ধোঁয়াশা - সাজি আফরোজ (পর্ব ২০)
টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাজিয়েছে নিয়ন্তা।
ইরফানের সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে আজ সে।
প্লেটে ভাত নিয়ে চেঁচিয়ে ইরফানের উদ্দেশ্যে নিয়ন্তা বললো-
কই? খেতে আসো। খাবার ঠান্ডা হয়ে গেলো বলে।
.
তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে টেবিলের দিকে এগিয়ে এসে ইরফান বললো-
এতো চেঁচামেচি কেনো সাহেবা?
-সেটা ভালোভাবে তাকালেই বুঝবেন।
.
টেবিলের উপর তাকিয়ে ইরফান দেখলো তার সব পছন্দের খাবার রান্না করেছে নিয়ন্তা।
তা দেখে একগাল হেসে ইরফান বললো-
আজ কোনো স্পেশাল ডে নাকি?
-হু।
-কি?
-তোমাকে পিটানোর ডে আজ।
-মানে?
-মানে কি! পছন্দের রান্না করলেই বুঝি স্পেশাল ডে হতে হয়?
.
চেয়ার টেনে নিয়ন্তার পাশে বসে ইরফান বললো-
খাইয়ে দাও দেখি।
-এতো বড় ছেলে হয়ে বাচ্চার মতো করছো কেনো?
-বউ এর হাতে খেতে চাইছি। আমি কতোবার খাইয়ে দিয়েছি তোমাকে। দিইনি?
-হু।
-তাহলে?
-দিচ্ছি সাহেব দিচ্ছি।
-শুটকি ভর্তা নিবা আগে শুধু।
-ঠিক আছে।
.
নিয়ন্তা ভাতের সাথে শুটকি নিয়ে লোকমা বানাতেই ইরফান মুখে শব্দ করে মুখটা খুলে বললো-
আ......
.
ইরফানের কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলো নিয়ন্তা।
তা দেখে ইরফান বললো-
এভাবে তোমাকে হাসতে দেখলে তো হাসি দেখেই পেট টা ভরে যাবে আমার। আর খেতে হবেনা ভাত!
.
নিয়ন্তা তার হাত ইরফানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো-
নাও খাও। আর হাসবো না।
.
.
.
দুপুরের খাবারের পর বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো ইরফান।
হঠাৎ ফোনের শব্দ বেজে উঠতেই হাতে নিয়ে দেখলো জয়ার ফোন।
ইচ্ছে না থাকা স্বত্তেও রিসিভ করে বললো-
হ্যালো বলো?
-একটু কেমন আছি এটাও কি জিজ্ঞাসা করা যায়না?
-হুম। কেমন আছো?
-ভালো। তোমার বউ আমার বাসায় এসেছিলো।
-কবে?
-এমা! তুমি জানোনা?
.
জয়ার কথায় নিশ্চুপ হয়ে গেলো ইরফান।
ইরফানের কাছে কোনো সাড়া না পেয়ে জয়া বললো-
প্রিয়ার সম্পর্কে জানতে এসেছিলো। আচ্ছা সে তো তোমার থেকেই জানতে পারতো। আমার কাছে কেনো এসেছে?
-আমি রাখছি এখন।
-শুনো?
-কি?
-তোমার বউ মনে হয় সন্দেহ করে তোমাকে।
-সেটা তোমার না ভাবলেও চলবে। রাখছি।
.
ফোন রেখে ভাবনায় পড়ে গেলো ইরফান। নিয়ন্তা তাকে না জানিয়ে জয়ার বাসা অবধি চলে গিয়েছে। কোন রহস্যের পেছনে ছুটছে সে!
.
.
হাত থেকে ফোন রাখার আগেই আবারো রিং বেজে উঠলো ইরফানের।
বাবার ফোন দেখে রিসিভ করে বললো-
হ্যালো বাবা, কেমন আছো?
-মনে পড়ে আমাদের কথা?
-এভাবে কেনো বলছো বাবা!
-কিভাবে বলবো তুই বল?
-মা কেমন আছেন?
-বেঁচে আছে।
-অভিমান করেছো আমার উপর?
-বুঝতে পারছিস না?
-পেরেছি।
-আমরা হুসাইনপুর আসবো ভাবছি।
.
বাবার কথা শুনে হকচকিয়ে গেলো ইরফান। গলার স্বর নরম করে বললো-
আমি আসবো কাল। তোমরা কষ্ট করোনা। মাকে দাও একটু।
-কথা বলবেনা সে। তুই আসলেই বলবে।
-আমি কালই আসবো।
-ঠিক আছে।
.
.
রান্নাঘরের সব কাজ সেরে নিজের রুমে আসলো নিয়ন্তা।
বিছানায় এসে ইরফানের পাশে শুয়ে পড়লো সে।
ইরফান তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ক্লান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে।
-ঠিক আছি আমি।
-কাজ বেশি হয়েছে আজ তাই।
আসো, বুকের উপর ঘুমাও আমার।
.
ইরফানের ডাকে বিড়ালছানার মতো নিয়ন্তা তার বুকের উপরে ঝাপিয়ে পড়লো।
ইরফান তাকে শক্ত করে চেপে ধরে বললো-
যাবে নাতো কখনো আমাকে ছেড়ে?
-যাবো বলে কি এসেছি?
-ভয় হয়।
-কিসের?
-তোমাকে হারানোর।
-পাগল।
-আচ্ছা বর্ণ আমাদের কোনো ক্ষতি করবেনা তো?
-তুমি তার কি করেছো? করোনি তো কিছু। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
-তুমি যে ভয় পেতে?
-এখন পাইনা। বর্ণ আমার কোনো ক্ষতি করবেনা ইরফান। নিশ্চিতে থাকো তুমি।
.
কথাটি বলেই ইরফানের বুকের উপর আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে দিয়ে পরম শান্তিতে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো সে।
.
.
.
-নিয়ন্তাকে এভাবে কষ্ট না দিয়ে তুমিই তাকে সত্যের কাছে নিতে পারোনা?
.
প্রিয়ার কথা শুনে বর্ণ বললো-
হুম তা পারি। একটা সঠিক সময়ের অপেক্ষায় আছি।
-আমার তো মনেহয় এখুনি সেই সময়টি এসেছে।
.
খানিকক্ষণ চুপ থেকে বর্ণ বললো-
ঠিক বলছো তুমি। আমিই নিয়ন্তাকে সত্যের কাছে নিয়ে যাবো। আর আজই হবে ধোঁয়াশা থেকে সব কিছুর খোলাসা।
.
.
.
ইরার মুখে বালিস চাপা দিয়ে তাকে খুন করেছে ইরফান।
এমন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো নিয়ন্তার।
ইরফানের বুক থেকে মাথা তুলে চেঁচিয়ে বলে উঠলো সে-
খুনি!
.
চোখ জোড়া খুলে ঘুমন্ত কণ্ঠে সে বলে উঠলো-
কি হয়েছে নিয়ন্তা?
-তুমি ইরাকে খুন করেছো। ইরার খুনি তুমি।
.
নিয়ন্তার কথা শুনে চমকে গেলো ইরফান। শোয়া থেকে বসে ঢোক গিলে বললো সে-
কি বলছো তুমি এসব?
-ঠিক বলছি। আমি নিজের চোখে দেখেছি। বর্ণকে ভুল বুঝার জন্যই তুমি এমনটা করেছো। তাইনা? বর্ণ আমাদের মেয়েকে মেরেছে বলে তাকে ছেড়ে তোমার কাছে চলে আসার জন্যই এমনটা করেছো তুমি।
-মানে? কি বলছো তুমি এসব! আর কখন দেখেছো আমিই মেরেছি ইরাকে!
.
ইরফানের কথা শুনে শান্ত গলায় নিয়ন্তা বললো-
স্বপ্নে।
.
নিয়ন্তার কথা শুনে স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললো ইরফান।
নিয়ন্তার হাত ধরে বললো সে-
দিনে দুপুরে স্বপ্ন দেখে আমাকে সন্দেহ করছো?
.
ইরফানের কথা শুনে ছলছল চোখে তার দিকে তাকাতেই ইরফান বললো-
ইরা যে আমার মেয়ে এটা তুমি আমাকে বলেছিলে কখনো?
-নাহ।
-সে মারা যাওয়ার পরেই তুমি আমাকে জানিয়েছিলে ইরা আমার মেয়ে ছিলো। তাইনা?
-হু।
-তাহলে আমি কিভাবে এসব প্লান করবো তুমিই বলো? আমিতো জানতামই না ইরা আমার মেয়ে। আর জানলেও নিজের মেয়েকে মারবো! এটা তুমি বলতে পারলে নিয়ন্তা?
.
আচমকা ইরফানকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকলো নিয়ন্তা।
ইরফান তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো-
কি হলো আবার!
-ভুল হয়ে গিয়েছে। মাফ করে দাও আমায়।
-আরে পাগলি ঠিক আছে।
.
(চলবে)
Comments
Post a Comment