কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ৬)


এতবছরের সংসার ছেড়ে বানর ছেলেটার জন্য
সালেহা চৌধুরী চলে যেতে চাইবেন এমনটা
ভাবেননি আমজাদ চৌধুরী।
কোথাকার কোন মেয়েকে তার ছেলে বিয়ে
করে নিয়ে এসেছে। বন্ধু এরশাদকে কি জবাব
দিবেন তিনি!
এই মেয়েটাকে তিনি ছেলের বউ হিসেবে
যেমন মেনে নিতে পারবেন না তেমনি তার স্ত্রী
সালেহা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাক এটাও তিনি মানতে
পারবেন না।

সালেহা কে আটকানোর জন্য হলেও আদিকে এই
বাড়ি থেকে যেতে দিতে পারেন না তিনি।
আর কিছু না ভেবে আমজাদ চৌধুরী উচ্চশব্দে
বলে উঠেন-
দাঁড়াও সবাই।
.
আমজাদ চৌধুরীর ডাকে সকলে নিজের জায়গায়
দাঁড়িয়ে থাকে।
.
লম্বা একটা দম ফেলে আমজাদ চৌধুরী বলেন-
ভেতরে যাও সবাই। সালেহার পাগলামির জন্য কিছু বললাম
না আমি। কিন্তু এই মেয়েকে আমি মানিনা।
.
কথাটি বলেই আমজাদ চৌধুরী নিজের রুমের দিকে
হনহন করে এগুতে থাকে।
এদিকে মেহেরীকা মনে মনে হেসে বলে,
না মানলে নাই নকল শ্বশুর। কিছুদিন পর এমনিতেই চলে
যাবো টাকা নিয়ে। আপনাদের কাউকে জ্বালানোর
ইচ্ছা আমার নেই।
.
এসো মা ভেতরে এসো?
.
সালেহা চৌধুরীর সাথে ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করে
মেহেরীকা, আদি ও মিলি।
সোফায় বসে সকলে।
সালেহা চৌধুরী পাশে বসে মেহেরীকার। তিনি
মেহেরীকার ডান হাতটা ধরে বলে-
আমার ছেলে যে ভেতরে ভেতরে ভালো
একটা কাজ করে ফেলেছে বুঝতেই পারিনি।
.
শ্বাশুড়ীর কথা শুনে ভ্রু-জোড়া কুচকে মিলি বলে
উঠে-
প্রেম পিরিত করা বুঝি ভালো কাজ মা? তাই যদি হয়
আমাদের সময় কেনো এটা বলেননি? আরিফকে
বলেছিলেন সে যা করেছে তা ভুল।
.
খানিকটা বিরক্তি মুখে সালেহা চৌধুরী বলেন-
আমার আরিফ হচ্ছে লাখে বাছা ছেলে। ও চাইলেই
যেকোনো মেয়েকে বিয়ে করতে
পারতো। তাই তাকে এমন কথা বলেছিলাম।
কিন্তু এই আদি.....
এক নাম্বারের বলদ। তবে সে এতো সুন্দরী বউ
পাবে ভাবতে পারিনি আমি।
.
মায়ের খুশি দেখে আদিরও খুশি লাগছে। মা যে
মেহের কে এতো সহজে মেনে নিবে
কল্পনাও করেনি সে।
তার মানে সে মেহের কে সত্যি সত্যি বিয়ে
করে নিয়ে আসতে পারতো...
নাহ, কি ভাবছে সে!
মেহের শুধুমাত্র বিপদে পড়ে এসব করতে বাধ্য
হয়েছে। ওর দূর্বলতার সুযোগ নেওয়া ঠিক হবেনা।
.
মেহেরীকাকে কিছুক্ষণ মন ভরে দেখে
সালেহা চৌধুরী বলেন-
তোমার বাড়ি কোথায় মা?
.
বাড়ির কথা শুনতেই মেহেরীকার বুক ধুকধুক করে
উঠে। বাড়ির কথা বললে ওখানে যদি খবর পাঠানো হয়
তাহলে কি হবে! সে কি মিথ্যে কোনো ঠিকানা
বলবে?
.
মেহেরীকার কাছে জবাব না পেয়ে সালেহা
চৌধুরী আবার প্রশ্ন করেন-
তোমার বাড়ি কোথায়?
.
মেহেরীকা কিছু বলার আগেই আদি বলে উঠে-
ওর বাড়ি ঈদগাহ মা।
.
এইরে বলে দিয়েছে কেনো এই আদি নামক পাজি
ছেলেটা! এখন বাড়িতে খবর দিতে বললে!
মনে মনে এসব ভেবে অস্থির হয়ে যায়
মেহেরীকা।
.
মেহেরীকার অবস্থা দেখে আদি বুঝতে পারে
সে চিন্তায় পড়ে গিয়েছে।
তার চিন্তা কমাতে মায়ের দিকে তাকিয়ে আদি বলে-
মা, মেহের বাসা ছেড়ে পালিয়েছে।
.
গম্ভীর মুখে সালেহা চৌধুরী বলেন-
নিশ্চয় তুই কুবুদ্ধি দিয়েছিস?
-আসলে মা ওর সাথে অন্য একজনের বিয়ে হয়ে
যাচ্ছিলো। মেহেরের বফ মানে আমি বেকার
জেনে ওর বাসা থেকে ওকে জোর করে
বিয়ে দিচ্ছিলো। কিন্তু ওতো আমায় ভালোবাসে।
তাই পালিয়ে চলে এসেছে।
-হুম।
-তাই বলছিলাম ওর বাসায় খবর দেওয়ার কথা তুলোনা
এখন।
-চিন্তা করবেনা বাসার লোক?
-নাহ, ও চিঠি লিখে এসেছে আমার কাছে চলে
আসবে।
-আচ্ছা তোরা যা ভালো বুঝিস।
.
আদিদের কথা শুনে হঠাৎ মিলি, সালেহা চৌধুরীর
উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
সানিয়া এসে এখন এসব দেখলে কি হবে?
.
এতোকিছুর মাঝে সানিয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলেন
সালেহা চৌধুরী।
আসলেই-তো....!
মেয়েটা এসে মেহেরীকাকে দেখলে কষ্ট
পাবে।
কিন্তু মেহেরীকা এখন আদির বউ। এই চরম সত্যটাও
তাকে মানতে হবে।
.
মিলির কথা শুনে আদি বলে-
সানিয়া এখন আসবে নাকি?
-সেতো সকালেই এসেছে তোমার সাথে লং
ড্রাইভে যাবে বলে। তুমি ছিলেনা তাই দিবাকে নিয়ে
বের হলো কাছে কোথাও ঘুরতে। এখন এসে
যদি...
.
মিলিকে থামিয়ে সালেহা চৌধুরী বলেন-
উফ্ফ...
তুমি এতো বেশি কথা কেনো বলো! কোথায়,
কখন কি বলতে হয় জানোনা? তোমার পাশে একটা
মেয়ে বসে আছে, দেখেছো সে কতো
চুপচাপ?
.
হোহো করে হেসে মিলি বলে-
আরে মা কি যে বলেন না আপনি! মেহেরীকা এই
বাড়ির নতুন বউ। আমি কি নতুন নাকি? আমি কথা বলতে
পারবো।
তারপর শুনো আদি কি বলছিলাম...
.
সালেহা চৌধুরী গম্ভীর মুখে বলেন-
থাক থাক তোমার আর কিছু বলতে হবেনা।
আদি বাবা একটা কাজ কর।
-কি মা?
-মেহেরীকাকে নিয়ে তোর রুমে যা।
-ঠিক আছে।
.
মিলির দিকে তাকিয়ে সালেহা চৌধুরী বলেন-
আর এই যে বড় বউ আমার?
-হুম?
-ওদের জন্য কিছু খাবার রেডি করো।
-আচ্ছা।
.
.
.
.
কাসেম আহম্মেদ জানেন না তার মেয়েটি কোথায়!
একটা ভুলের জন্য মেয়েটিকে হারিয়েছেন তিনি।
বিপদের সময় তার পাশে না থেকে উল্টে বিপদের
মুখে ঠেলে দিয়েছেন তিনি মেয়েটিকে।
আচ্ছা বেঁচে আছেতো সে? নাকি লজ্জা, অপমান,
বিশ্বাসঘাতকতায় শেষ করে দিয়েছে নিজেকে!
ড্রয়িংরুমের মেঝেতে বসে মেয়েকে নিয়ে
ভেবে চলেছেন তিনি।
-বাবা?
.
মুনিয়ার ডাকে ঘোর কাটে কাসেম আহম্মেদ এর।
কখন যে তার চোখে পানি চলে এসেছে
বুঝতেই পারেন নি। চোখ দুটো মুছতে মুছতে
বলেন-
হ্যাঁ মা বল?
-নিচে বসে আছো কেনো?
সোফায় এসে বসো।
-এখানে ঠিক আছি আমি।
-আপুর কোনো খবর পেলে?
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে কাসেম আহম্মেদ
বলেন-
নারে মা। আমার মেয়েটা কোথায় চলে গেলো!
.
পান মুখে গুঁজে কাসেম আহম্মেদ এর স্ত্রী
রেশমা আহম্মেদ এসে সোফায় বসতে বসতে
বলে উঠেন-
মরছে হয়তো তোমাদের মেহেরীকা।
.
ছলছল চোখে তার দিকে তাকিয়ে মুনিয়া বলে-
মা! এসব কি বলছো?
-খারাপ কি বলছি হ্যাঁ? যে কাণ্ডখানা ঘটায়ছে তোমার
সোহাগী বড় বোন মরা ছাড়া উপায় আছে?
-আমার আপু কোনো কাণ্ড ঘটায়নি। যা হয়েছে
তাতে তার হাত নেই। তার জন্য তোমরা তাকে
ইচ্ছের বিরুদ্ধে ওমন একটা মানুষের সাথে বিয়ে
দিতে চাইবে!
-কে নিতো ওই মাইয়ারে ঘরের বউ করে! কেউ
না। আমি যা করছিলাম ওর ভালোর জন্যই করছিলাম। পাত্তা
দিলোনা ছেমড়িটা। পালায়ছে সে বিয়ের রাতেই
আমাদের মুখে চুনকালি দিয়ে। ওই রাজীবের কাছে
গেছেতো মনে হয়না। রাজীবতো ওরে বিয়ে
করবেনা বলেই দিছিলো। তাই বললাম মরছে
হয়তো।
.
এপর্যায়ে মুখ খুলেন কাসেম আহম্মেদ...
রাগে গিজগিজ করে বললেন-
যত নষ্টের মূল সব তুমি। তোমার কথা শুনে আমি
মেয়েটাকে ওর মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিতে
চেয়েছি।
-আমি নষ্টের মূল? আমি? তোমার মেয়ে নষ্ট।
নষ্ট মেয়ের আবার মত কিসের? পাত্র পাইছিলাম এটাই
বেশি।
.
নাহ এসব আর সহ্য হচ্ছেনা কাসেম আহম্মেদ এর।
রাগে, দুঃখে হনহন করে হেটে বের হয়ে যায়
বাড়ি ছেড়ে।
.
বাবাকে রেগে বের হয়ে যেতে দেখে মুনিয়া
বলে-
আপু চলে যাওয়ার পর সেদিন তুমি ওই লোকটার
সাথে আমার বিয়ে করিয়ে দিতে চেয়েছিলে।
ভাগ্যিস বাবা তোমার এই কথায় রাজী হয়নি। অন্য
মেয়েকেও হারাতে চায়নি বাবা। কিন্তু তুমি.......
আচ্ছা তোমাকেতো আমরা মা ডাকি। আপু বাবাকে
রাজি করিয়ে তোমার সাথে বিয়ে দিয়েছিলো। মায়া
হয়না আমাদের জন্য?
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে রেশমা আহম্মেদ বলেন-
মায়া হয় বলেই ওই কলঙ্কিনীর একটা গতি করতে
চেয়েছিলাম। সেতো পালায়ছে। তাই নাক কাটা না যায়
মতো তোকে ওউ ব্যাটার সাথে বিয়ে দিতে চাইছি।
ভালোর জন্য সব করতে গিয়ে আমার দোষ হয়ে
গেলো। বালের জীবন আমার।
.
আর কথা না বাড়িয়ে মুনিয়া এগুতে থাকে নিজের
রুমের দিকে।
.
.
.
ঘুরাঘুরি শেষে দিবা আর সানিয়া একটা রেস্টুরেন্ট এ
এসে বসে।
দিবা কিছুটা গলার স্বর নরম করে সানিয়ার উদ্দেশ্যে
বলে-
আপি একটা কথা ছিলো।
-হ্যাঁ বল।
-মাইন্ড করবা মনেহয় তুমি।
-ধ্যাত বলতো।
-ইয়ে মানে....
-আরে বল!
-আমার বফ নাকি এখানে পাশেই আছে।
ওকে আসতে বলি?
-তোর বফ! ওয়াও! কখনো বলিস নিতো?
-সরি আপু। আসলে কিভাবে নিবে বিষয়টা তাই আর কি।
-আসতে বল, আসতে বল। আমিও দেখিও আমার
ননদের পছন্দ কেমন!
-হেহে, ঠিক আছে আমি ফোন দিচ্ছি।
.
.
.
আদির সাথে রুমে আসে মেহেরীকা।
বড়সড় একটা রুম। মেহেরীকার বাসার ৩টা রুমের সমান
আদির রুমটা। বেশ বড়লোকের বাড়ির নকল বউ হয়ে
এসেছে ভাবতেই মুখ টিপে টিপে হেসে
চলেছে সে।
তার দিকে তাকিয়ে আদি জিজ্ঞাসা করে-
এই যে?
-হুম?
-এতো হাসি কিসের শুনি?
-তুমিতো সেই বড়লোকের পোলা!
-হুম। তাও আমার বাবা বড়লোকের মেয়ের সাথে
দিতে চায়।
-সমস্যা কি! ঠিকই আছে। যার সাথে যাকে মানায়।
-হেহে। আচ্ছা শুনো। তুমি রেস্ট করো একটু।
-আমার না এই ভারী লেহেঙ্গাটা অসহ্য লাগছে।
.
সালেহা চৌধুরী রুমের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে
বলেন-
এই যে নিয়ে এসেছি তোমার জন্য শাড়ি।
লেহেঙ্গা খুলে ফেলো।
-আপনি কেনো কষ্ট করছেন মা?
-আমি না করে কে করবে শুনি? কেউ করবেনা
বুঝলে।
-হুম।
-ক্ষিদে পেয়েছে?
-না পায়নি। বসুন না আপনি?
-কতো লক্ষী মেয়ে তুমি! আদবকায়দা সব জানো
দেখছি। কয় ভাইবোন তোমরা?
-২বোন ১ভাই।
-তুমি কি বড়?
-জ্বী, কেমনে বুঝলেন?
-দেখেই বুঝা যাচ্ছে।
-হেহে।
-শুনো মা, শুরুর দিকে তোমাকে অনেক লড়াই
করতে হবে। ধীরে ধীরে মেনে নিবে
তোমায় সবাই। তখন তোমার শ্বশুড় কে নিয়ে
তোমার বাসার লোকের সাথে কথা বলবো।
-জ্বী।
-আচ্ছা কথা পরে বলবো।
রেস্ট করো তুমি।
-ঠিক আছে।
.
সালেহা চৌধুরী রুম থেকে বের হলে আদি
হেসে বলে-
ভালো শ্বাশুড়ী পেয়েছো তুমি মেহের।
.
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরীকা বলে-
হুম কিন্তু নকল।
-হাহা।
-উনার সাথে নাটক করতে খারাপ লাগছে আমার।
-এই এই উল্টে যাবেনা তুমি বললাম! সানিয়ার থেকে
আমি মুক্তি পেলেই আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবা।
-হুম।
.
.
.
একটা ট্রে নিয়ে আপেল, কেক, বিস্কুট নিয়েছে
মিলি।
চুলোয় চায়ের পানি বসিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে
ডায়াল করে আরিফের নাম্বারে।
-হ্যালো মিলি বলো?
-ব্যস্ত আছো?
-নাহ বলো।
-তোমার ভাই ফিরে এসেছে।
-কি বলো!
-হুম।
-সুবুদ্ধি হয়েছে তাহলে। সানিয়াকে বিয়ে করলে
ভালোই হবে ওর।
-কি করে বিয়ে করবে? সেতো বউ নিয়ে
এসেছে।
-বউ নিয়ে এসেছে মানে?
-মানে গফ কে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে।
মেহেরীকা নাম তার।
-কি বলো!! বাবা কিছু বলেনি?
-বাবা চলে যেতে বলেছিলো কিন্তু মা আটকায়।
-কিভাবে?
-সে অনেক কথা। তুমি আজ তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে
এসো। সানিয়াও সকালে বাসায় এসেছিলো তুমি অফিস
যাওয়ার পর।
-সে দেখেনি?
-সেতো দিবার সাথে বাইরে আছে এখন। এসে
দেখবে আর কি। কি যে ধামাকা হবে! হেহে।
-মিলি হেসোনা প্লিজ। যাই হয়ে যাক তুমি মুখটা বন্ধ
রেখো।
-কেনো? আমি খারাপ কি বলি? তোমরা সবাই আমার
সাথে এইরকম করো কেনো?
-কি করলাম বাবা!
-বাবা! আমি তোমার বাবা?
-এইরে না। তুমি আমার বউ।
-ধ্যাত, দিলেতো মেজাজটা গরম করে?
-বউ বলেছিনা! সোনা বউ আমার।
-হয়েছে হয়েছে।
রাখছি এখন।
.
ফোন রেখে চা বানাতে মন দেয় মিলি।
.
.
.
রেস্টুরেন্ট এ ঢুকে চারপাশে তাকিয়ে দিবাকে
দেখতে পায় তার বফ। তাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে
বলে-
হাই দিবা?
.
চেয়ার ছেড়ে উঠে দিবা এগিয়ে গিয়ে তাকে
জড়িয়ে ধরে বলে-
ভালো আছো পিকু?
-হুম আছি তুমি?
-আছি।
.
পাশ থেকে সানিয়া বলে উঠে-
এহেম এহেম.... আমি সব দেখছি।
.
পিকুর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দিবা বলে-
ইয়ে মানে....
-থাক কিছু বলতে হবেনা। আয় বস।
.
পিকুর দিকে তাকিয়ে সানিয়া বলে-
এই যে তুমিও বসো।
.
দিবা আর পিকু বসে পড়ে সানিয়ার পাশে।
মুচকি হেসে সানিয়া বলে-
পিকু! নামটাতো খুব সুন্দর!
.
দিবার বফ মুচকি হেসে বলে-
আমার নাম পিকু নয়। এটা আপনার বোন আমাকে আদর
করে ডাকে।
-ওহ তাই! সো সুইট। তা কি নাম তোমার?
-আমার না রা....
.
নাম বলার আগেই কল আসে সানিয়ার ফোনে।
টেবিলের উপর থেকে হাতে ফোনটা নিয়ে সে
কার কল দেখে বলে সে-
আমার আব্বু ফোন দিয়েছে, কথা বলে নেয়।
.
.
.
লেহেঙ্গা বদলে শাড়ি পড়ে ওয়াশরুম থেকে
বের হয়েছে মেহেরীকা।
কালো রঙের সবুজ পাড়ের একটা শাড়ি পরেছে
সে।
বিছানার উপরে বসে ছিলো আদি।
আড়চোখে মেহেরীকাকে দেখে বলে-
মায়ের শাড়িটা ভালো মানিয়েছে তোমাকে।
মৃদু হেসে মেহেরীকা বলে-
ধন্যবাদ।
.
-আসবো?
.
মিলির ডাকে দরজার দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা
বলে-
ভাবী আসো ভেতরে।
.
মিলি ভেতরে এসে হাতের ট্রে টেবিলের উপর
রেখে বলে-
এখন হালকা নাস্তা করে নাও। আমি তোমাদের জন্য
ভাতের আয়োজন করি। নতুন বউ বলে কথা, ভালো
ভালো রাঁধতে হবে।
-আরে না ভাবী। তুমি কষ্ট করোনা।
-নাহ কষ্ট কিসের! আচ্ছা আমি আসি।
.
মিলি এক পা এগুলে মেহেরীকা বলে উঠে-
ভাবী?
.
পেছনে ফিরে মিলি বলে-
হুম বলো?
-আমি তোমাকে তুমি করে বলছি রাগ করছো
নাতো?
-আরেনা। আমার না বোন নেই। দিবার পরে আজ
থেকে তুমি আমার বোন।
.
মিলি চলে গেলে মেহেরীকা সোফার উপর
বসে।
তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে থাকে।
রাজীব.....
হুম রাজীব কে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলো সে।
তার পরিবারের সদস্য হবে ভেবেছিলো।
কিন্তু এতো পোড়া কপাল তার...
রাজীবের বউতো হলোনা, যার বউ হলো তাও
নকল বউ।
.
আদি চায়ের একটা কাপ নিয়ে মেহেরীকার পাশে
বসে বলে-
এই নাও চা খাও।
-ইচ্ছে করছেনা।
-চোখের পানি মুছে খেয়ে নাও কিছু।
নাহলে আমি মুছে দেবো। দেয়?
.
শান্ত গলায় মেহেরীকা বলে-
নাহ, আমি মুছবো।
-কাঁদছো কেনো? বাসার কথা মনে পড়ছে?
-সবার কথা মনে পড়ছে।
.
.
.
সানিয়া আর দিবা, পিকুকে বিদায় দিয়ে রেস্টুরেন্ট
থেকে বের হয়ে বাসার কাছাকাছি চলে এসেছে
প্রায়।
এতোক্ষণ ঘুরাঘুরি করলেও আদির জন্য অস্থির হয়ে
আছে সানিয়ার মনটা।
উফ্ফ কখন দেখা হবে আদির সাথে? কতো যে
কথা বলার আছে।
.
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)