ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (পর্ব ২১) [শেষ পর্ব]
সন্ধ্যে ঘনিয়ে রাত এসে গেলো।
আরেকটা রাত অতিবাহিত হলেই কালকে নতুন একটি দিনের দেখা পাবে নিয়ন্তা। কিন্তু তার মনের কোণে জমে থাকা হাজারো প্রশ্নের উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত শান্ত হতে পারছেনা সে।
.
জানালার ধারে দাঁড়িয়ে আকাশের চাঁদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে নিয়ন্তা।
পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরলো ইরফান।
তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে জিজ্ঞাসা করলো-
কি ভাবছো?
-কেমন যেনো লাগছে ইরফান। মনে হচ্ছে আজই সব কিছুর শেষ হতে চলেছে।
-সব কিছু বলতে?
-আরেকটা সুন্দর নতুন দিনের দেখা পাবোনা মনে হচ্ছে, এভাবে চাঁদের সৌন্দর্য্য আর দেখতে পাবোনা মনে হচ্ছে।
.
নিয়ন্তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে আলতো করে তার কপালে চুমু এঁকে দিয়ে ইরফান বললো-
তোমার মনে কি চলছে আমি জানিনা নিয়ন্তা। কিন্তু যা চলছে তা মাথা থেকে ঝেরে ফেলে দাও। দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে।
.
আচমকা ইরফানকে জড়িয়ে ধরলো নিয়ন্তা।
একনাগাড়ে বললো সে-
আমি ভাবতে চাইনা কিছু। কিন্তু চলে আসে ভাবনায়। আমার সাথেই কেনো এসব হলো বলতে পারো ইরফান? সব কিছু পেয়েও নিজেকে অসহায় মনে হচ্ছে। কিসের শূন্যতায় ভুগছি আমি!
.
.
.
পাপ করে কেউ কখনো পার পায়নি। তারাও পাবেনা।
.
প্রিয়ার কথা শুনে বর্ণ বললো-
হু।
-নিয়ন্তাকে আমি এমনটা ভাবিনি বর্ণ। সবটা না জেনে এটা করতে পারলো সে!
-হুম।
.
বর্ণের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে প্রিয়া বললো-
তুমি কি নিয়ন্তাকে শাস্তি দিবেনা?
.
মৃদু হাসলো বর্ণ। প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো সে-
ও যে বড্ড কষ্ট পাবে সত্যিটা জানলে। এর চেয়ে বেশি কষ্ট তাকে আমার দেওয়ার কি সাধ্য আছে!
.
বর্ণের কথা শুনে গম্ভীর গলায় প্রিয়া বললো-
আছে। তা হলো মৃত্যু।
.
প্রিয়ার কথা শুনে সংকুচিত হয়ে এলো বর্ণের চোখ মুখ।
অন্যদিকে তাকিয়ে সে বললো-
আমি শুধু চাই সত্যিটা নিয়ন্তার সামনে আসুক।
.
সামনে তাকিয়ে বর্ণ দেখতে পেলো আলিনার সাথে খেলায় মজে আছে ইরা।
তা দেখে হেসে বর্ণ বললো-
আমার ইরাবতী দেখি আলিনার সাথে ভালোই ভাব জমিয়েছে।
-ইরাবতী?
-ইরার জন্ম হওয়ার পর নিয়ন্তাই তার নাম ইরা রেখেছিলো ইরফানের সাথে মিলিয়ে। আমি আদর করে ইরার সাথে বাকিটা লাগালাম।
-খুব সুন্দর।
.
.
.
-এই অবেলায় শুয়ে আছো কেনো?
.
নিয়ন্তার কথা শুনে বর্ণ বললো-
শরীরটা ভালো লাগছিলো না।
.
তার কথা শুনে বিছানার উপরে বসতে বসতে নিয়ন্তা বললো-
কি হলো?
-অভাবে ভুগছি।
-কিসের অভাব!
-বউ এর সোহাগের। সময় দিয়েছিলাম বউকে সবটা ঠিক হওয়ার কিন্তু সেতো ঠিক করার চেষ্টায় করছেনা৷ আসলেই নিমপাতা একটা। পুরাই তেতো।
.
বর্ণের কথা শুনে ভ্রু জোড়া কুচকে নিয়ন্তা বললো-
স্বাদ তেতো হলেও কিন্তু উপকারী।
.
নিয়ন্তার কথা শুনে এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসলো বর্ণ।
দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বললো-
একটু রোমান্স করে দেখিয়ে দাও কতোটা উপকারী?
.
মুখ বাকিয়ে নিয়ন্তা বললো-
উহু! যখন তখন দুষ্টুমি ভালো লাগেনা।
-আমার অভাব পূরণ করছো নাতো? ক্ষতি করছো আমার।
-কি ক্ষতি করলাম!
-বারে বুঝছো না? বউ থাকতেও রোমান্সের অভাবে ভুগতে হচ্ছে আমাকে।
-এটাই ক্ষতি হচ্ছে তোমার?
-হু হচ্ছে।
.
এক গাল হেসে নিয়ন্তা বললো-
আমি তুলসীপাতা নই, আবার তেজপাতা ও নই। আমি নিমপাতা। যা তেতো হলেও কারো ক্ষতি করিনা।
-তুমি করছো ক্ষতি, কারণ তুমি ডিজিটাল নিমপাতা।
-ওহ তাই!
-জ্বী তাই।
-তা আপনার যেনো কি লাগবে বর্ণমালা?
.
নিয়ন্তার কথা শুনে মুচকি হেসে বর্ণ বললো-
আদর।
.
বর্ণের পাশে গিয়ে তার বুকে কিল ঘুষি দিয়ে নিয়ন্তা বললো-
আর লাগবে আদর তোমার? বলো আর লাগবে?
.
.
নিয়ন্তাকে টেনে নিজের কাছে এনে বর্ণ বললো -
একটু অন্তত ঠোঁট টা ছুইয়ে দাও? খুব বেশি ক্ষতি হবে কি দিলে?
.
বর্ণের কথা শুনে নিয়ন্তা নিজের মুখটা তার মুখের দিকে এগিয়ে নিতেই দোলনায় থাকা ইরা কেঁদে উঠলো।
বর্ণ বিছানা ছেড়ে উঠে দোলনা থেকে উঠে ইরাকে কোলে নিয়ে নিয়ন্তার উদ্দেশ্যে বললো-
দুঃখিত, দুষ্টুমি করতে করতে একটু বাড়াবাড়ি করে ফেললাম হয়তো।
.
.
-ঘুমোবেনা নিয়ন্তা?
.
ইরফানের কথায় ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো নিয়ন্তা।
ইরফানের কথায় বললো-
তুমি ঘুমোবেনা?
-অফিসের ছুটি শেষ হয়ে আসছে। হাতে কিছু কাজ আছে তা সেরে নিতে হবে।
-হুম।
-কাল বাড়ি যাবো নিয়ন্তা। ভাবছি কালই মা বাবাকে জানাবো আমরা বিয়ে করেছি।
-মেনে নিবেন তারা?
-না নিলেও সমস্যা নেই তো। এখানেই থাকবো আমরা।
-হু।
-তুমি তোমার বাসায় কবে বলবে? তাছাড়া বর্ণের বাসায় ও জানাতে হবে সব।
-কি?
-বর্ণ আত্মহত্যা করেছে।
-কিন্তু এটা যে সত্যি নয়।
-তবুও এমনি বলতে হবে নিয়ন্তা। আর কোনো উপায় নেই। এভাবে আর কতোদিন চলবে বলো? বর্ণ ইরাকে মেরেছে জানলে এই বিষয়ে আর কেউ ঘাটাঘাটি করবে বলে মনে হয়না।
তাই আস্তেধীরে সবাই কে বলো।
-হু।
-যাও ঘুমিয়ে পড়ো। কাজ সেরেই আসছি আমি।
.
নিয়ন্তা দাঁড়াতেই ইরফান তার উদ্দেশ্যে বললো-
কপালে একটা চুমু দিয়ে যাবে সাহেবা?
.
মুচকি হেসে নিয়ন্তা বললো-
এক শর্তে।
-কি?
-আমাকেও দিতে হবে সাহেব!
-ঠিক আছে।
.
.
.
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ইরফান। কিন্তু হঠাৎ দমকা হাওয়ায় তার শরীর শীতল হয়ে যায়।
হাত টেনে চাদর খুঁজতে লাগলো সে। চাদর না পাওয়ায় চোখ জোড়া খুলতেই মাথার উপরে আকাশের চাঁদ দেখে চমকে গেলো ইরফান।
অফিসের কাজ করতে করতে কখন সোফার উপরে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো খেয়াল ছিলোনা তার। কিন্তু ছাদের উপরে সে কিভাবে আসলো বুঝতেই পারছেনা।
.
চোখ জোড়া কচলাতে কচলাতে উঠে দাঁড়ালো ইরফান।
সামনেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো ইরাকে।
ইরাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার পুরো শরীরে কাপুনি দিয়ে উঠলো। কোনোমতে নিজেকে সামলিয়ে বললো সে-
তোমাকে তোমার আম্মু বলেছে না আমায় ভয় না দেখাতে?
-আর কখনো তোমাই দেখা দিবোনা। এই শেষ।
.
কথাটি বলেই খিলখিল করে হাসতে থাকলো ইরা।
.
.
ফোনের রিং বেজে উঠলো নিয়ন্তার। ঘুমন্ত অবস্থায় হাত হাতড়িয়ে মোবাইলটা নিয়ে না দেখেই ভাঙ্গা গলায় রিসিভ করে বললো সে-
হ্যালো?
-আমি প্রিয়া বলছি।
.
প্রিয়ার কণ্ঠ শুনে উঠে বসে পড়লো নিয়ন্তা। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-
এতো রাতে তুমি?
-আজ সব প্রশ্নের উত্তর তুমি পাবে নিয়ন্তা। শুধু একটু কষ্ট করতে হবে তোমাকে।
-কি?
-সেদিন বর্ণের কথা শুনে ইরফানের বাসায় গিয়ে যেমন একটা সত্যি জানতে পেরেছিলে ঠিক তেমনি আজ ছাদে গেলেই আরেকটা বড় সত্যি জানতে পারবে তুমি।
-আমার যে তোমাকে নিয়েও একটা সত্যি জানার বড্ড ইচ্ছে।
-কি?
-ইরফানের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
-কোনো সম্পর্ক নেই।
-তবে যে...
-তুমি আমাদের একসাথে দেখেছো।
-হু।
-ওটা ইরফান ছিলোনা।
-কে ছিলো? আর কেনো আমার সাথে তুমি এসব করলে?
-তোমাকে কষ্ট দিতে।
-মানে?
-দেরী হয়ে যাচ্ছে নিয়ন্তা। ছাদে না গেলে সত্যের মুখোমুখি তুমি হতে পারবেনা।
.
.
.
-ইরফান?
.
পেছনে তাকিয়ে বর্ণকে দেখতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে গেলো ইরফান।
তাকে অভয় দিয়ে বর্ণ বললো-
ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমাকে কিছু করবো না, যদি সত্যি কথাটা স্বীকার করো তুমি।
-কি?
-ইরাকে কেনো তুমি মেরেছো?
.
ইরফানকে চুপ থাকতে দেখে বর্ণ বললো-
আজ তোমাকে সত্যি কথা বলতেই হবে ইরফান।
-তুমি কিভাবে জানলে ইরাকে আমি মেরেছি?
-কেননা আমি এটা জানি ইরাকে আমি মারিনি। তুমি কি সত্যিটা স্বীকার করবে ইরফান?
.
হাটু গেড়ে মেঝেতে বসে পড়লো ইরফান।
কান্না জড়িত কণ্ঠে বললো-
যেদিন তুমি আর নিয়ন্তা কথা কাটাকাটি করছিলে সেদিন আমি নিয়ন্তাকে অন্য একটি নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছিলাম ওর একটু খবর নিবো বলে। সেদিন নিয়ন্তা আমার ফোন রিসিভ করে ফেলেছিলো। কিন্তু ভুলবশত সে হয়তো খেয়ালই করেনি তা।
.
বর্ণের মনে পড়ে সেদিন নিয়ন্তার ফোন এসেছিলো। নিয়ন্তা ফোন কেটে বর্ণের সাথে কথা বলাতে ব্যস্ত ছিল। তার মানে সেদিন নিয়ন্তা ভুলবশত ফোন কাটতে গিয়ে রিসিভ করে ফেলেছিলো!
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে ইরফান বললো-
সেদিনই জানতে পারলাম ইরা আমার অংশ। আরো জানতে পারলাম নিয়ন্তা ইরাকে নিয়ে ভয় পায়। যার কারণে তোমার সাথে সম্পর্কে আগাতে পারেনি সে। এতে তুমিও তার প্রতি নিরাশ ছিলে। আর এই সুযোগ টাই কাজে লাগালাম আমি।
আমি নিজের হাতে তোমাদের বাসায় গিয়ে ইরাকে বালিস চাপা দিয়ে খুন করি। তার পাশেই তোমার ঘড়ি সংগ্রহ করে রেখে আসি। যাতে নিয়ন্তা ভাবে রাগে, ক্ষোভে এই কাজটি তুমিই করেছো।
-হাত কাঁপলো না তোমার? নিজের মেয়েকে মারতে?
-কাঁপেনি। নিয়ন্তাকে নিজের করে পাওয়া আমার লক্ষ্য ছিলো। যদিও তাকে বলেছিলাম আমি আর তাকে বিরক্ত করবোনা। দূর থেকেই ভালোবেসে যাবো। কিন্তু আমার একটাই কামনা ছিলো। নিয়ন্তাকে নিজের করে পাওয়া। আর তিন বছর পরেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছি আমি।
কিন্তু আমি এখন অনুতপ্ত, খুবই অনুতপ্ত আমি। প্লিজ ছেড়ে দাও আমায়। তোমার নিয়ন্তাকে খুব সুখে রাখবো আমি।
.
মৃদু হাসলো বর্ণ। ইরফানের উদ্দেশ্যে বললো সে-
নিয়ন্তা যদি তোমাকে মেনে নেয় আমার তাতে কোনো অসুবিধে নেই। আমি বা ইরা তোমার সামনে আর কোনোদিন আসবো না।
.
.
.
ধীরপায়ে হেটে নিজের রুমে আসলো ইরফান।
রুমের মাঝেই নিয়ন্তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে গেলো সে।
তাকে দেখে নিয়ন্তা হাসিমুখে বললো-
কোথায় ছিলেন সাহেব?
.
নিয়ন্তাকে স্বাভাবিক দেখতে পেয়ে তার কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো ইরফান।
শান্তির একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললো-
ভালোবাসি তোমাকে সাহেবা।
.
কথাটি বলার সাথে সাথেই নিয়ন্তা তার হাতে লুকানো ছুরিটি নিয়ে ইরফানের পেটে ঢুকিয়ে দিলো।
ইরফান মুখে শব্দ করে উঠতেই তাকে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিলো নিয়ন্তা।
তার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে নিয়ন্তা বললো-
সবটাই শুনেছি আমি ইরফান সবটাই শুনেছি। তুমিই আমার ইরার খুনি!
আমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য আমাদের অংশ কে মেরে ফেললে তুমি!
.
মাটির উপর পড়ে রয়েছে ইরফান।
গলাটা ধরে আসছে তার।
ভাঙ্গা গলায় বললো সে-
আরেকটা অংশ আমাদের মাঝে আসতে পারতো নিয়ন্তা। এটা ভেবেই আমি এমনটা করে ফেলেছি। এসব কিন্তু তোমাকে ভালোবেসেই করা।
-ভালোবাসা আদৌ বুঝো তো তুমি?
.
কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলছে ইরফান। তার হাত দুটি নিয়ন্তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
একটা কপালে চুমু দিবে সাহেবা?
.
নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘৃণার দৃষ্টিতে ইরফানের দিকে তাকিয়ে রয়েছে নিয়ন্তা।
এদিকে ধীরেধীরে ইরফানের শ্বাস বন্ধ হতে থাকে।
সেদিকে লক্ষ্য না দিয়ে বিড়বিড় করে নিয়ন্তা বললো-
এতো বড় ভুল আমি কিভাবে করেছিলাম!
.
ধীরপায়ে ইরফানের দিকে এগিয়ে গেলো নিয়ন্তা।
মেঝেতে বসে ইরফানের কলার ধরে বললো-
এই ইরফান? উঠো? তোমাকে তিলেতিলে শেষ করবো আমি। এতো সহজ মৃত্যুর যোগ্য তুমি নও। উঠো!
.
ইরফানের নিথর দেহটার দিকে তাকিয়ে রইলো নিয়ন্তা।
এমন সময় ঠান্ডা শীতল বাতাস তার শরীরে বয়ে গেলো।
সামনে তাকিয়ে দেখলো বর্ণ আর ইরা দাঁড়িয়ে রয়েছে।
বর্ণকে উদ্দেশ্যে করে নিয়ন্তা তার দিকে ছলছল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো-
যে বর্ণ আমার ঘুম নষ্ট হবে রাতের বেলায় ইরাকে কোলে নিয়ে পুরা বাড়ি ঘুরে বেড়াতো, যে বর্ণ ইরার একটু অসুখ হলেই পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিতো, যে বর্ণ ইরাকে তার ইরাবতী বানিয়ে এতো ভালোবাসা দিয়েছে সেই বর্ণকেই ইরার খুনী বানিয়ে দিলাম আমি!
বর্ণ? আমার মেয়ে ইরাকে আমি খুব ভালোবাসি। আর তাই ওর খুনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই তোমাকে মেরেছিলাম। নিজের হাতে ছুরি ঢুকিয়ে ছিলাম তোমার পেটে। শুধু তাতেই ক্ষান্ত হয়নি। তোমার একটা হাত কেটে নিয়েছিলাম। কতোটা কষ্ট দিয়ে মেরেছি তোমাকে আমি! আমি তোমার অপরাধী, শাস্তি দাও আমাকে শাস্তি দাও।
.
মৃদু হেসে বর্ণ বললো-
একবার ভালোবেসে বর্ণমালা ডাকবে নিমপাতা?
.
কান্নাজড়িত কণ্ঠে নিয়ন্তা বললো-
ফিরে এসো বর্ণমালা, ফিরে এসো।
.
নিয়ন্তা দেখলো ইরাকে কোলে তুলে নিয়ে বর্ণ দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে কি তারা চলে যাচ্ছে!
চিৎকার করে বলে উঠলো নিয়ন্তা-
যেওনা তোমরা৷ প্লিজ আমাকে একা রেখে এভাবে যেওনা।
.
.
.
৬মাস পর...
মানসিক হাসপাতালে বসে রয়েছে নিয়ন্তা।
হাতে একটা পুতুল নিয়ে একনাড়াগে বলে যাচ্ছে সে -
ঘুম পাড়ানি বর্ণমালা
মোদের বাড়ি এসো,
খাট নাই পালং নাই
পিড়ি পেতে বস।
বাটা ভরা পান দেব
গাল ভরে খেও,
ইরাবতীর চোখে ঘুম নাই,
ঘুম দিয়ে যেও।
আমার থেকে একটুখানি
আদর নিয়েও যেও!
.
আজ নিয়ন্তাকে দেখতে এসেছে প্রিয়া।
নিয়ন্তার এমন অবস্থা দেখে দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে তার।
এ কেমন কষ্ট! এই যে মৃত্যুর চেয়ে ভয়ানক শাস্তি পেয়েছে নিয়ন্তা।
সকলের কাছে সবটা ধোঁয়াশা থাকলেও প্রিয়ার কাছে সব খোলাসা। বর্ণের কথা রাখতেই সে নিয়ন্তার ব্যাপারে পুরো সত্যিটা কাউকে জানায়নি। আর জানানোর ইচ্ছেও তার নেই। নিয়ন্তা যে তার যথাযোগ্য শাস্তি পেয়েছে!
.
.
.
বাড়ির খুব পাশেই চলে এসেছে প্রিয়া।
পথিমধ্যে ইরফানের বাড়ির দিকে চোখ যেতেই প্রিয়ার বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে উঠলো।
.
ইরফানের মৃত্যুর আজ ৬মাস হতে চললো। বাড়িটি এতোদিন শূন্য খালি পড়ে ছিলো।
প্রিয়া শুনেছে, ইরফানের বাবা এই বাড়িটিতে নতুন ভাড়াটিয়া এনেছে।
প্রিয়া তাদের সাথে পরিচিত হওয়ার জন্য পা বাড়ালো সেই বাড়িটির দিকে।
কলিং বেল চাপ দিতেই একটি সুন্দরী মেয়ে দরজা খুলে দিয়ে প্রিয়ার উদ্দেশ্যে বললো-
আপনাকে তো চিনলাম না?
-পাশেই আমার বাসা। প্রতিবেশী বলতে পারেন। পরিচিত হতে এলাম।
-ভেতরে আসুন না!
.
ভেতরে এসে সোফার উপরে বসতে বসতে প্রিয়া জিজ্ঞাসা করলো-
আর কে কে থাকে এখানে?
-আমি আর আমার হাসবেন্ড শুধুই।
.
কথাটি শুনতেই প্রিয়া দেখতে পেলো মেয়েটির পেছনে অন্য একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
তা দেখে প্রিয়া বললো-
আর কেউ থাকেনা?
-জ্বী না।
.
প্রিয়ার আর বুঝতে বাকি রইলো না, পেছনে যে দাঁড়িয়ে রয়েছে সে আত্মা। কিন্তু এই বাড়িতে কি করছে এই আত্মা টি?
তাহলে এই দম্পতির মাঝেও কি লুকিয়ে রয়েছে কোনো রহস্য!
.
(সমাপ্ত)
বি:দ্র: এই ধরনের রহস্যময় ভৌতিক গল্প আমার প্রথম লেখা। তাই ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
তবে এই ধোঁয়াশা গল্পের ধোঁয়া এখনো শেষ হয়নি।
নতুন একটি দম্পতি ও প্রিয়ার সাথে সিজন ২ নিয়ে হাজির হবো আবার।
নতুন একটি দম্পতি ও প্রিয়ার সাথে সিজন ২ নিয়ে হাজির হবো আবার।
Comments
Post a Comment