ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (পর্ব ১০)
নিজের রুমে গিয়ে ইরফানকে খুঁজতে থাকলো নিয়ন্তা।
ইরফানকে না দেখতে পেয়ে বুঝতে পারলো এখন বাইরে যে আছে সেই ইরফান।
.
ভেতরে এসে নিয়ন্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইরফান বললো-
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সরি নিয়ন্তা।
.
শান্ত গলায় নিয়ন্তা বললো-
হু।
-ভেজা কাপড়টা বদলে আসো। ঠান্ডা লেগে যাবে।
.
ইরফানের কথায় ড্রয়ার থেকে একটা নাইটি বের করে নিয়ন্তা এগিয়ে গেলো ওয়াশরুমের দিকে।
.
এদিকে নিয়ন্তাকে শান্ত, চুপচাপ দেখতে পেয়ে চিন্তা হতে থাকলো তাকে নিয়ে ইরফানের।
ইরার ভুত কি আবার দেখা দিয়েছে তাকে?
নানারকম প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ইরফানের মনে।
.
.
কিছুক্ষণ পরে ভেজা কাপড় বদলে বের হয়ে আসলো নিয়ন্তা।
শান্তভাবে বিছানার উপরে বসে পড়লো সে।
ইরফান খেয়াল করলো নিয়ন্তার চুল বেয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
তার মানে সে ভালোভাবে মাথাটাই মুছেনি।
এমনটা সাধারণত নিয়ন্তা করেনা।
.
ইরফান তার দিকে এগিয়ে এসে হাত থেকে তোয়ালে টা নিতেই তার দিকে তাকালো নিয়ন্তা।
নিয়ন্তার চোখের দিকে তাকিয়ে ইরফান বললো-
এতক্ষণে আমার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করলো?
.
হালকা হেসে নিয়ন্তা বললো-
ভিজতে আসোনি তুমি। রেগে আছি। বুঝোনা?
.
নিয়ন্তার চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে ইরফান বললো-
বুঝেছি বলেই সরি বলেছি।
-কখন?
-এটাও খেয়াল করোনি! মন কোথায়?
.
আবারো চুপ হয়ে গেলো নিয়ন্তা।
তোয়ালে টা একপাশে রেখে নিয়ন্তার খুব পাশে বসলো ইরফান।
তার চুলের ভেতরে মুখ ডুবাতে ডুবাতে বললো-
মন খারাপ?
-উহু।
-খারাপ। কিসে ভালো হবে? আদরে?
.
কথাটি বলেই নিয়ন্তাকে ধীরে ধীরে বিছানার উপরে শুইয়ে দিলো ইরফান।
নিয়ন্তার চোখে মুখে নিজের ঠোঁট জোড়া ছুইয়ে দিয়ে গলায় নেমে এলো সে।
এদিকে বর্ণের ঘোরে আছে নিয়ন্তা। কি চায় বর্ণ? সে কি তাকে কখনো সুখী হতে দিবেনা?
যখন বেঁচে ছিলো তখনো তার পেছনে নিজ থেকে লেগেছে সে। এখন মৃত্যুর পরে আবারো তার সুখের জীবনে ফিরে এসেছে।
কেনো? কেনো বার বার বর্ণের জন্য সে তার জীবনটা উপভোগ করতে পারছেনা? তার কি অপরাধ ছিলো? একজনকে মনের গভীর থেকে ভালোবেসেছিলো তাই!
.
এসব ভেবে নিয়ন্তার মনটা অস্থির হয়ে উঠে।
আচমকা ইরফানকে হাত দিয়ে ঝাটকা মেরে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে বললো-
সরো ইরফান।
.
নিয়ন্তার এমন কান্ডে চমকে গেলো ইরফান। এমন একটা মুহুর্তে নিয়ন্তা এমন করবে ভাবতে পারেনি সে।
অবাক চোখে তাকিয়ে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে সে বললো-
কি হয়েছে নিয়ন্তা?
.
শোয়া থেকে উঠে বসে নিয়ন্তা বললো-
যখন তখন এসব ভালো লাগেনা। শুধু তোমার ইচ্ছে করলেই হবে? আমার করতে হবেনা?
-এসব কি বলছো তুমি!
-বুঝছোনা? উফফ,, না বুঝলে বুঝাতে পারবোনা।
অসহ্য...
-আমার স্পর্শ, আমাকে তোমার অসহ্য লাগছে?
-হুম লাগছে।
.
বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়লো ইরফান।
নিয়ন্তার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো-
ঘুমাও তুমি। তোমাকে ছুঁতে না পারলেও আমার ভালোবাসা এতোটুকু কমবে না নিয়ন্তা।
.
রুম থেকে বেরিয়ে গেলো ইরফান।
নিয়ন্তা তার চুল গুলো বালিশের উপর ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো।
.
আবারো বর্ণের ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়লো নিয়ন্তা।
.
বর্ণের সাথে দেখা হওয়ার কিছুদিন পরেই নিয়ন্তার ফোনে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
অপরিচিত দেখে সে প্রথমে রিসিভ না করলেও বেশ কয়েকবার কল আসার পর নিয়ন্তা রিসিভ করলো।
-হ্যালো?
-সালাম দিতে হয় এটাও জানোনা?
-আমিতো আপনাকে চিনিনা।
-না চিনলে কি সালাম দেওয়া যায় না?
-এতো কথা না বলে আপনার পরিচয় দিন।
-আমি বর্ণ।
-কোন বর্ণ? স্বরবর্ণ নাকি ব্যঙ্গনবর্ণ?
-কোনটা হলে ভালো হবে?
-স্বরবর্ণ।
-কেনো?
-ব্যঙ্গনবর্ণের তুলনায় স্বরবর্ণ সহজ।
.
নিয়ন্তার কথা শুনে উচ্চশব্দে হেসে উঠলো বর্ণ।
.
গম্ভীরমুখে নিয়ন্তা বললো-
ছোট বেলার কথা বললাম। তখন সহজ লাগতো আর কি।
-হু।
-তা বর্ণমালা? ভালো করে আপনার পরিচয়টা দিবেন নাকি ফোন রাখবো?
-এতো তাড়া কিসের নিমপাতা?
-নিমপাতা?
-সরি, নিয়ন্তা।
-আমার নামও জানেন দেখছি।
-হু, সবই জানি। বফ এর নামও জানি।
-কি?
-ইরফান।
.
খানিকটা অবাক হলো নিয়ন্তা।
শান্ত গলায় জিজ্ঞাসা করলো -
ইরফানের কোনো বন্ধু নাকি?
-নাহ।
-তাহলে?
-তোমার হবু বর।
-মানে কি?
-মানে সেদিন হযরত শাহজালাল (রঃ) এর মাজারের সামনে তোমার বাবা আমাকে বলেছে তোমাকে বিয়ে করার জন্য।
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিয়ন্তা বললো-
আপনি তাহলে সেই! আপনি আমার ফোন নাম্বারও যোগাড় করে ফেললেন!
-হু। চিনেছো তাহলে। যাক, হবু বউ এর সাথে কথা বলবোনা?
-আমি ইরফানকে বলে আপনার একটা শায়েস্তা করবো।
-দেখা যাক।
.
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ফোনের লাইন কেটে দিলো নিয়ন্তা।
এই ছেলে একদিন দেখেই তাকে এমন পাগল কি করে হলো আর কিভাবে নাম্বার পেলো ভেবে পাচ্ছেনা সে।
আর কি যেনো বললো? হবু বর?
.
নানারকম প্রশ্নে অস্থির হয়ে তার মন।
কিন্তু এসব প্রশ্নের উত্তর তার জানা দরকার৷ তাই দেরী না করে এগিয়ে গেলো সে বাবার রুমের দিকে।
.
.
.
-ঘুমিয়েছো?
.
ইরফানের ডাকে ঘোর কাটে নিয়ন্তার।
শান্ত গলায় তার দিকে না তাকিয়ে বললো-
কেনো?
-এমনিতেই। লাইট না নিভিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তোমার। তাই নিভাতে আসলাম।
.
রুমের লাইট নিভিয়ে আবারো রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো ইরফান।
.
ইরফান বেরুতেই চোখ জোড়া বন্ধ করে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো নিয়ন্তা।
.
.
.
ঘড়িতে সময় সকাল ৮টা.....
.
ঘুম থেকে উঠে ইরফানকে খুঁজতে লাগলো নিয়ন্তা।
কাল রাতে খুব বাজে ব্যবহার করে ফেলেছে সে ইরফানের সাথে যা মোটেও উচিত হয়নি।
ইরফানের কোনো দোষ নেই, অন্যের রাগ ওর উপর ঝারাটা ঠিক হয়নি।
.
আপনমনে এসব ভেবে ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো নিয়ন্তা।
সারাবাড়ি কোথাও ইরফানকে খুঁজে না পেয়ে ছাদের দিকে আগালো সে।
ছাদে গিয়ে দেখলো ইরফান দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছে।
অথচ নিয়ন্তাকে সে বলেছিলো আর কোনোদিন সিগারেটে হাত লাগাবেনা সে।
তবে কি কালকের আচরণে অনেক বেশিই কষ্ট পেয়েছে ইরফান? অবশ্য তা স্বাভাবিক।
.
লম্বা লম্বা কয়েকটা দম ফেললো নিয়ন্তা।
মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে ধীর গলায় বললো-
আমি চাই তোমার প্রবল নেশা হোক শুধুই আমাতেই,
সিগারেটের ধোঁয়াতে না।
নিয়ন্তার কথা শুনে হাতে থাকা সিগারেট দূরে ছুড়ে ফেললো ইরফান।
তাকে জড়িয়ে ধরে বললো-
আমিতো এটাই চাই, কিন্তু তুমিই কাল....
-ভুল হয়ে গিয়েছে। তোমার সাহেবাকে ক্ষমা করা যায়না?
.
হালকা হেসে ইরফান বললো-
রাগ করে থাকতে পারি কই আর!
.
.
.
অনেকক্ষণ যাবৎ আলিনাকে কোথাও দেখছেনা প্রিয়া ।
প্রিয়াদের বাসায় একটা পরিত্যক্ত রুম আছে। রুমটা একেবারেই খালি।
আলিনাকে খুঁজতে খুঁজতে সে এগিয়ে গেলো সেই রুমে।
.
রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পেলো আলিনা বসে খেলা করছে তার সমবয়সী একটি মেয়ের সাথে।
মেয়েটিকে দেখেই চমকে গেলো প্রিয়া। এই মেয়েকে আগেও সে দেখেছে, ইরফানের বাসায়।
কিন্তু নিয়ন্তার কাছে কথাটি চেপে গিয়েছিলো সে।
এই মেয়ে আর কেউ নয়। ইরা।
ইরা বললে ভুল হবে। ইরার আত্না।
কিন্তু সে এখানে কি করছে!
.
(চলবে)
Comments
Post a Comment