম সে একটানা ৫বার নাগরদোলা
চড়েছে রাজীবের সাথে।
.
.
নাগরদোলা থেকে নামতেই ফোন আসে
রাজীবের।
-হ্যালো?
-রাজীব তোরা কোথায়?
-মেলায় আছি।
-আমি আর আনিকা মেলার মেইন গেইট এ আছি।
মেহেরীকাকে নিয়ে চলে আয়।
-তোরা আরো সময় কাটাতে পারিস।
-আরেনা, আনিকার বাসায় যেতে হবে।
-আচ্ছা আমরা আসছি।
.
.
ধ্যাত মাত্র মেহেরীকার সাথে ঘনিষ্ঠ হচ্ছিলো
সে। আর এখুনি ব্যাঘাত ঘটতে হলো। কি হতো
আরেকটু পরে বাসায় গেলে? এসব ভেবে
রাজীবের মনটা খারাপ হয়ে যায়।
.
-ধন্যবাদ আপনাকে।
-কেনো?
-ভয় কাটানোর জন্য।
-ওহ। তোমাকে ভেবেছিলাম আমি দেমাগি মেয়ে
কিন্তু তুমি দেখি অনেক মিশুক।
-যাকে ভালো লাগে তার সাথে মিশি।
-তার মানে আমায় ভালো লেগেছে তোমার?
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মেহেরীকা বলে-
না লাগার কারণ নেই।
.
.
.
ঘড়িতে সময় রাত ২টা।
মেহেরীকার চোখে ঘুম নেই।
নির্ঘুম থেকে রাজীবের কথা ভাবতে ইচ্ছে
করছে তার। কিছুসময় এর পরিচয়ে কাউকে এতোটা
ভালো লাগতে পারে জানা ছিলোনা মেহেরীকার।
আচ্ছা রাজীবেরও কি তাকে ভালো লেগেছে?
যদি লাগে তাহলে কিছু বলেনি কেনো? অবশ্য
সে নিজেও কিছু বলেনি। কিন্তু রাজীবের বোঝার
উচিত ছিলো, সে মেয়ে হয়ে কিভাবে বলবে!
ছেলের থেকেই বলতে হয়।
এসব ভেবে নিজের মনে হেসে চলেছে
মেহেরীকা। কি আবুলতাবুল ভাবছে সে! কি বলবে
রাজীব? সে বা রাজীবকে কি বলবে?
ঘোড়ার ডিম। নাহ নামাতে হবে, রাজীব নামের ভুত
মাথা থেকে নামাতে হবে।
.
.
.
সকাল ৯টা।
রাজীবের মা কুনসুম হক এসে দেখেন তার
ছেলে এখনো ঘুমোচ্ছে।
-রাজীব? এখনো ঘুমোচ্ছিস তুই! উঠ বলছি।
-উহু মেহের! আরেকটু ঘুমোতে দাও।
-মেহের! কে এই মেহের??
.
এইরে! কি বলে ফেলেছে সে! জ্বীভে
কামড় দিয়ে এক লাফে বসে পড়ে রাজীব।
আড়চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
নতুন একটা নাটক দেখেছিলাম আম্মা, ওখানের নায়িকার
নাম মেহের।
.
ছেলের দিকে তাকিয়ে কুনসুম হক বলেন-
আচ্ছা তাই! তা নায়কের নাম বুঝি রাজীব ছিলো?
.
কথাটি শুনেই লজ্জায় মাথা নিচু করে রাখে রাজীব।
ছেলের পাশে কুনসুম হক বসে বলেন-
কে এই মেয়েটা?
-কোন মেয়ে?
-ভণিতা না করে বলবি?
.
রাজীবের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে
কুনসুম হক বলেন-
ঠিক আছে বলিস না, আমি গেলাম।
.
কথাটি বলেই কুনসুম হক বিছানা ছেড়ে উঠতে চায় আর
ঠিক তখনি রাজীব তার হাত ধরে বলে-
আমি ভালোবাসি ওকে।
.
.
.
বিকালে উঠানে বসে ভাইবোনদের সাথে খুনসুটি
করছে মেহেরীকা।
হঠাৎ সদর দরজার দিকে চোখ যেতেই চমকে যায়
সে। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে রাজীব, সাথে
একজন বয়স্ক মহিলা দেখা যাচ্ছে। দরজা খোলা থাকায়
মেহেরীকা তাদের স্পষ্ট দেখতে পায়।
তাদের দেখে মেহেরীকা এগিয়ে যায় সদর
দরজার দিকে।
-আপনি?
-দুঃখিত মেহের। এভাবে তোমাকে না জানিয়ে আসা
আমার উচিত হয়নি।
-কিন্তু আপনি এখানে কেনো?
-আমার মা তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে
এসেছেন।
.
আর কোনো কথা না বলে কুনসুম হকের পাশে
গিয়ে মেহেরীকা তাকে পায়ে ধরে সালাম করে
বলে-
ভালো আছেন আন্টি?
-হ্যাঁ, তুমি ভালো আছো?
-জ্বী ভালো আছি। আসুন না। মা ভেতরে আছেন।
.
কুনসুম হক মেহেরীকার সাথে ভেতরে ঢুকেন।
চোখ মুনিয়াদের দিকে যেতেই তিনি জিজ্ঞাসা
করেন-
এরা কারা?
-আমার ভাইবোন।
.
ভাই! মেহেরীকার তুলনায় তার ভাইকে বেশ ছোট
লাগছে। ২/৩ বছরের একটা ছেলে মেহেরীকার
ভাই কি করে হয় কুনসুম হকের মাথায় আসছেনা।
কুনসুম হক মেহেরীকার সাথে ড্রয়িংরুমে এসে
বসতেই সেখানে প্রবেশ করেন মেহেরীকার
মা রেশমা আহম্মেদ।
তাদের দেখেই রেশমা আহম্মেদ বলেন-
কে আপনারা? কি চায়?
.
মেহমানের সাথে এমন ব্যবহার মানুষ করে জানা
ছিলো কুনসুম হকের। শান্ত গলায় জবাব দেন-
আমরা আসলে মেহেরীকার মা বাবার সাথে কথা
বলতে এসেছিলাম।
.
বাইরে থেকে বাসায় ঢুকে কাসেম আহম্মেদ
তাদের উদ্দেশ্যে বলেন-
আসসালামুআলাইকুম। আমি মেহেরীকার বাবা। বাসার
পাশেই আমার দোকান। আপনাদের বাসার ভেতর
ঢুকতে দেখে আসলাম। কিন্তু আপনাদের চিনলাম না।
কোনো দরকারে এসেছেন কি?
-জ্বী।
-বসুন না আপনারা।
.
সোফায় কুনসুম হক বসতে বসতে মেহেরীকার
উদ্দেশ্যে বলেন-
মা তুমি ভেতরে যাও। তোমার বাবা মায়ের সাথে কথা
আছে আমার।
-জ্বী।
.
রেশমা আহম্মেদ ও তাদের পাশে এসে বসেন।
ভ্রু কুচকে বলেন-
আমি ওর মা। এখন আপনি
আগে পরিচয়টা দেন। তারপর অন্য কথা। আজকাল
যেভাবে চোর ডাকাতের সংখ্যা বাড়ছে, ভালো
মানুষ সেজে ঘরে ঢুকে ডাকাতি করে এখন।
.
কথাটি শুনে কাসেম আহম্মেদ বলে উঠেন-
আহ রেশমা! যা বলতে এসেছেন, বলতে দাও
উনাদের।
.
রেশমা আহম্মেদ এর কথা গুরুত্ব না দিয়ে কুনসুম হক
বলেন-
আমাদের বাড়ি আপনাদের পাশের এলাকায়। আমার
স্বামী সরকারী চাকরিজীবী।
আসলে আপনার মেয়েকে আমার ছেলের
পছন্দ হয়েছে।
ও মেহেরীকাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু আমার
ছেলে মাস্টার্স করছে এখন। মাস্টার্স শেষ হলেই
সেও চাকরী করবে। ততদিন যদি আপনারা
মেহেরীকার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক না
করতেন?
.
কাসেম আহম্মেদ কিছু বলার আগেই রেশমা
আহম্মেদ বলেন-
পাত্র কি এটা?
-জ্বী।
-কি যুগ আসছে! লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে
ছেলেকে নিয়ে চলে আসছে! আমরা কি বলছিলাম
মেয়ে বিয়ে দেবো?
.
কাসেম আহম্মেদ বিরক্তি মুখে বলেন-
রেশমা তুমি ভেতরে গিয়ে উনাদের জন্য চা নাস্তার
ব্যবস্থা করো।
-কিন্তু..
-যাও ভেতরে।
.
রেশমা আহম্মেদ ভেতরে যেতেই কাসেম
আহম্মেদ বলেন-
কিছু মনে করবেন না ওর কথাই।
-নাহ ঠিক আছে।
-আসলে আপনারাদের কিছু কথা জানা দরকার।
-জ্বী বলুন।
-মেহেরীকার যখন এস.এস.সি পরীক্ষা শেষ হয়
ক্যান্সারে ওর মা মারা যায়। এখন যাকে দেখছেন সে
আমার দ্বিতীয় স্ত্রী।
.
এখন বুঝেছেন কুনসুম হক কেনো
মেহেরীকার ভাই তার তুলনায় এতো ছোট।
.
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাসেম আহম্মেদ
আরো বলেন-
ওর মায়ের চিকিৎসার পেছনে অনেক টাকা খরচ হয়ে
যায়। বর্তমানে আমি বাসার পাশে মুদি দোকান দিয়ে
সংসার খরচ চালাচ্ছি।
মেহেরীকা আমার মেয়ে বলে বলছিনা। খুব
ভালো মেয়ে সে। মেহেরীকা আর মুনিয়া আমার
প্রথম স্ত্রীর সন্তান। ছোট একটা ছেলে আছে
আমার, নাম মিন্টু। ওদের নিয়ে কোনমতে দিন
কেটে যাচ্ছে আমার। সব কিছু জানার পর যদি আপনার
ভালো লাগে জানাবেন। তারপর না হয় মেহেরীকার
সাথে কথা বলা যাবে।
.
ভেবেছিলো ভালো কোনো পরিবারে একমাত্র
ছেলের বিয়ে দিবেন কুনসুম হক। কিন্তু এখানে
একেতো অভাবী তার উপর সৎ মা। মনটায় খারাপ
হয়ে যায় তার।
ফ্যাকাসে মুখ নিয়ে কাসেম আহম্মেদ এর
উদ্দেশ্যে বলেন-
জ্বী, আমরা আজ আসি।
-এভাবে খালি মুখে যাবেন না প্লিজ।
-আরেকদিন আসবো, আজ উঠি।
.
.
মেহেরীকার রুমে গিয়ে রেশমা আহম্মেদ
বলেন-
ওই ছেলের সাথে প্রেম পিরিত চলে তাইনা
তোমার?
-কোন ছেলে?
-যে মা নিয়ে আসছে।
-নাহ।
-তাহলে মা নিয়া বিয়ের প্রস্তাব কেন দিতে আসছে?
.
বিয়ের প্রস্তাব!! কথাটি শুনে চমকে যায়
মেহেরীকা। রাজীবের বউ হবে সে? এটা কি
স্বপ্ন নাকি সত্যি? এতো তাড়াতাড়ি এটা কি করে সম্ভব!
.
মেহেরীকার কাছ থেকে কোনো জবাব না
পেয়ে রেশমা আহম্মেদ বলেন-
কি হলো কথা বলিস না কেন?
.
কিছু না বলে ছুটে যায় মেহেরীকা ড্রয়িংরুমে।
কিন্তু সেখানে তার বাবাকে ছাড়া কাউকে দেখতে না
পেয়ে বলে-
উনারা কোথায় বাবা?
-চলে গিয়েছেন।
-ওহ। কেনো এসেছিলেন?
-তোর জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন।
কিন্তু আমাদের পরিবারের অবস্থা আর তোর মা নেই
জেনে কিছু না জানিয়ে চলে গিয়েছেন।
.
স্বপ্ন দেখার আগেই ভঙ্গ হলো মেহেরীকার।
তাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের
এমন উদাসীন স্বপ্ন দেখা আসলেই উচিত নয়।
হতাশ হয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়
মেহেরীকা।
কিন্তু কাসেম আহম্মেদ এর ডাকে দাঁড়িয়ে পড়ে
সে।
-ছেলেটাকে চিনিস?
-আনিকার সাথে বৈশাখি মেলায় গিয়েছিলাম কাল। ওখানে
পরিচয়।
-ওহ। ভালো লেগেছে?
.
চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে
মেহেরীকা।
চুপ করে থাকা সম্মতির লক্ষণ এমনটাই জানেন কাসেম
আহম্মেদ।
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলেন-
ভাগ্যে থাকলে ঘুরে ফিরে চলে আসবে আবার। যা
মা নিজের রুমে যা এখন।
(চলবে)
.

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)