কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (পর্ব ৯)

valobashar golpo,bangla valobashar golpo,valobasar golpo,valobashar golpo bangla,bangla sad valobashar golpo,valobashar kobita valobashar golpo,valobashar kotha,valobashar golpo audio,valobashar golpo voice,valobashar golpo natok,bhalobashar golpo,koster golpo,udash valobasha,sad valobashar golpo,valobashar golpo song,valobashar golpo 2018,valobashar golpo kotha,abegi valobashar golpo,valobashar golpo video

-এভাবে হুট করে কেনো চলে এলে আম্মা?
-কি করবো! কেমন পরিবারের মেয়ে তুই পছন্দ
করেছিস? অভাবের শেষ নেই। শুধু তা নয়। সৎ মা
আছে মেয়ের। কেমন খারাপ ব্যবহার ওই মহিলার।
-মেহের কে কেমন লেগেছে তোমার?
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে কুনসুম হক জবাব দেন-
বেশ সুন্দরী সে। কিন্তু সুন্দর দিয়েই কি সব হয়!
তুই আমাদের একমাত্র ছেলে। কতো আশা ভরসা
আছে তোকে নিয়ে। তুই ভেবে দেখ, এই
মেয়েকে বিয়ে করলে কতো ঝামেলা
পোহাতে হবে তোকে।
-কি ঝামেলা?
-কি ঝামেলা? যে অভাবী তারা...
বিয়ের পর পুরো ফ্যামিলির খরচ চালাতে হবে
তোকে।
কোনো জামাই আদর পাবিনা। কেমন শ্বাশুড়ী পাবি
দেখেছিসতো।
-কিন্তু মা মেহেরের দোষ কোথায় এতে?
-মেহেরীকার দোষ আছে আমি বলছিনা।
-তবে কি বলতে চাইছো তুমি?
-আমি ওই বাড়ির মেয়েকে বউ করে আনতে চাইনা।
-এটায় তোমার শেষ কথা?
-হুম।
.
শান্ত গলায় রাজীব বলে-
ঠিক আছে এনোনা। মাস্টার্স শেষে আমি দূরে
কোথাও চলে যাবো। কোনোদিন আমায় বিয়ে
করতে বলবেনা।
-রাজীব!
.
আর কোনো কথা না বলে রাজীব বাসার বাইরে
চলে যায়।
.
.
.
মেহেরীকা ভেবে চলেছে কিভাবে রাজীব
তার বাসার ঠিকানা পেয়েছে।
আনিকা দিয়েছে কি? হয়তো হ্যাঁ।
রাজীব যে এমন একটা কাণ্ড করবে কল্পনাও
করেনি সে। সরাসরি মা কে নিয়ে প্রস্তাব দিতে
চলে এসেছে রাজীব। সাহস আছে বলতে হয়
ছেলের। কিন্তু লাভ কি হলো? প্রাপ্তির খাতায় শূন্য
ছাড়া কিছু নেই। আচ্ছা আনিকা কি রাজীব কে বলেনি
তার পরিবার সম্পর্কে? বললে সবটা জেনে বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে আসতো তারা। এভাবে
হুট করে এসে হুট করে নিশ্চয় চলে যেতোনা।
.
.
-মেহেরীকা?
.
আনিকার ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয় সে।
.
-আরে তুই? ভেতরে আয়, বস আমার পাশে।
.
আনিকা তার পাশে এসে বিছানার উপরে বসতে বসতে
বলে-
রাজীব ভাইয়া এসেছিলো?
-তুই জানতি সে আসবে?
-আমাকে দুপুরের দিকে আমার বফ ফোন করে
তোর বাসার ঠিকানা নেয় রাজীব ভাইয়ার জন্য। তার মা
আসবে বলেছে সাথে, আমাকে নিষেধ
করেছিলো তোকে না বলার জন্য। যদি তুই
আসতে নিষেধ করিস তাদের। তাই আমি বলিনি।
-হুম।
-তা তোর বাসায় মেনেছে? তোর কি ভালো
লাগে রাজীব ভাইকে?
-আমার আর আমাদের মতের কথা বাদ দে। তারা
আমাদের পারিবারিক অবস্থার কথা শুনেই চলে
গিয়েছেন।
-বলিস কি!
-হুম।
.
মেহেরীকার মুখের দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে
আনিকা প্রশ্ন করে-
তোর ভালো লেগেছে তাইনা রাজীব ভাইয়াকে?
.
ছলছল দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে মেহেরীকা
জবাব দেয়-
হু। কিন্তু সে আমার ভাগ্যে নেই হয়তো।
.
.
.
সাত দিন পার হয়ে যায়।
কিন্তু মেহেরীকার মাথা থেকে রাজীব নামক ভুত
নামেনি এখনো।
নিজের রুমে বসে বৈশাখের দিনের কথা ভাবছিলো
সে।
-আসবো মা?
.
বাবার ডাকে মৃদু হেসে মেহেরীকা জবাব দেয়-
আসো বাবা।
.
মেয়ের পাশে বসে কাসেম আহম্মেদ একটা
মোবাইল এর বক্স তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলেন-
এটা তোর জন্য।
.
মেহেরীকা হাতে বক্সটি নিয়ে বলে-
মোবাইল!
-হুম।
.
খুশি হলেও টাকা খরচ করে এটার কি দরকার ছিলো
ভেবে মুখটা কালো হয়ে যায় মেহেরীকার।
.
-কিরে মা? টাকা নিয়ে ভাবছিস?
-কি দরকার ছিলো বাবা এটার?
-খুব দরকার ছিলো। কোনোদিন মুখ ফুটে কিছু চাসনি
তুই। এই বয়সে একটা মোবাইলও না থাকলে কি হয়!
-কিন্তু বাবা....
-সিমও আছে ভেতরে। আপদবিপদ, বান্ধবীদের
সাথে কথা বলার জন্য লাগে মা আমি জানি।
-হুম। ধন্যবাদ বাবা তোমাকে।
.
.
.
পরেরদিন কলেজ থেকে ফিরেই নতুন মোবাইল
নিয়ে গেইমস খেলতে ব্যস্ত হয়ে যায়
মেহেরীকা।
ভালোই হয়েছে বাবা তাকে মোবাইলটা দিয়েছে।
আজ তার সব বান্ধবীদের মোবাইল নাম্বার দিয়ে
এসেছে সে। এখন থেকে সেও তাদের মতো
ডং করে ছবি তুলতে পারবে মনে হতেই হাসিতে
মুখ ভরে যায় তার।
.
-এভাবে হেসে হেসে মোবাইল টেপার কি
আছে?
.
মায়ের কথায় গেইমস খেলা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে যায়
মেহেরীকা।
-কতো কাজ আছে ঘরে সেই খেয়াল আছে?
মুনিয়ার সামনে পরীক্ষা। তুই কি চাইছিস পড়া বাদ দিয়ে
সে কাজ করুক আর তুই শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপবি?
-আমি এখুনি সব করে দিচ্ছি মা। একটু আরাম করছিলাম।
-দেখছি কি আরাম করছোস। মোবইল টিপে টিপে
আরাম দেখাচ্ছে!
.
.
.
রাত ১টা.....
.
মেহেরীকা আর মুনিয়া বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
হঠাৎ কল আসে মেহেরীকার ফোনে।
রিং টুনের তীব্র শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় মুনিয়ার।
চোখ কচলাতে কচলাতে বোনের উদ্দেশ্যে
বলে-
আপু তোর ফোন বাজে। দেখনা কে।
-উফ্ফ মুনু বিরক্ত করিস না।
-ধর না আপু। নাহলে আমার বিরক্ত লাগছে।
.
ঘুম ঘুম চোখে না দেখেই মেহেরীকা ফোন
রিসিভ করে বলে-
হ্যালো বল?
-আমি কে জানতে না চেয়েই হ্যালো বল?
.
গলার শব্দটা শুনেই চমকে যায় মেহেরীকা।
কোথায় ঘুম, কোথায় কি! এক লাফে শোয়া
থেকে বসে বলে-
আপনি!
-কে আমি?
-আপনি আর কি।
-কে আরকি?
-আরে ওই যে....
-কোন যে?
-ধ্যাত। আপনি রাজীব।
.
মেহেরীকা তার কণ্ঠ শুনেই চিনেছে তাকে! নাকি
আনিকা বলেছে সে কল দিবে? নাহ বললে অবশ্যই
নিজ থেকে নাম্বার দিয়ে মেহেরীকাকে
সারপ্রাইজ দিতে বলতোনা।
.
-কি হলো? ঠিক ধরেছিনা আমি?
-একদম ঠিক ধরেছো।
-কেমন আছেন আপনি?
-ভালো, তুমি?
-এখন অনেক ভালো।
-আগে কম ভালো ছিলে?
-না তা না।
.
মেহেরীকার পাশ থেকে মুনিয়া বলে-
এতো রাতে কে আপু?
-তুই ঘুমাতো।
-হুম হুম ঘুমোচ্ছি।
.
বোনদের কথোপকথন শুনে রাজীব বলে-
কে কথা বলে?
-ছোট বোন মুনিয়া।
-তোমার সাথে ঘুমোয়?
-হুম। আমি আর ও দুজনেই ভয় পাই একা থাকতে।
-বিয়ের পর তুমিতো আমার সাথে থাকবা। তখন কি
করবে মুনিয়া?
.
কথাটি বলে জ্বীভে কামড় বসায় রাজীব। এইরে! কি
বলে ফেলেছে সে!
.
কথাটি ঘুরানোর জন্য মেহেরীকা বলে-
আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?
-আনিকা আমার বন্ধুর কাছ থেকে আমার ফোন নাম্বার
নিয়ে কল দেয় আমাকে। তারপর তোমার নাম্বার
দেয়।
-ওহ। কিন্তু ও আমাকে না জানিয়ে...
-ভুল বুঝোনা আনিকাকে। তোমাকে সারপ্রাইজ
দেওয়ার জন্য এটা করেছে সে।
যাতে তুমি খুশি হও।
-আপনার ফোনে আমি কেনো খুশি হবো?
-হওনি?
-না।
-সত্যি?
-হুম।
-তাহলে রাখছি। আর কখনো কল দিবোনা।
.
চুপ হয়ে থাকে মেহেরীকা। সে খুশি হয়েছে।
অনেক বেশি খুশি হয়েছে। কিন্তু রাজীবের
মায়ের কথা মাথায় আসতেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
তাহলে রাজীব কি তার পারিবারিক অবস্থার কথা জেনেও
তাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলো? এমন হলে এই
৭দিন যোগাযোগ করেনি কেনো? তার মা কি রাজি
নন!
.
-মেহের?
.
মেহের! আবার সেই ডাক। কেনো এভাবে
তাকে দূর্বল করে দিচ্ছে রাজীব!
ছোট একটা নিঃশ্বাস ফেলে মেহেরীকা বলে-
হুম বলুন।
-আমি লাইন কাটতে পারছিনা। অনেক কথা বলার আছে
তোমার সাথে।
-বলুন।
-আমিতোমাকে ভালোবাসি মেহের।
.
রাজীবের মুখে ভালোবাসি কথাটি শুনে কি করা উচিত
মেহেরীকার, বুঝে উঠতে পারছেনা সে।
সেও কি তাকে ভালোবাসে বলবে?
.
-এই মেহের চুপ করে আছো কেনো?
-আপনার আম্মু আমাকে মেনে নিয়েছে?
-সত্যি বলতে তোমাকে তার পছন্দ হয়েছে
কিন্তু....
-বুঝেছি।
-আমি আমার আম্মাকে রাজি করিয়ে নিবো মেহের।
-আপনি ভালো কোনো মেয়ে পাবেন। মায়ের
মনে কষ্ট না দিয়ে আমাকে ভুলে যান।
-ভুলতে পারবোনা তোমাকে।
-কেনো নয়! আপনি আমাকে চিনেন কতোদিন!
-ভালোবাসা কি বলে কয়ে, সময় হিসেব করে হয়!
আচ্ছা একটা কথা বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো
না?
-নাহ।
-মিথ্যে বলবেনা একদম। আমাকে আনিকা সবটা
জানিয়েছে। আর তাই আমি তোমার সাথে
যোগাযোগ করছি। নাহলে সেদিনের ঘটনার পরে
তোমার সাথে কথা বলতে আমার বিবেকে বাঁধা
দিচ্ছিলো। কিন্তু এখন জানি তুমিও আমায় ভালোবাসো।
তাহলে দুরুত্ব কেনো থাকবে বলো?
-আপনার মা...
-আমার আম্মাকে মানানোর দায়িত্ব আমার। তুমি শুধু
একবার হ্যাঁ বলো।
-আপনি সত্যি আমায় ভালোবাসেন?
-হুম বাসি।
-তাহলে শুনুন আমিও আপনাকে ভালোবাসি। কিন্তু
ভালোবাসলেই প্রেমের সম্পর্কে জড়াতে
হবে এমন কথা নেই। আপনার মা যদি রাজি হয় বিয়ের
প্রস্তাব নিয়ে আসবেন।
-যদি না হয়?
-সেটাই বলছিলাম যদি না হয়! তাহলে প্রেম করে লাভ
কি!
-ভালোবাসি বলে মনে শান্তি দিলেও আমার মাথায়
চিন্তার সাগর সৃষ্টি করে দিয়েছো এসব বলে। যাক
তুমি যা বলো তাই হবে। তবে আমার সময় দরকার।
কিন্তু ততদিনে যদি তোমার বিয়ে হয়ে যায়?
-হবেনা। বাবা বলেছিলেন আমাকে অনার্স পাশ বাসা
থেকেই করাবেন যদি আমি চাই। এর চেয়ে বেশি
সময় কি দরকার আপনার?
.
মৃদু হেসে রাজীব বলে-
নাহ চলবে।
.
.
আযানের ধ্বনিতে চারদিক মুখরিত হয়ে উঠে।
সেই রাতে সারা রাত কথা বলে ফোনে
মেহেরীকা আর রাজীব।
আযান শুনে রাজীব বলে-
মেহের নামাজ পড়ো তুমি?
-ফযরেরটা পড়া হয়না। উঠতে পারিনা।
-আমি ডেকে দিবো ফোনে?
-আপনি পড়েন?
-হুম।
-ঠিক আছে ডেকে দিয়েন।
-আচ্ছা। আজ তাহলে রাখি। নামাজ পড়ে দোয়া করো
আমাদের জন্য।
-হুম।
.
.
ফোন রেখে মেহেরীকা শুয়ে পড়ে বিছানায়।
আজ একটানা এতো কথা বলেছে সে রাজীবের
সাথে! কি কি বলেছে? মনেই করতে পারছেনা।
মন্দ হতোনা যদি এই রাজীব নামক ছেলেটি ওর বর
হতো।
এইরে রাজীব তাকে নামাজ পড়তে বলেছে আর
সে এখনো শুয়ে আছে! তড়িহড়ি করে শোয়া
থেকে উঠে পড়ে মেহেরীকা নামাজের
উদ্দেশ্যে।
.
.
.
৫ মাস পর....
৬বার রিং হওয়ার পর রাজীবের কল রিসিভ করে
মেহেরীকা।
-কি ব্যাপার মেহের? ফোন কেনো রিসিভ
করছোনা?
-নতুন করে কিছু বলার আছে কি? এই ৫মাসে আপনি
কিছু করতে পারেননি। কোনো সম্পর্ক ছাড়া
এভাবে কথা বলতে, দেখা করতে ভালো লাগছেনা
আমার।
-তুমি কোনো সম্পর্কে যেতে চাইছো না
মেহের।
-কোন সম্পর্ক? প্রেমের সম্পর্ক? আর চারটা
প্রেমের সম্পর্কের মতো স্বাভাবিক আমাদের টা
কি হবে? যেখানে শুরুতেই জেনেছি আপনার
পরিবার আমাকে মেনে নিবেনা।
-মেহের তুমি কিন্তু আমায় সময় দিয়েছিলে। এখন
কেনো এসব বলছো? তোমার কি অন্য কাউকে
ভালো লেগেছে? লাগলে কিছু বলার নেই আমার।
.
কথাটি শুনে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে মেহেরীকা
জবাব দেয়-
আপনার মনে হয় আর কাউকে ভালো লাগতে পারে
আমার?
-মেহের তুমি কাঁদছো?
-নাহ।
-এই পাগলি?
-
-আচ্ছা আমি খুব তাড়াতাড়ি চেষ্টা করবো আম্মাকে
রাজি করানোর জন্য। ততদিন না হয় আমরা বন্ধু হিসেবে
কথা বলি? কথা না বলতে পারলে কষ্ট হবে যে, আমি
জানি তোমারও হবে।
-হু।
.
.
মেহেরীকা আর রাজীবের নিয়মিত কথা হলেও
প্রেমের সম্পর্কে জড়ায়নি তারা। দেখা হলেও
নির্জন কোনো জায়গায় করেনি। মেহেরীকা
মেয়েটা খুব সরল। প্রথমে রাজীব তার সৌন্দর্য্য
কে ভালোবাসলেও ধীরে ধীরে তার সরল মন
টাকেও ভালোবাসতে শুরু করে। তাই তার আম্মা রাজি না
হওয়া পর্যন্ত, মেহেরীকার সম্মতি ছাড়া ইচ্ছে থাকা
স্বত্ত্বেও সে মেহেরীকার হাতটাও ছুঁয়ে
দেখতে চায়না। রাজীবের বিশ্বাস তার ভালোবাসার
জোরে তার আম্মা মেহেরীকাকে একদিন ঠিক
মেনে নিবেন।
.
.
.
৯মাস পর......
রাজীব ফোন দেয় মেহেরীকাকে। আজ তার
খুশির সীমা নেই। ইচ্ছে করছে খুশির কারণটা
মেহেরীকার কাছে গিয়ে নিজেই বলে
আসতে। কিন্তু এখন সে সুযোগ হয়নি। আপাতত
ফোনেই কাজ সারতে হবে।
মেহেরীকা ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে
রাজীব বলে উঠে-
হ্যালো হ্যালো হ্যালো মেহের!
-কি ব্যাপার আজ এতো খুশি খুশি লাগছে?
-কারণ মিস মেহের কে আমি আমার মিসেস
মেহের করতে পারবো।
-মানে?
-মানে বুঝোনি? আরে এতোদিনের অপেক্ষা
শেষ। আমার আম্মা তোমাকে বাড়ির বউ করার জন্য
রাজি হয়েছেন।
.
নিজের কানে শুনেও কথাটি বিশ্বাস করতে পারছেনা
মেহের। অবশেষে সে কি রাজীবের বউ
হবে!
.
-এই মেহের?
-হু?
-বিশ্বাস হয়না?
-সত্যি বলতে না।
-তোমার বাবাকে বলে রাখো, আজ বিকালেই আম্মা
আর আব্বা যাবেন তোমাদের বাসায় বিয়ের কথা বলার
জন্য।
-আর আপনি?
-আসবো আমি?
-আপনার ইচ্ছা।
-আচ্ছা থাক যাবোনা।
-এই না! আসবেন।
-আসবো। হবু বউকে দেখতে নিশ্চয় আসবো।
.
.
.
-মেহের? ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি?
.
রাজীবের স্মৃতিচারণ করতে করতে কখন যে
এতো গভীর ভাবনায় তলিয়ে গিয়েছে
মেহেরীকা নিজেই বুঝতে পারেনি।
আদির ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে
আসে মেহেরীকা। শোয়া থেকে উঠে বসে
বলে-
না ঘুমাইনি আমি। সানিয়া আপু ঠিক আছে?
-হুম সেন্স এসেছে। আমাকে ছাড়তে চাইছিলো
না একদম। কোনোমতে ওর হাত থেকে
নিজেকে ছাড়িয়ে চলে এসেছি।
-উনি আপনাকে সত্যি ভালোবাসে।
-কি করে বুঝলে?
-ভালো না বাসলে এইরকম পাগলামি করেনা কেউ।
-হয়তো জেদ এর বসে।
-আমার মনেহয় উনাকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত
আপনার।
.
কথাটি শুনেই আদির মেজাজ বিগড়ে যায়।
অগ্নিদৃষ্টিতে মেহেরীকার দিকে তাকিয়ে বলে-
তোমাকে টাকা দিয়ে এনেছি আমি, আমার কথা
শোনার জন্য। আমাকে কথা শোনানোর জন্য নয়।
তাই নিজের চরকায় নিজে তেল দিতে থাকো, আমার
চরকায় আমাকে দিতে দাও।
.
আদির এমন শক্ত কথা শুনেও রাগ হচ্ছেনা
মেহেরীকার। শান্ত গলায় বলে সে-
ঠিক আছে।
-শুনো এরশাদ আঙ্কেল আসবেন।
-উনি কে?
-সানিয়ার বাবা।
-ওহ।
-আমাদের সাথে উনি কথা বলতে পারেন।
-হুম।
-যা যা শিখিয়ে দিয়েছি মনে আছেতো?
-হুম।
-গুড। তবুও চেষ্টা করবে বেশি কথা না বলার জন্য। যা
বলার আমি বলবো।
-হুম।
-ঠিক আছে, আমি গেলাম।
-কোথায়?
-এই রুমে তোমার পাশে বসে থাকা ছাড়া আরো
অনেক কিছু করা যায়।
-হুম তা করা যায়।
.
আর কোনো কথা না বলে আদি বেরিয়ে যায় রুম
থেকে। মেহেরীকা বুঝতে পারে সানিয়ার কথা
বলাই আদির মেজাজ খারাপ হয়েছে।
.
মেহেরীকা বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। একটু
হাটাহাটি করা প্রয়োজন। এখন আর ঘুম হবেনা তার।
বসা থেকে উঠতেই বিছানার পাশে থাকা টেবিলটার
উপর চোখ পড়ে তার। টেবিলের উপরে রাখা
আছে আদির মোবাইল ফোন।
মেহেরীকা মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে
তাতে কোনো লক দেওয়া নেই। সে কি বাসার
কাউকে বা রাজীব কে একটা ফোন দিবে? দেওয়া
যেতেই পারে। হয়তো তাকে খুঁজে না পেয়ে
সবাই ভাবছে তার কথা। কিন্তু কাকে আগে ফোন
দিবে সে? বাবাকে নাকি রাজীবকে? আপনমনে
নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করে চলেছে
মেহেরীকা।
.
(চলবে)

Comments

Popular posts from this blog

মুখোশের আড়ালে - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-১৯)

ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২১)

কলঙ্কের ফুল - সাজি আফরোজ (সকল পর্ব ১-২৯)